পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৪৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

443 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খন্ড সাক্ষাৎকারঃ স, ম, বাবর আলী こ8-ど-〉bq○ ১৫ই মে খুলনা জেলার সাতক্ষীরা মহকুমার ভোমরা বর্ডারে কাস্টমস হাউসে আমরা বাঙালী ই-পিআর ও পুলিশদের নিয়ে একটি শিবির খুলি। মে মাসের প্রথম দিকে পাক-মিলিটারী অতর্কিতে বেলা ১০টার দিকে এই শিবির আক্রমণ করে। কিন্তু পাক-মিলিটারী ১ ঘন্টা যুদ্ধ চলার পর পিছু হটতে বাধ্য হয়। তার পরের দিন পাক-মিলিটারী পুনরায় উক্ত ঘাঁটি আক্রমণ করে। ঐ আক্রমণ অত্যন্ত প্রবল হওয়ায় আমরা উক্ত শিবির পরিত্যাগ করে ভারতে ইটিন্ডিয়া নামক স্থানে এসে উঠি এবং একটা শিবির স্থাপন করি। আমরা পুনরায় ভোমরা ক্যাম্পে আসি। ১৯৭১-এর ১৮ ই মে পাক-সেনারা বিপুল বিক্রমে আমাদের ভোমরা শিবির দখল করার জন্য আসে। গভীর রাত্রে তারা আমাদের শিবির আক্রমণ করে। বৈকাল ৫ টার সময় মিলিটারীরা হটে যাওয়ার পর এই যুদ্ধ শেষ হয়। এই যুদ্ধে পাক-মিলিটারীর বহু অফিসার ও সৈন্য নিহত হয়। আমরা পাকসেনার ২ জন ক্যাপ্টেন ও একজন সৈনিকের লাশ আনতে সক্ষম হই। আমাদের পক্ষেও ২ জন শহীদ হন। ১৯৭১-এর জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে ১১জনের একটা দল নিয়ে মাত্র ৪ টি রাইফেল, ১১টা গ্রেনেড ও কয়েকটি বেয়োনেট নিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকি। জুনের ১০ তারিখে টাকী ক্যাম্পে ফিরে যাই। ১৯৭১-এর ১২ই জুন গভীর রাতে ইছামতী নদী পার হয়ে দেবহাটা থানার টাউন শ্রীপুর গ্রামের মিলিটারী ঘাঁটি আক্রমণ করতে যাই, কিন্তু গিয়ে দেখি ঐ ঘাঁটিতে কোন মিলিটারী নেই। রাত্রে আমরা ঐ গ্রামেই অবস্থান করার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু শান্তি কমিটির লোকেরা খবর পেয়ে ভোর না হতেই আমাদেরকে ঘেরাও করে ফেলে। মৃত্যু ছাড়া কোন গতি না দেখে মিলিটারীর সাথে গুলি বিনিময় শুরু করি। প্রায় ৫ ঘন্টাকাল যুদ্ধ চলার পর ১৯ জন মিলিটারীর লাশ ফেলে রেখে মিলিটারীরা পিছু হটে যায়। আমাদের পক্ষে কাজল, নাজমুল ও নারায়ণসহ ৭ জন নিহত ও ১০/১৫ জন আহত হয়। ইছামতী নদী সাঁতরিয়ে আমরা টাকীতে ফিরে আসি। এ যুদ্ধ হয় ১৩ই জুন। এর কয়েকদিন পর প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশের ভিতরে ঢুকি এবং আশাশুনি থানার বড়দল নামক স্থানে শহীদ কাজলের নামানুসারে কাজলনগর শিবির খুলি। বড়দলের এই শিবির পাকসেনারা সন্ধান পেয়ে আক্রমণ করে। পাকসেনারা প্রচুর অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত থাকায় এবং আমাদের কাছে আক্রমণ প্রতিহত করার মত অস্ত্র না থাকায় পালিয়ে যাই। জুলাই মাসে গডুইখালীতে রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করি এবং প্রচুর ৩০৩ রাইফেল ও গুলি উদ্ধার করি। এই মাসের শেষের দিকে পাইকগাছা থানা আক্রমণ করি। পুলিশ বিনাশর্তে আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং আমরা তাদের যাবতীয় অস্ত্রশস্ত্র দখল করি। আশাশুনি থানার কেয়ারগাতি নামক স্থানে আমরা আর একটা নতুন শিবির স্থাপন করি। শিবির স্থাপনের কয়েকদিন পরেই গানবোটসহ পাকসেনারা শিবির দখল করার চেষ্টা করলে সেখানে বিপুল সংঘর্ষ হয়। অবশেষে আমরা পিছু হটতে বাধ্য হই। পাকসেনারা ও রাজাকাররা কেয়ারগাতি, জামালনগর, গোয়ালডাঙ্গা, ফকরাবাদ এই কয়টি গ্রাম সম্পূর্ণরূপে পুড়িয়ে দেয়। ইতিমধ্যে বিশ্বকবি শিবির, বঙ্গবন্ধু শিবির, শহীদ নারায়ণ শিবির, কবি নজরুল শিবির, শেরেবাংলা শিবির, সোহরাওয়াদী শিবির, শহীদ নাজমুল শিবির প্রভৃতি শিবির স্থাপন করি এবং