পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৫৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
532

করে। একইভাবে কুষ্টিয়ার পথে দর্শনা আক্রমণ করা হয়। আট নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা ডিসেম্বরের তিন তারিখে সিংহঝুলিতে পৌছায়। ঝিকরগাছার পতন হয় ডিসেম্বরের পাঁচ তারিখে। তারপর তিনদলে বিভক্ত হয়ে যশোর আক্রমণ করা হয়। উত্তরে দিকের দলটি যশোর-ঝিনাইদহ সড়ক ধরে আক্রমণ অব্যাহত রাকে। মধ্যবর্তী দলটি ধানক্ষেতের ভিতর দিয়ে চিতের বিল এলাকা দিয়ে অগ্রসর হয়। দক্ষিণ দিকে বেনাপোলযশোর সড়কে অগ্রসর হয় অপর একটি দল।

 ডিসেম্বর পাঁচ তারিখে কোটচাঁদপুরে যশোর-কুষ্টিয়া রেলওয়ে জংশন দখল করে রেলওয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। অগ্রসরমান এই দলটি উত্তর দিকে ধাবিত হয় এবং ৭ ডিসেম্বর আরও ৩০ মাইল অগ্রসর হয়ে ঝিনাইদহ দখল করে। ঝিনাইদহ যুদ্ধে মেজর মুস্তাফিজ আহত হন।

 লেঃ জেনারেল নিয়াজী ৫ ডিসেম্বর রাত পাকবাহিনীকে পেছনে সরে আসতে নির্দেশ দেন। সম্ভবত ঢাকার পথে পেছনে এসে মেঘনার তীরে সৈন্য সমাবেশ করে ঢাকা রক্ষা করার পরিকল্পনা ছিলো। কিন্তু তা আর সম্ভব ছিলো না, কারণ যশোর-ঢাকা সড়ক মিত্রবাহিনীর দখলে চলে গেছে। মধুমতি অতিক্রম করে মিত্রবাহিনীর একটি দল খুলনার দিকে এবং অপর একটি দল কুষ্টিয়ার দিকে অভিযান অব্যাহত রাখে। পাকিস্তানী নবম ডিভিশন যশোর সেনানিবাস ছেড়ে মাগুরার দিকে চলে যায়। ৬ ডিসেম্বর যশোর মুক্ত হয়। পরবর্তীকালে মেহেরপুর দখলের পর চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়ার দিকে যাত্রা অব্যাহত থাকে।

 ডিসেম্বর ১২ তারিখে ফরিদপুরের ভাটিয়াপাড়ার মুক্তিবাহিনীর সাথে পাকসেনাদের সংঘর্ষ হয়। লেঃ সিদিক ও ক্যাপ্টেন হুদা এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। লেঃ সিদ্দিকী ১৪ ডিসেম্বর এই যুদ্ধে একটি চোখ হারান। মুক্তিবাহিনী আক্রমণ প্রচণ্ড রূপ ধারণ করে এবং ১৮ ডিসেম্বর ১৫০ জন পাকসেনা আত্মসমর্পণ করে।

 মেজর জলিলের নেতৃত্বে নয় নম্বর সেক্টরের মুক্তিবাহিনী বীর বিক্রমে অগ্রসর হচ্ছিলো। ৩ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা শত্রমুক্ত হয়। ১০ ডিসেম্বর মিত্র ও মুক্তিবাহিনী খুলনা দখল করে। ৭ ডিসেম্বর বরিশাল মুক্ত হয় এবং পাকসেনারা ক্যাপ্টেন বেগ ও নূরুল ইসলাম মঞ্জুর কাছে আত্মসমর্পণ করে। ১৭ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার হায়াত তার সৈন্যসামন্তসহ আত্মসমর্পণ করে।

 ৩৩ কোর ফ্রণ্টে পরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন দল পাকিস্তানী শক্ত প্রতিরক্ষা অবস্থানগুলোকে আক্রমণ করে এবং মূল আক্রমণ পরিচালিত হয় হিলিতে।

 একটি ব্রিগেড জলপাইগুড়ি সীমান্তে এবং অন্য একটি ব্রিগেড কুচবিহার সীমান্তে অবস্থিত পাকঘাঁটি আক্রমণ করে। এক ডিভিশন সৈন্য হিলি আক্রমণ করে। হিলিতে পাকসেনারা প্রচণ্ড যুদ্ধ করে।

 ডিসেম্বর পাঁচ তারিখে পীরগঞ্জ ও খানপুর দখল হয়। ৭ ডিসেম্বর লালমনিরহাট শত্রমুক্ত হয়। দুর্গাপুর ৮ ডিসেম্বর দখল হয় এবং ৯ ডিসেম্বর রংপুর ও দিনাজপুর পাকঘাঁটি আক্রমণ করা হয়।

 মিত্রবাহিনীর একটি দল হিলিকে এড়িয়ে পলাশবাড়ির দিকে অগ্রসর হয়।

 উইং কমাণ্ডার এম, কে, বাশারের নেতৃত্বে ছয় নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা ৫ ডিসেম্বর ধরলা নদী অতিক্রম করে কুড়িগ্রাম দখল করে। পাকসেনারা কুড়িগ্রাম থেকে পালিয়ে লালমনিরহাটে চলে যায়। ৬ ডিসেম্বর তিস্তা নদীর তীরে মুক্তিবাহিনী অবস্থান নেয়। ৩ ডিসেম্বর তারিখে ভজনপুর সাব-সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা ঠাকুরগাঁও বীরগঞ্জ দখল করে। ১২ ডিসেম্বর রংপুর ও সৈয়দপুর সেনানিবাস ছাড়া সমগ্র এলাকা মুক্তিবাহিনীর দখলে আসে। পাকসেনারা ১৭/১৮ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করে।

 সাত নম্বর সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধারা নবাবগঞ্জের দিকে অভিযান শুরু করে। ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে এই অভিযান শুরু হয়। অপর একটি দল লেঃ রফিকের নেতৃত্বে মহানন্দ নদী অতিক্রম