দুটো গোলন্দাজ ব্যাটারী আমরা গড়ে তুলেছিলাম। ভারতীয়দের প্রাচীন কিছু, কামান ছিল। ওগুলো দিয়ে প্রথম ব্যাটারীটি গড়ে উঠেছিল। ওর নাম দিয়েছিলাম 'নম্বর ওয়ান মুজিব ব্যাটারী।' এই ব্যাটারী যুদ্ধেও ছিল। এর পরে আমরা দ্বিতীয় ব্যাটারী গঠন করি। আগেরটির চেয়ে একটু ভাল কামান দিয়ে এটি সজ্জিত ছিল। এ ব্যাটারীও যুদ্ধ করে।
আমরা যুদ্ধ আরম্ভ করি প্রায় ৫টি ব্যাটালিয়ন সৈন্য দিয়ে। যুদ্ধের শুরুতেই অনেকগুলোর সংখ্যা পূরণ করতে হয়েছে। যেমন, ইস্টবেঙ্গল রেজিমেণ্টের প্রথম ব্যাটালিয়ন-একটি অত্যন্ত ঐতিহ্যবাহী পুরোনো পল্টন। মাত্র ১৮৮ জনকে আমি পেয়েছিলাম। বাকীরা নিহত কিংবা আহত হয়েছিলেন যশোরের যুদ্ধে। তাদের সংখ্যা পূরণ করতে হলো। শেষ পর্যন্ত আমি ৫টি ব্যাটালিয়ন থেকে ৮টি ব্যাটালিয়নে উন্নীত করি। এগুলো ছিল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেণ্টের এক, দুই, তিন, চার, আট, নয়, দশ, এগারো নং ব্যাটালিয়ণ। নয়, দশ, এগারো নং ছিল নতুন
এছাড়া সেক্টর ট্রুপস গড়ে তুলি। সেক্টর ট্রপস-এর সংখ্যা শেষ পর্যন্ত ছিল দশ হাজার। যারা প্রাক্তন ইপিআর এবং নিয়মিত বাহিনীর বিভিন্ন ব্রাঞ্চ থেকে এসেছিলেন তাদেরকে ১১টি সেক্টরে নিয়মিত বাহিনীর সেক্টর ট্রপস হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিল। কোন সেক্টরে চারটি কোম্পানি, কোন সেক্টরে পাঁচটি কোম্পানি, কোন সেক্টরে ছ'টি কোম্পানী এমনি বিভিন্ন সেক্টরে প্রয়োজন অনুসারে সংখ্যা বিভিন্ন ছিল। তারা সেক্টর কমাণ্ডারের অধীনে যুদ্ধ করতেন।
নিয়মিত ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেণ্টের ব্যাটালিয়ন দিয়ে গঠিত হয়েছিল ব্রিগেড। ব্রিগেডগুলোকে আমি ফোর্স নাম দিয়েছিলাম- জেড ফোর্স, কে ফোর্স, এস ফোর্স। ব্রিগেডগুলোর কমাণ্ডারদের নামে এই নামকরণ হয়েছিল। জেড ফোর্স কমাণ্ড করতেন জিয়াউর রহমান, কে ফোর্স খালেদ মোশাররফ এবং এস ফোর্স শফিউল্লাহ।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের আগে যে অর্গানাইজেশন ছিল আমরা তার পরিবর্তন পরিবর্তন করিনি। এই অর্গানাইজেশন অনেক চিন্তা করে বিগত দশ বিগত দশ বছরে শান্তি ও যুদ্ধে পরীক্ষার ভিত্তিতে গড়া হয়েছিল, এর সঙ্গে আমি ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলাম, সেটা ভারতীয় অর্গানাইজেশনের চেয়ে একটু স্বতন্ত্র। আমি মনে করি আমাদেরটা সুষ্ঠু। সেই অর্গানাইজেশনের ভিত্তিতে আমাদের ব্যাটালিয়নগুলোর সাধারণ অস্ত্রসজ্জা ছিল। অন্যান্য দেশের ইনফ্যানট্রি ব্যাটালিয়নের যা সাধারণ অস্ত্র থাকে এখানেও তাই ছিল, তবে ফায়ার পাওয়ারটা এই অর্গানাইজেশনের কিছুটা বেশী। যেমন, সাধারণতঃ একটি সেকশনে একটি লাইট মেশিনগান থাকে আমাদের ছিলো দুটো মেশিনগান। আর অস্ত্র ছিল যা স্বাভাবিক ইনফ্যানট্রি ব্যাটালিয়নে থাকে-গ্রেনেড, রাইফেল, লাইট মেশিনগান, মিডিয়াম মেশিনগান, দুই ইঞ্চি এবং তিন ইঞ্চি বা ৮১ মিলিমিটার মর্টার এবং ট্যাংস্কবিধ্বংসী কামান।
সেক্টর ট্রপস-এর অস্ত্রও প্রায় এ ধরনের ছিল। তবে ওদের স্কেল ছিল আলাদা। ওদের কাজ ঠিক নিয়মিত বাহিনীর মত ছিল না। তাদের ভূমিকা ছিল-প্রথম তারা ঘাঁটি করবেন। সেই ঘাঁটি থেকে গেরিলা ভেতরে পাঠানো হবে এবং গেরিলাদের সাথে সম্মিলিত হয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে শত্রুর উপর বিভিন্ন হামলা ও অন্যান্য কাজ করবেন। তাই তাদের অস্ত্রের পরিমাণ বা স্কেল এ্যাকটিভ ব্যাটালিয়নের চেয়ে কিছুটা পৃথক ছিল, কিছু কিছু কম ছিল।
এবার গণবাহিনীর কথায় আসছি। সর্বমোট প্রায় ৮০ হাজারের মতো ছিল গণবাহিনীর সদস্য। আমি ৬০ থেকে ৭০ হাজার গণবাহিনী কাজে নিয়োগ করেছিলাম। এছাড়া কয়েক হাজার প্রশিক্ষণরত ছিল। এদের অস্ত্র যা দিতে চেয়েছিলাম, যে স্কেল আমরা তৈরী করেছিলাম ঠিক সেই পরিমাণ অস্ত্র সবসময় আমরা দিতে পারিনি। অস্ত্রের অভাবই ছিল এর কারণ। যা হোক, গণবাহিনীর বীর গেরিলাদের অস্ত্র ছিল প্রত্যেকের কাছে গ্রেনেড, কয়েকজনের কাছে স্টেনগান। এছাড়া ছিল রাইফেল, যদিও গেরিলাদের জন্যে রাইফেল সন্তোষজনক অস্ত্র নয়। কিন্তু যেহেতু আমাদের কাছে সম্বল ছিল না তাই যা পেতাম তাই ব্যবহার করতে হতো। এছাড়া ছিল অল্প কয়েকটি পিস্তল ও এসএলআর। খালি হাতেও তারা যুদ্ধ করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন নির্দিষ্ট ধরনের অপারেশনের