পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৫৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
531

এলাকায় মোতায়েন করা হয়। একটি ফিল্ড রেজিমেণ্ট আর্টিলারী, ২টি মর্টার ব্যাটালিয়ন, একটি রেকি ও সাপোর্ট ব্যাটালিয়ন এবং একটি আমার্ড রেজিমেণ্ট ছিলো।

 পূর্ব এলাকাঃ মেজর জেনারেল আবদুল মজিদ কাজীর নেতৃত্বে চতুর্দশ ডিভিশনকে পূর্বাঞ্চল রক্ষার দায়িত্ব দেয়া হয়। পরে মেজর জেনারেল জামসেদের নেতৃত্বে ৩৬ ডিভিশন ঢাকায় ও মেজর জেনারেল রহিমের নেতৃত্বে ৩৯ ডিভিশন চাঁদপুরে গড়ে তোলা হয়। অবশ্য এই দুটি ডিভিশন কোনক্রমেই পাকশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করেনি, কারণ বিভিন্ন ইউনিট পুনর্বিন্যাস করেই এই ডিভিশন দুটি গড়ে তোলা হয়। ১১৭ ব্রিগেড কুমিল্লায়, ২৭ ব্রিগেড ময়মনসিংহ ও ২১২ ব্রিগেড সিলেটে মোতায়েন করা হয়। সিলেটে একটি ফিল্ড রেজিমেণ্ট আর্টিলারী ও দুইটি মর্টার ব্যাটারী ও মাত্র চারটি ট্যাংক ছিলো।

 চট্টগ্রাম এলাকাঃ চট্টগ্রামে ৯৩ ইণ্ডিপেডেণ্ড ব্রিগেড অবস্থিত ছিলো যার অধিনায়ক ছিলেন ব্রিগেডিয়ার আতাউল্লা।

 অপর দিকে ভারতীয় ইষ্টার্ন কমাণ্ডার অধিনায়ক লেঃ জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার অধীনে ছিলো তিনটি নিয়মিত কোর, একটি কমিউনিকেশন জোন ও প্রায় এক লাখ মুক্তিযোদ্ধা সমন্বিত ১১টি সেক্টর।

 দ্বিতীয় কোরঃ কৃষ্ণনগরে ছিলো দ্বিতীয় কোরের সদর দপ্তর। লেঃ জেনারেল টি, এন, রায়না ছিলেন কোর কমাণ্ডার। এতে ছিলো নবম ও চতুর্থ পাবর্ত্য ডিভিশন। এছাড়া ছিলো টি-৫৫ (রাশিয়ান) ট্যাংক সমন্বয়ে গঠিত একটি মাঝারি আমার্ড রেজিমেণ্ট, একটি পিটি-৭৬ (রাশিয়ান) ট্যাংকসজ্জিত একটি হালকা ট্যাংক রেজিমেণ্ট, ১৩০ মিলিমিটার (রাশিয়ান) একটি মাঝারি গোলন্দাজ ইউনিট ও ব্রিজিং ইউনিট।

 তেত্রিশ কোরঃ তেত্রিশ কোরের সদর দপ্তর ছিলো শিলিগুড়িতে। লেঃ জেনারেল এম, এল, থাপান ছিলেন এই কোরের কমাণ্ডার। ৬ পার্বত্য ডিভিশন ও ২টি ব্রিগেড নিয়ে এই কোর গঠিত হয়। এছাড়া পিটি-৭৬ (রাশিয়ান) ট্যাংক সমন্বয়ে একটি হালকা আমার্ড রেজিমেণ্ট, একটি মাঝারি গোলন্দাজ রেজিমেণ্ট (বৃটিশ৫.৫") ও একটি ইঞ্জিনিয়ার ব্রিজিং ইউনিট ছিলো।

 চতুর্থ কোরঃ চতুর্থ কোরের সদর দপ্তর ছিলো আগরতলায়। লেঃ জেনারেল সাগত সিং এই কোরের কমাণ্ডার ছিলেন। অষ্টম, সাতান্ন ও তেইশ পার্বত্য ডিভিশন নিয়ে এই কোর গঠিত হয়। এছাড়া দুই স্কোয়াড্রন পিটি-৭৬ট্যাংক ও একটি মাঝারি গোলন্দাজ রেজিমেণ্ট (বৃটিশ ৫.৫") ছিলো।

 ১০১ কমিউনিকেশন জোনঃ ১০১ কমিউনিকেশন জোনের সদর দপ্তর ছিলো গৌহাটিতে। মেজর জেনারেল জি, এস, গিল ছিলেন এর কমাণ্ডার। যুদ্ধে জেনারেল গিল আহত হলে মেজর জেনারেল নাগরা কমাণ্ডার নিযুক্ত হন। একটি পদাতিক ব্রিগেডের সমান ছিলো এর আকার ও শক্তি। এছাড়া সমস্ত সীমান্ত এলাকা জুড়ে ছিলো মুক্তিবাহিনীর ১১টি সেক্টর।

 দ্বিতীয় কোর ফ্রণ্টে জেনারেল রায়নার কমাণ্ডে দুই ডিভিশন সৈন্য মধুমতি নদীর দিকে ধাবিত হয়। পদ্মা থেকে শাখা নদী মধুমতি দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে সুন্দরবন এলাকায় পতিত হয়েছে। এই ফ্রণ্টের দায়িত্ব ছিলো পদার পশ্চিম তীরবর্তী সমস্ত এলাকা মুক্ত করা। দ্বিতীয় কোর কমাণ্ডার পাকিস্তানী শক্ত প্রতিরক্ষার উপরে আক্রমণ অব্যাহত রেখে দ্রুতগতিতে একাধিক দলে মধুমতির দিকে অগ্রসর হওয়ায় পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।

 একটি দল কুষ্টিয়ার দিকে, অন্য একটি মাগুরা হয়ে যশোর বরাবর এবং অপর একটি দল খুলনা ও বরিশালের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। খুলনা-যশোর-কুষ্টিয়া রেলওয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। আট নম্বর সেক্টর কমাণ্ডার লেঃ কর্নেল মনজুরের নেতৃত্বে আগেই মুক্তিবাহিনী চৌগাছা দখল করে। ২৪ নভেম্বর সংঘটিত চৌগাছা যুদ্ধে পাকসেনারা ৪টি শাফি ট্যাংক হারায়। একটি ভারতীয় ব্রিগেড ধানক্ষেতের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু