১ নম্বর সেক্টরের যুদ্ধ বর্ণনা
[সাক্ষাৎকারঃ নায়েব সুবেদার মনিরুজ্জামান, ২৪ আগস্ট, ১৯৭৩]
৮ই মে সীমান্ত পার হয়ে ভারতে আশ্রয় নেই। হরিণাতে ২৪ ঘণ্টা অবস্থানের পর মেজর জিয়াউর রহমানের আদেশে শুভপুর অঞ্চলে বল্লভপুর এলাকায় আসি। শুভপুর-বল্লভপুরে পাকসেনাদের সাথে ২২ দিন যুদ্ধ চলে। এখানে মেজর জিয়াউর রহমান ও ক্যাপ্টেন ঘোষ (BSF) যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন।
সংবাদদাতার মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, পাকিস্তানী সৈন্যরা আমাদের উপর আক্রমণ চালাবে। যুদ্ধের শেষদিন রাতে তিনটা থেকে আমাদের মর্টার মেশিনগান দিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে ফায়ার শুরু করতে বাধ্য হই। ভোর পাঁচটা থেকে আটটা পর্যন্ত আমাদের অন্যান্য ফোর্স শুভপুর হতে আমলীঘাট পর্যন্ত Defence Position ছাড়তে বাধ্য হয়। পাকিস্তানীদের Artilicry 105 mm এর গোলা মধুগ্রাম-আমলীঘাটে বৃষ্টির মত পড়তে থাকে। আমাদের গোলাবারুদ শেষ করে আমরা সকাল নটায় ভারতের আমলীঘাট এলাকাতে একত্রিত হই। ভারতীয় সেনাবহিনীর একজন অফিসার ব্রিগেডিয়ার পাণ্ডের অধীনে আমাদের এক Conference হয়। মেজর জিয়াউর রহমান, ক্যাপ্টেন অলি ও অন্যান্য EPR বেঙ্গল রেজিমেণ্টের ICO 3 NCO এই Conference-উপস্থিত ছিলেন।
ব্রিগেডিয়ার পাণ্ডে বললেন যে, “আমার ৩০ বছরের চাকরি জীবনে অনেক বড় বড় যুদ্ধ দেখেছি, কিন্তু শুভপুরের যুদ্ধের মত কোথায়ও দেখিনি। মুক্তিফৌজদের চিন্তার কোন কারণ নেই। এ হল যুদ্ধের প্রথম অধ্যায়। দ্বিতীয়, তৃতীয় এখনো বাকি আছে। যুদ্ধের দ্বিতীয় অধ্যায় আপনাদেরকে সম্পন্ন করতে হবে। তৃতীয় অধ্যায়ে আপনারা অন্যের সাহায্য পেতে পারেন। বাংলাদেশের হিরো বনেগা তো মুক্তিফৌজ বনেগা। আওর কেছিকা হক নেহি হায়। খোদা হাফেজ, জয় বাংলা।”
মেজর জিয়াউর রহমান আমাদের সান্ত্বনা দেয়ার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের সাথে ছিলেন। সন্ধ্যাবেলায় আমাদেরকে ঘন জংগলের মধ্যে ক্যাম্প করা নির্দেশ দিয়ে তিনি চলে যান। ক্যাপ্টেন অলি আমাদের সাথে থেকে যান। এখানে কয়েকদিন অবস্থানের পর ছাগলনাইয়া থানার অন্তর্বর্তী চাঁদগাজি Sub- Sector গঠন করা হয়। এক Company সৈন্য এবং Mortar Platoon নিয়ে জুন মাসের প্রথম মাসের প্রথম সপ্তাহে ১/২ তারিখে আমরা চাঁদগাজিতে defence তৈরী করি। সেখান থেকে Commando Operation শুরু হয়ে যায়। ক্যাপ্টেন অলি Sub-Sector Commander - Second in Command ক্যাপ্টেন শহীদ শামসুল হুদা যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন-যিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সদয় ব্যবহার করতেন। তিনি অত্যান্ত দয়ালু ছিলেন। যে কোন Operation কে জয়যুক্ত করতে তিনি নিজের সৈন্যদের উদ্বুদ্ধ করতেন এবং আপ্রাণ পরিশ্রম করতেন।
চাঁদগাজি ডিফেন্সে থাকাকালীন পাকিস্তানী সৈন্যদের এক ব্যাটালিয়ান আমাদের উপর আক্রমণ করে (জুন মাসের ১৫ তারিখ)। সেই আক্রমণের দাঁতভাংগা জবাব দেয়া হয়। পাকিস্তানী সৈন্যরা পিছু হটে যায়। সেইদিন আমাদের একটা Artillery Battery ছিল। ১৬ই জুন পাকিস্তানী সৈন্যরা আবার এক ব্রিগেড সৈন্য নিয়ে আমাদের উপর আক্রমণ চালায়। কিন্তু পাকিস্তানীরা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের অনেক লোক হতাহত হয়। পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। চাঁদগাজি দিঘীতে আমাদের Defence ছিল। দ্বিতীয় আক্রমণের দিন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার সাবেক সিং উপস্থিত থেকে Command করেছিলেন।
১৬/১৭ই জুন পাকিস্তানী সৈন্যরা সকাল ৮টা থেকে তৃতীয়বার আক্রমণ শুরু করে। তৃতীয়বার আক্রমণে আমাদের Defence এর অবস্থানগুলোতে তারা fire করে। পাঁচটার সময় হেলিকপ্টারযোগে তারা আমাদের Defence- এর উপর “রেকী” আরম্ভ করে। তাদের একটা Commando Battalion হেলিকপ্টারযোগে আমাদের defence- এর তাদের সুবিধাজনক জায়গায় অবতরণ করাতে শুরু করে। তারা