পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৪৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
464

 গেরিলা অপারেশনঃ ২রা মে তারিখে সিপাহী এ, কে, এম ফজলুল হক ৩৪ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে হালুয়াঘাটের ফুলপুর থানার রামভদ্রপুরে গেরিলা আক্রমণ চালিয়ে রাজাকার বাহিনীর দু'জ কে হত্যা করে এবং ৬ টি রাইফেল ছিনিয়ে নেয়। ২৫-৬-৭১ তারিখে নায়েক ফরহাদ ১৩জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে নরুন্দী রেলওয়ে স্টেশনে এক্সপ্লোসিভের সাহায্যে অপারেশন করে এবং ৮-৭-৭১ তারিখে রেললাইনের নীচে এণ্টি- ট্যাংক মাইন বসিয়ে পাক-বাহিনীর খাদ্যদ্রব্য- অস্ত্রশস্ত্র বোঝাই তিনটি বগি ইঞ্জিনসহ ধ্বংস করে দেয়। ২৫-৬- ৭১ তারিখে হাবিলদার হাফিজকে ৯ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ পাঠানো হয়। ৬/৭ জুলাই তারিখে তারা মুক্তাগাছা আক্রমণ করে এবং ১৫টা রাইফেল, একটি এস-এম-জি, ২৮ টি এল- এম-জি ম্যাজিন এবং থানার টেলিফোন সেট সমেত সমস্ত গোলাবারুদ উদ্ধার করে নিয়ে আসে। ৪ জন বাঙ্গালী পুলিশ কনস্টেবলকে হত্যা করা হয়। থানার ওসি পালিয়ে যায়।

 মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম। আরো নয়জন মক্তিযোদ্ধা নিয়ে করইতলি বি-ও-পি'তে (মহেশলাঠি গ্রাম) রাজাকারদের ক্যাম্পে হামলা চালায়। ক্যাম্পের সেণ্ট্রিকে তারা ধরে নিয়ে আসে। ৯ ই জুন তারিখে আমি আমার সাহসী ল্যান্স নায়েক মেজজবাহউদ্দীন, আমার কুক আব্দুস সোবহান মোল্লাসহ নালিতাবাড়ি থানার অধীনে বারমারী বি-ও-পি এবং খৃষ্টানদের মিশনের মধ্যবর্তী জায়গায় মাইন পুঁতে রাখি। ঐ পথ দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন মেজর সব সময় যাতায়াত করত। ৯ই জুন সকালে ঐ সকালে মজের, মিশনের সিস্টার, একজন সুবেদার, দুই সিপাহী ঐ পথে যাবার সময় মাইন বিস্ফোরণে নিহত হয়।

 ই-পি-আর'এর ল্যান্স নায়েক আব্দুল্ল মান্নান এবং মুক্তিবাহিনীর অধিনায়ক আফসারউদ্দীন আহম্মদ ভালুকা থানার ভাউলিয়া বাজার এলাকাতে পাক বাহিনীর সঙ্গে এক সংঘর্ষে লিপ্ত হন। সাত থেকে সাড়ে সাতশ মুক্তিযোদ্ধ এই আক্রমণে অংশগ্রহণ করে। পাক বাহিনীর প্রায় এক ব্যাটালিয়ন সৈন্য মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ করে। এই আক্রমণে ১৩জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। পাক বাহিনীর পক্ষে বেশ হতাহত হয়। পাক বাহিনী চারদিক থেকে ঘেরাও হয়ে যাওয়ায় ডাক থেকে হেলিকপ্টার গিয়ে তাদেরকে ৫ই জুলাই উদ্ধার করে। পাকিস্তানীদের পক্ষে প্রায় ৬০ জন নিহত হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধারা ৭১ টি রাইফেল, ১২টি চীনা রাইফেল, ৩টি এল-এম-জি, ২টি ২” মর্টার উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

 ১৩ই জুলাই ল্যান্স নায়েক মান্নান ১৩জন মুক্তিযোদ্ধা ও প্রায় ২০০ জন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে ফুলবাড়িয়া থানার লক্ষীপুর গ্রামে একটি পাক আর্মি পেট্রলকে। এ্যামবুশ করে এবং ৪৩ টি রাইফেল, ৩টি- এল-এম-জি, ১টি চীনা এল-এম-জি, ২টি চীনা রাইফেল, ২টি এস- এম-জি ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয়।

 ৯ই জুলাই মুক্তিযোদ্ধা আবু হানিফকে ফকির বেশে ফুলপুর থানায় পাঠানো হয়। সে ভিক্ষা চাওয়ার ভাণ করে থানা সেণ্ট্রির নিকট থেকে রাইফেল ছিনিয়ে নেয় এবং তাকে হত্যা করে থানা থেকে একটি রাইফেল এবং স্টেনগান নিয়ে আসতে সক্ষম হয়।

 হালুয়াঘাট এবং শম্ভুগঞ্জের মধ্যবর্তী নাগাল পুল অবস্থিত। মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হক চৌধুরীকে ৩৮ জন মুক্তিযোদ্ধসহ উক্ত পুল ধ্বংসের ভার দেওয়া হয়। সে ১৬ই জুলাই রাত একটার সময় ঐ পুলে পাহারারত রাজাকারদেরকে হত্যা করে তাদের নিকট থেকে ৫টি স্টেনগান উদ্ধার এবং পুলটি ধ্বংস করে দেয়।

 নালিতাবাড়ি থানায় বেগুনবাড়ি ব্রীজ ধ্বংস করার জন্য মুক্তিযোদ্ধা নাজমুল হকের নেতৃত্বে তার কোম্পানীকে পাঠানো হয়। সে উক্ত পুল ধবংস করে। পার্শ্ববর্তী গ্রামে সে আশ্রয় নেয়। পার্শ্ববর্তী গ্রামে সে আশ্রয় নেয়। ইতিমধ্যে পাকবাহিনী ওখানে এসে পড়ে এবং তাদেরকে আক্রমণ করে। এই আক্রমণে কোম্পানী কমাণ্ডার নাজমুল হক শাহাদাত্বরণ করেন। উল্লেখযোগ্য যে, নাজমুল হক ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। নালিতাবাড়ীতে তার নামে একটি কলেজের নামকরণ করা হয়েছে। ১৯শে জুলাই পাক সেনাবাহিনীর তিনটি