বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৫৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: দশম খণ্ড
534

পূর্বতীর পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা মুক্ত করা। চট্টগ্রাম যাওয়ার রেল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে মেঘনা পার হয়ে ঢাকার পথে অভিযান করার পরিকল্পনা নেয়া হয়।

 পরিকল্পনা মোতাবেক জেনারেল সগত সিং এক ডিভিশন সৈন্য শিলচর-করিমগঞ্জ হয়ে সিলেটের দিকে পাঠান। অন্য একটি ডিভিশন আখাউড়া-আশুগঞ্জ বরাবর পাঠানো হয়। পরিকল্পনা মতো অপর ডিভিশনটি তিন দলে বিভক্ত হয়ে প্রথম দলটি কুমিল্লা আক্রমণ অব্যাহত রাখে এবং অন্য দল দুটির একটি লাকসাম-চাঁদপুর এলাকায় এবং অপরটি ফেনী থেকে দক্ষিণে অগ্রসর হতে থাকে।

 মুক্তিবাহিনী করিমগঞ্জ জয় করে মুন্সীনগরের দিকে এগিয়ে চলে। মুন্সীনগরের পতন হয় ৫ ডিসেম্বর। এরপর একটি দল মৌলবীবাজারের দিকে অগ্রসর হয়। ডিসেম্বর ৮ তারিখে মৌলবীবাজার দখল হয়। অন্য একটি দল সিলেট অভিমুখে যাত্রা শুরু করে।

 সিলেট আক্রমণ সহজসাধ্য ছিলো না। নদী অতিক্রম অপারেশনের জন্য যথেষ্ট ব্রীজ তৈরির যন্ত্রাদি ছিলো না। রাতের অন্ধকারে হেলিকপ্টারের সাহায্যে এয়ার ব্রিজিং অপারেশন শুরু হয়। পরদিন সাকলে এই দলটি সিলেটের উপকণ্ঠে আসতে সক্ষম হয়।

 চতুর্থ কোরের যে ডিভিশনটি আখাউড়া অভিমুখে যাত্রা শুরু করে-জেনারেল সগত সিং মেঘনা অক্রিম করে ঢাকার দিকে অভিযানের সিদ্ধান্ত নেন। মুক্তিবাহিনীর তিন নম্বর সেক্টর ও ‘এস' ফোর্স তখন আখাউড়ায় পাকবাহিনীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত।

 আখাউড়া থেকে রেলওয়ে লাইন আশুগঞ্জের দিকে চলে গেছে। চলাচলের কোনো রাস্তা ছিলো না। শায়েস্তাগঞ্জ থেকে ভৈরববাজার প্রায় এক মাইল দীর্ঘ নদী একটি বিরাট বাধা হিসেবে দেখা দেয়।

 অগ্রবর্তী ব্রিগেড আখাউড়া ঘিরে ফেলে এবং গঙ্গাসাগরের দিকে এগিয়ে চলে। এইসময়ে পাকিস্তানী স্যাবরজেট বিমানগুলো হামলা চালায়। ভারতীয় জঙ্গী বিমান পাল্টা আক্রমণ চালালে পাকিস্তানী বিমানগুলো পালিয়ে যায়। ৫ ডিসেম্বর আখাউড়ার পতন হয়।

 ভারতীয় ৩১১ পার্বত্য ব্রিগেড, ৭৩ পার্বত্য ব্রিগেড তখন নরসিংদীতে অবস্থান করছিলো। মিত্রবাহিনী ১২ ডিসেম্বর ডেমরা দখল করে। 'এস' ফোর্স পদব্রজে বোলতাপুল হয়ে রূপগঞ্জ দিয়ে বালু নামক স্থানে নদী অতিক্রম করে ডেমরা পৌঁছায় ১৩ ডিসেম্বর। ১৬ ডিসেম্বর ১০টা পর্যন্ত সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে। ‘কে’ ফোর্স দুই দলে বিভক্ত হয়ে একদল চট্টগ্রামের দিকে এবং অপর দল চাঁদপুরের দিকে অগ্রসর হয়। দশম ইস্ট বেঙ্গল মিত্রবাহিনীর ৮৩ ব্রিগেডের সাথে যৌথভাবে ফেনী শহর দখল করে। এই বাহিনীকে নোয়াখালী সদরে রাজাকার ও আলবদর বাহিনী বাধা দেয় কিন্তু তীব্র আক্রমণের মুখে তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ঐদিনই তারা চট্টগ্রামের দিকে অগ্রসর হয়। ফেনী থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব ছিলো মাত্র ৬৫ মাইল। যৌথ বাহিনী ১৩ ডিসেম্বর কুমিরা পৌঁছায় দুপুর বারোটায়। ক্যাপ্টেন আইনুদ্দিনের নেতৃত্বে নবম বেঙ্গল এবং ক্যাপ্টেন গাফ্ফারের নেতৃত্বে চতুর্থ বেঙ্গল প্রবল পরাক্রমে চট্টগ্রামের দিকে অগ্রসর হতে থাকে।

 এখানে সবিশেষ উল্লেখযোগ্য যে, 'এস' ফোর্স কমাার লেঃ কর্নেল শফিউল্লাহ দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেণ্টকে আখাউড়ার প্রতিরক্ষার নিয়োজিত রেখে ভৈরবের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী 'এস' ফোর্স মাধবপুর হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরাইল পৌঁছায় ডিসেম্বর ৮ তারিখে। আখাউড়ার যুদ্ধে লেং বদিউজ্জামান শহীদ হন। পরিকল্পনা হয় ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার দক্ষিণ থেকে অগ্রসর হয়ে একটি দল শহরে ঢুকবে, অপর দল উত্তর দিক থেকে সিলেট সড়ক দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌঁছাবে- আর মিত্রবাহিনী আখাউড়া- ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেললাইন এবং উজানী সর-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক হয়ে অগ্রসর হবে। ‘এস' ফোর্সের ১১ বেঙ্গলকে চান্দুরার উত্তরে রোড ব্লক করে চান্দুরা থেকে সরাইল পর্যন্ত এলাকা শত্রুমুক্ত করেন। ১১ বেঙ্গল পাইকপাড়ায় এলে মেজর নাসিম