পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
31

কোম্পানীকে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। আমার একটি কোম্পানী মীরেশ্বরাই এলাকা এবং ফটিকছড়ি এলাকায় নিরাপদে ঘাঁটি স্থাপন করে বসেছিলো। সমগ্র বেলুনিয় অঞ্চল বেশ কয়েকদিন আগে কয়েকদিন আগে থেকেই শত্রুমুক্ত হয়েছিলো। ফেনী মুক্ত করার জন্য আমাদের প্রস্তুতি চূড়ান্ত। ১৯৭১-এর ২রা ডিসেম্বরের কথা বলছি। পরের দিন মিসেস গান্ধী কলকাতায় এক জনসভায় বক্তৃতা দেবেন। আমরা অনেকেই আশা করেছিলাম এই সভায় হয়তো তিনি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার কথা ঘোষণা করবেন।

স্বাধীনতার চূড়ান্ত লড়াই

 বেলুনিয়ায় আমার অগ্রবর্তী কমাণ্ড পোস্টের দিকে জিপ চালিয়ে এগিয়ে যাই। ধুলায় আচ্ছন্ন পথ। দুই পাশে ফসলের সোনালী মাঠ। ধান কাটা মৌসুম এসে গেছে।

 অন্যান্য দিনের মতোই সূর্য ডুবে গেল। তারপর সমস্ত এলাকা পূর্ণ চাঁদের আলোয় ভরে ওঠে। পথের পাশে একটা টহলদার দলকে ব্রিফিং দেয়া হচ্ছিলো। অল্প দূরেই আমাদের মেশিনগানের আওয়াজ শোনা যায়। ফাঁকে ফাঁকে পাকিস্তানীদের মেশিন গান....... কখনও বা আর্টিলারী শেলিং শুরু হয়। সব কিছু নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা..... বাংলাদেশের হয়তো সব ফ্রণ্টেই তা ঘটেছিলো প্রতিদিন।

 মিসেস ইন্দিরা গান্ধী সেদিন কলাকাতায় এক বিশাল জনসভায় ভাষন দিলেন। তাঁর নয়াদিল্লি ফিরে

যাবার কোনো তাড়াহুড়োই ছিলো না।

 জেনারেল অরোরার ইস্টার্ন কমাণ্ড হেড কোয়ার্টারে আর একটা কর্মব্যস্ত দিনের অবসান ঘটলো। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী রাজধানীর বাইরে তাই ইস্টার্ন কমাণ্ডে কেউ কোনো গুরুরত্বপূর্ণ নির্দেশ বা সিদ্ধান্ত পাওয়ার আশা করছিলো না। ওদিকে ইয়াহিয়া খান তখন ইসলামাবাদে। দশ দিনের মধ্যে যুদ্ধ করার যে পূর্বাভাস তিনি দিয়েছিলেন তা শেষ হতে আরো দুই দিন বাকী।

 ভারতের সমস্ত অগ্রবর্তী বিমান ঘাঁটিসমূহ যুদ্ধের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছিল। তবে বিমান ঘাঁটিগুলোতে যুদ্ধের সবগুলো বিমান তখন পর্যন্ত পৌছেনি। ভারতীয় নৌবাহিনীর ইস্টার্ন ফ্লীট এবং ওয়েস্টার্ন ফ্লীট তখন পর্যন্ত শান্তি কালীন ঘাঁটিতেই অবস্থান করছিলো।

 পাকিস্তানের বহুল প্রচারিত সাবমেরিন ৩১১ ফুট দীর্ঘ পি-এন-এস গাজী এগিয়ে চললো ভারতের নৌ ঘাঁটি বিশাখাপত্তমের দিকে। উদ্দেশ্য ছিলো ভারতের বিমানবাহী যুদ্ধ জাহাজ 'ভিক্রান্ত' কে টর্পেডো মেরে ডুবিয়ে দেয়া। ৩রা ডিসেম্বর। শুক্রবার। ভারতীয় সময় বিকাল ৫টা ৪৭ মিনিটে পাকিস্তানী বিমান বাহিনী অতর্কিতে ভারতের ৭টি বিমান ঘাঁটিতে একযোগে হামলা চালায়। রাত সাড়ে আটটায় জম্মু এবং কাশ্মীরে দক্ষিণ-পশ্চিম ছাম্ব এবং পুঞ্চ সেক্টরে ব্যাপক আক্রমণ অভিযান শুরু করে।

 এই ধরনের পরিস্থিতির জন্য ভারত পুরো প্রস্তুত ছিলো। মিসেস গান্ধী দ্রুত রাজধানীতে প্রত্যাবর্তন করলেন এবং ঐ রাতেই ১২টা ৩০ মিনিট জাতির উদ্দেশ্য প্রদত্ত বেতার ভাষণে সকলকে চরম ত্যাগ স্বীকারের জন্য তৈরী হওয়ার আহবান জানালেন। ততোক্ষণে জেনারেল অরোরাও আক্রমণের নির্দেশ পেয়ে যান। ভারতীয় নৌবাহিনী ইতিমধ্যেই সফল অভিযান শুরু করে দিয়েছিলো। বিশাখাপত্তম উপকূলের মাত্র কয়েক মাইল দূরে ভারতীয় ডেস্ট্রয়ার 'আইএনএস রাজপুত' পাকিস্তানী সাবমেরিন গাজীর সন্ধান পেয়ে যায়। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই ‘রাজপুতের ডেপথ' চার্জে পাকিস্তানের সাবমেরিন গাজী টুকরো টুকরো হয়ে সাগর গর্ভে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। একই সঙ্গে অন্যদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং মুক্তিবাহিনী যৌথভাবে আন্তর্জাতিক সীমান্তরেখা অতিক্রম করে বাংলাদেশ প্রবেশ করলো। ইস্টার্ন ফ্লীটও দ্রুত লক্ষ্যস্থল অভিমুখে অগ্রসর হলো। ভারতীয় বিমানবাহিনী কিছুক্ষণ আগে থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের প্রায় সবগুলো বিমান ঘাঁটি এবং রাডার কেন্দ্রের উপর আঘাত হেনে