পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড

দলিল প্রসঙ্গঃ বিদেশী প্রতিক্রিয়া-ভারত

 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন ভারতের সরকারী ও বেসরকারী প্রতিক্রিয়া এবং ভূমিকা সম্পর্কিত দলিলপত্র বর্তমান খণ্ডে সন্নিবেশিত হয়েছে। 'বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারতের সরকারী প্রতিক্রিয়া’, ‘বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য সরকার ও বিধান সভাসমূহ’, ‘বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারতের বেসরকারী প্রতিক্রিয়া’, ‘ভারতীয় রাজ্যসভায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ’ এবং ভারতীয় লোকসভায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ’-এই পাঁচটি শিরোনামে দলিলসমূহকে বিন্যাস করা হয়েছে।

 বাংলাদেশে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ শুরু হবার পরদিন ২৬ মার্চেই ভারতীয় লোকসভায় প্রসঙ্গটি আলোচিত হয়। ৩১ মার্চে ভারতের রাজ্য ও লোকসভার যৌথ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী উত্থাপিত এক প্রস্তাব গ্রহণের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সরকারের তীব্র নিন্দা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করা হয়। ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণ পর্যন্ত নয় মাসের বিভিন্ন সময়ে দেশে ও বিদেশে প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী সহ সরকারী নেতৃবৃন্দের উল্লেখযোগ্য বক্তৃতা, বিবৃতি ও সাক্ষাৎকারসমূহ এই খণ্ডে সন্নিবেশিত হয়েছে। যুদ্ধ চলাকলীন বিভিন্ন সময়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিদেশ সফরকালে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নসহ কয়েকটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীবর্গের ভারত সফরকালে প্রকাশিত যুক্ত ইশতেহার ও বিবৃতিসমূহ বর্তমান খণ্ডে সংকলিত হয়েছে। ১৬ থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত যুগোশ্লাভিয়ার প্রেসিডেণ্ট মার্শাল টিটোর ভারত সফর ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ (পৃ: ১০০-১০৩)। ২৩ অক্টোবর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন ও ফ্রান্সসহ পাশ্চাত্যের কয়েকটি দেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে প্রকাশিত যুক্ত ইশতেহার, বিবৃতি, সাক্ষাৎকার ও বিভিন্ন সমাবেশে তাঁর ভাষণসমূহও এখানে উদ্ধৃত হয়েছে। পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করে ১৫ নভেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেণ্টকে লিখিত টিঠিটি এই খণ্ডে মুদ্রিত হয়েছে।

 সরকারীভাবে ১৯৭১-এর ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া হলেও স্বীকৃতির দাবী উত্থাপিত ও আলোচিত হয়ে আসছিলো প্রথম দিক থেকেই। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় স্বীকৃতির সর্বসম্মত প্রস্তাব গৃহীত হয় ৮ মে (পৃঃ ২৩০-২৮১)। রাজ্যসভায় দাবীটি উত্থাপিত হয় ২৫ মে (পৃঃ ৫৩৩-৫৩৭)। এ ছাড়া শরণার্থী সমস্যা, পাকিস্তানকে দেয়া মার্কিন অস্ত্র, চীনের সমর্থন, সীমান্ত পরিস্থিতি এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যসহ বাংলাদেশ সংক্রান্ত সকল প্রশ্নেই রাজ্যসভা ও লোকসভার কার্যবিবরণী এই খণ্ডে সন্নিবেশিত হয়েছে।

 সরকার এবং পার্লামেণ্টের বাইরে বাংলাদেশের সমর্থনে গড়ে ওঠা সকল শ্রেণীর জনগণের আন্দোলন ও তৎপরতার চিত্রও মিলবে গ্রন্থের বিভিন্ন দলিলপত্র ও সংবাদপত্রের প্রতিবেদন থেকে। ‘সংগ্রামী স্বাধীন বাংলাদেশ সহায়ক সমিতি', 'কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ সহায়ক সমিতি’, ‘বাংলাদেশ সহায়ক শিল্পী সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবী সমিতি’, ‘ইয়োথ ফর বাংলাদেশ” সহ বিভিন্ন সংস্থার তৎপরতার সম্পর্কিত দলিলপত্র এই খণ্ডে মুদ্রিত হয়েছে। এই সময়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিলো ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে দিল্লীতে অনুষ্ঠিত তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ প্রশ্নে আন্তর্জাতিক সম্মেলন (পৃঃ ৪৬৫-৪৭৯)। এই সম্মেলনে বাংলাদেশের সমর্থনে সশস্ত্র বিশ্ব বাহিনী গঠনের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল (পৃঃ ৪৬৯-৭০)। এছাড়া ক্ষমতাসীন ও বিরোধী প্রতিটি রাজনৈতিক দল, শ্রমিক ও ছাত্র সংঘঠনেরই বাংলাদেশ প্রশ্নে প্রস্তাব, বিবৃতি, ও তৎপরতা সংক্রান্ত তথ্যসমূহ এ খণ্ডে সন্নিবেশিত হয়েছে। ভারতীয় সংবাদপত্রসমূহের ভূমিকারও উল্লেখ রয়েছে এই গ্রন্থে।

 এই খণ্ডের দলিলপত্রসমূহের সূত্র হিসেবে ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ ডকুমেণ্টস’ ১ম ও ২য় খণ্ড, ভারতের তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয় প্রকাশিত ‘ইয়ার্স অফ এণ্ডীভার’, লোকসভা ও রাজ্যসভার কার্যবিবরণী, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার কার্যবিবরনী, বিভিন্ন সংগঠনের মূল দলিল, পুস্তিকা ও প্রচারপত্র এবং বিশেষতঃ ভারতের বিভিন্ন সংবাদপত্রের প্রতিবেদনসমূহ ব্যবহৃত হয়েছে। রাজ্য ও লোকসভায় সদস্যদের ভাষণে ইংরেজী ছাড়া ব্যবহৃত হিন্দীসহ অন্যান্য ভাষা অনুবাদ বাংলায় মুদ্রন করা হয়েছে। কতিপয় স্থলে কার্যবিবরণীর কম গুরুত্বপূর্ণ ও অসংশ্লিষ্ট অংশ বাদ দেয়া বা সম্পাদনা করা হয়েছে।