বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: দশম খণ্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
---|---|---|
৩। ২নম্বর সেক্টর ও ’কে ফোর্সের যুদ্ধের বিবরণ। | সাক্ষাৎকারঃ ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ[১] ১৯৭৪-১৯৭৫ | ১৯৭১ |
সামগ্রিকভাবে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য আমি আমার যুদ্ধের এলাকাকে কয়েকটি সাব-সেক্টর-এ বিভক্ত করে নেই। আমার সাব-সেক্টরগুলি নিম্নলিখিত জায়গায় তাদের অবস্থান গড়ে তোলে।
(ক) গঙ্গাসাগর, আখাউড়া এবং কসবা সাব-সেক্টরঃ এর উপ-অধিনায়ক ছিলেন ক্যাপ্টেন আইনউদ্দিন। তার সঙ্গে ছিল লেঃ ফারুক, ক্যাপ্টেন মাহবুব এবং সেকেণ্ড লেঃ হুমায়ুন কবির। এখানে ৪র্থ বেঙ্গলের ডেলটা কোম্পানী এবং ই, পি, আর-এর দুটি কোম্পানী ছিল। এদর সঙ্গে মর্টারের একটা দল ছিল। এই সাব-সেক্টর কসবা, আখাউড়া, সাইদাবাদ, মুরাদনগর, নবীনগর, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া পর্যন্ত তাদের অপারেশন চালাত।
(খ) দ্বিতীয় সাব-সেক্টর ছিল মন্দভাগেঃ এর উপ-অধিনায়ক ছিলেন ক্যাপ্টেন গাফফার (বর্তমানে মেজর)। তার অধীনে চালি কোম্পানী এবং একটা মর্টারের দল। এ দলটি মন্দভাগ রেলওয়ে স্টেশন হতে কুটি পর্যন্ত তাদের অপারেশন চালাতো।
(গ) তৃতীয় সাব-সেক্টরে ছিল শালদা নদীঃ এর উপ-অধিনায়ক ছিলেন মেজকর আবদুস সালেক চৌধুরী (মরহুম)। এর অধীনে এ কোম্পানী এবং ই, পি, আর-এর একটা কোম্পানী ছিল। এ দলটি শালদা নদী, নয়নপুর এবং বুড়িচং এলাকা পর্যন্ত তাদের অপারেশন চালাতো।
(ঘ) চতুর্থ সাব-সেক্টরে ছিল মতিনগরেঃ কমাণ্ডে ছিল লেং দিদারুল আলম। হেডকোয়ার্টার কোম্পানীর কিছুসংখ্যক সৈন্য এবং ই, পি, আর-এর একটা কোম্পানী গেমতীর উত্তর বাঁধ থেকে কোম্পানীগঞ্জ পর্যন্ত এই সাব-সেক্টরে অপারেশন চালাতো।
(ঙ) সগেমতীর দক্ষিণে ছিল নির্ভয়পুর সাব-সেক্টরঃ এর উপ-অধিনায়ক ছিলেন ক্যাপ্টেন আকবর এবং লেঃ মাহবুব। এ দলটির অপারেশন কুমিল্লা থেকে চাঁদপুর এবং লাকসাম পর্যন্ত ছিল।
(চ) রাজনগর সাব-সেক্টর ছিল সর্বদক্ষিণেঃ এ সাব-সেক্টরের উপ-অধিনায়ক ছিলেন ক্যাপ্টেন জাফর ইমাম, ক্যাপ্টেন শহীদ এবং লেঃ ইমামুজ্জামান। এই সাব-সেক্টর বেলুনিয়া, লাকসামের দক্ষিণ এলাকা এবং নোয়াখালীতে অপারেশন চালোতো। এই সাব-সেক্টরে ৪র্থ বেঙ্গল-এর ‘বি’ কোম্পানী, ই, পি, আর-এর ১টি কোম্পানী ও গণবাহিনীর লোক নিয়ে তৈরী এক সদ্যগঠিত কোম্পানী। জুলাই মাসে পাকিস্তানী সেনারা সবা এবং মন্দভাগের পুনঃদখলের প্রস্তুতি নেয় এবং কুটিতে ৩১তম বেলুচ রেজিমেণ্টের বাহিনী এবং গোলন্দাজ বাহিনী সমাবেশ করে। ক্যাপ্টেন গাফফারের অধীনে মন্দভাগ সাব-সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুসেনাদের মোকাবেলার জন্য তৈরী ছিল। জুলাই মাসের ১৯ তারিখে শত্রুসেনার একটি কোম্পানী নিয়ে শালদা নদীতে নৌকাযোগে অগ্রসর হয়। সুবেদার ওহাবের নেতৃত্বে মন্দভাগ সাব-সেক্টরের একটা প্লাটুন মন্দভাগ বাজারের নিকট শত্রুদের এই অগ্রবর্তী দলটির উপর প্রচণ্ড আঘাত হানে। এ সংঘর্ষে শত্রুসেনারা সম্পূর্ণ হতবুদ্ধি হয়ে যায়। শালদা নদীর তীর থেকে সুবেদার ওহবের প্লাটুনটি শত্রুসেনার উপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে অন্ততঃপক্ষে ৬০/৭০ জন লোক হতাহত হয় এবং অনেকেই নদীত ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ হারায়। এই আক্রমণে ৪র্থ বেঙ্গল রেজিমেণ্টের সৈন্যরা ৩১তম বেলুচ রেজিমেণ্টের অধিনায়ক কর্নেল কাইয়ুম, ৫৩ তম গোলন্দাজ বাহিনীর কুখ্যাত অফিসার ক্যাপ্টেন বোখারী, আরো তিন-চারজন অফিসার এবং ৮/১০ জন জুনিয়ার
- ↑ খালেদ মোশাররফ একাত্তরের মার্চে ৪র্থ বেঙ্গল রেজিমেণ্টে সেকেণ্ড-ইন-কমাণ্ড হিসাবে মেজর পদে ছিলেন