পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৫৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
533

নাচোল-আমনুরা বরাবর অগ্রসর হয়ে নবাবগঞ্জ আক্রমণ করে। অপর একটি দল লেঃ রশিদের নেতৃত্বে গোমস্তাপুর হয়ে নবাবগঞ্জ অভিমুখে যাত্রা করে। ১৩ ডিসেম্বর বারঘরিয়ার নদী অতিক্রম করে প্রতিটি বাংকার চার্জ করার সময় এই নির্ভীক যোদ্ধা শহীদ হন। এই সেক্টরের তপন ও হামজা সাবসেক্টরে সৈন্যরা হিলি থেকে বগুড়া হয়ে দিনাজপুরের দিকে অগ্রসর হয়। মেজর গিয়াসের নেতৃত্বে লালগোলা সাবসেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা পদ্মা নদী পার হয়ে রাজশাহী আক্রমণ করে এবং শেখপাড়া সাব-সেক্টর কমাণ্ডার মেজর রশিদের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর অপর একটি দল পাবনা অভিমুখে যাত্রা করে। পাকসেনারা রাজশাহী ছেড়ে নাটোরে আশ্রয় নেয়। ১৭ ডিসেম্বর সমবেত পাকসেনারা নাটোরে আত্মসমর্পণ করে।

 এদিকে যশোর দখলের পর লেঃ আকতার কালিগঞ্জের দিকে এবং লেঃ অলীক কুমার গুপ্ত ঝিনাইদহের দিকে অগ্রসর হয়। মিত্রবাহিনী খুলনার দিকে অগ্রসর হয়। রূপদিয়া ও নোয়াপাড়া দখলের পর শিরমনিতে যুদ্ধ শুরু হয়। এখানে পাকিস্তানী ১৫ এফ এফ রেজিমেণ্ট সুদৃঢ় প্রতিরক্ষা ব্যুহ রচনা করে। পশ্চিমে জলাধার আর পূর্বদিকে নদী। পাকসেনারা এখানে প্রবলভাবে বাধা দিতে সক্ষম হয়। পাঁচ দিনব্যাপী প্রচণ্ড যুদ্ধের পর শিরমনির পতন হয় ১৬ ডিসেম্বর সকালে। মেজর জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী রূপসা নদীর তীরে এসে পৌঁছায় এবং খুলনা আক্রমণ করে। ৭ ডিসেম্বর সাতক্ষীরার পতন হয়। নবম সেক্টর সৈন্যরা লেঃ হুদার নেতৃত্বে এবং অষ্টম সেক্টর সৈন্যরা ক্যাপ্টেন মাহবুবের নেতৃত্বে সাতক্ষীরা দখল করে।

 ক্যাপ্টেন তৌফিক এলাহি, ফ্লাইং অফিসার কালাম ও লেঃ নুরুন্নবী কুষ্টিয়ায় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। মেজর আযম চৌধুরী দুই কোম্পানী নিয়ে ৬ ডিসেম্বর মেহেরপুর দখল করেন ও পরদিন চুয়াডাঙ্গা শত্রমুক্ত করেন।

 ফরিদপুরের দিকে অগ্রসরমান যৌথ বাহিনী কামারখালি ঘাটে ৮ ডিসেম্বর পাকিস্তানীদের সাথে সংঘর্ষ আসে। মধুমতি নদীর সকল সম্ভাব্য অতিক্রম স্থানে পাকসেনারা প্রহরারত ছিলো। লেঃ মোস্তফা স্থানীয় জনগণের কাছ থেকে নৌকা সংগ্রহ করে। ১৪ এপ্রিল মধুমতি নদী অতিক্রম করে মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের পিছু হটিয়ে দেয়। মিত্রবাহিনী এয়ারব্রিজ অপারেশন করে মধুমতি অতিক্রম করে।

 চার নম্বর সেক্টর এলাকায় ৭ ডিসেম্বর পাকসেনারা মুক্তিবাহিনীর আক্রমণের ফলে দরবশত ছেড়ে হরিপুরে পলায়ন করে। ১১ ডিসেম্বর পাকবাহিনী নদী পার হয়ে মুক্তিবাহিনী ওপর আক্রমণ করে। এই আক্রমণের ফলে মুক্তিবাহিনী বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১২ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনীর হরিপুর আক্রমণ করে এবং ১৩ ডিসেম্বর হরিপুর শত্রমুক্ত হয়। ডিসেম্বর ১৫ তারিখে পাকিস্তানী ঘাঁটি খাদিমনগরের ডান দিক থেকে মিত্রবাহিনী ও বাম দিক থেকে সেক্টরবাহিনী আক্রমণ করে। সিলেট মুক্ত হয় ১৭ ডিসেম্বর।

 পাঁচ নম্বর সেক্টরে ৩ ডিসেম্বর গোয়াইনঘাটে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধ হয। ৩ ডিসেম্বরেই গোয়াইনঘাট মুক্ত হয়। ৪ ডিসেম্বর করিমগঞ্জ থেকে মৌলবীবাজার হয়ে সিলেটের পথে যাত্রা শুরু করে মিত্রবাহিনী। ৬ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ মুক্ত হয়। সেক্টর কমাণ্ডার লেঃ কর্নেল শওকত ছাতক আক্রমণ করেন ৭ ডিসেম্বর এবং ঐ দিনই রাত আটটায় ছাতক দখল হয়। মেজর শাফায়াত জামিল সালুটিকর বিমান বন্দরের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। ৯ ডিসেম্বর গোবিন্দগঞ্জ আক্রমণ করে মুক্তিবাহিনী। ১৫ ডিসেম্বর এই বাহিনী বিশ্বনাথ দখল করে। প্রায় তিনশ’ মুক্তিযোদ্ধার একটি দল নিয়ে ক্যাপ্টেন নবী রাধানগর গোয়াইনঘাট আর্টিলার সাপোর্ট ছাড়াই আক্রমণ করে দখল করেন। এর আগে ভারতীয় গুর্খা রেজিমেণ্ট দুইবার আক্রমণ করে বিফল হয়।

 চতুর্থ কোর ফ্রণ্টে তিন ডিভিশন ভারতীয় সৈন্য ও মুক্তিবাহিনী উত্তরে মেঘালয় সীমান্ত থেকে ত্রিপুরার দক্ষিণে ফেনী পর্যন্ত ২৪০ মাইল বিস্তৃত এলাকায় ধাবিত হয়। এই কোরের দায়িত্ব ছিলো সুরমা নদী থেকে মেঘনার