পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

238 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড পূর্ব পাকিস্তানের গণমানসে বিভ্রান্ত সৃষ্টির জন্য প্রেসিডেন্ট পদের কনভেনশন লীগ মনোনীত প্রার্থী জনাব আইয়ুব খাঁ তাঁহার বক্তৃতায় বলিয়াছেন যে, ১৯৫৪ সনের যুক্তফ্রন্ট যেমন নেতাদের কোন্দলে’ ভাঙ্গিয়া গিয়াছিল, সম্মিলিত বিরোধী দলের অবস্থাও তাহা হইবে। জনাব আইয়ুব খাঁ এই বক্তব্য দ্বারা সত্য ঘটনাকে বিকৃত করিতেছেন মাত্র। ইহা অনস্বীকার্য যে, একটি পর্যায়ে যুক্তফ্রন্টের বিভিন্ন অঙ্গ দলগুলির নেতৃত্বের ভিতর নানারূপ বিরোধও দেখা দিয়াছিল। যুক্তফ্রন্টে ভাঙ্গনও ধরিয়াছিল। কিন্তু যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের পর হইতে শুরু করিয়া পূর্বাপর সব ঘটনা গোপন রাখিয়া শুধু ঐ বিভেদের কথা উল্লেখ করা সত্যের বিকৃতি মাত্র। ১৯৫৪ সনের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ দল যখন শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয় এবং পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে পাঁচকোটি অধিবাসী একবাক্যে যুক্তফ্রন্ট ও উহার ২১-দফা কর্মসূচী সমর্থন উদ্রেক হয়। দুনিয়ার সামনে ইহা স্পষ্ট হইয়া গিয়াছিল যে, পূর্ব পাকিস্তানে মুসলিম লীগ দলের কোন পাত্তাই নাই। অপরদিকে পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক বাস করে। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় লীগ মন্ত্রিসভার পদত্যাগ ও ইহার পুনর্গঠনই ছিল একমাত্র গণতান্ত্রিক পদ্ধতি। কিংবা অন্ততঃ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিভূরুপে পূর্ব পাকিস্তানের যে সব লীগ নেতা অধিষ্ঠিত ছিলেন, তাঁহাদের পদত্যাগ অপরিহার্য ছিল। পূর্ব পাকিস্তান হইতে সেই দাবীও উঠিয়াছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় শাসকবর্গ বিশেষ করিয়া তদানীন্তন গভর্নর জেনারেল গোলম মোহাম্মদ ও তাঁহার সাঙ্গপাঙ্গরা গণতান্ত্রিক রীতিনীতি বা জনমতের কোন তোয়াক্কা করেন নাই। গণসমর্থন হীন মুসলিম লীগ দলই কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন রহিয়া গেল। পূর্ব পাকিস্তানের লীগ নেতারাও উহা হইতে পদত্যাগ করিলেন না। গণতন্ত্রের এই চরম খেলাপ ও পূর্ব পাকিস্তানের লীগ নেতাদের যেন তেন প্রকারের ক্ষমতার গদী আকড়াইয়া থাকার নির্লজ্জ অভিলাষকে যুক্তিসঙ্গত বলিয়া জাহির করার জন্য বড় বড় ধনিকের মুখপাত্রগুলি তারস্বরে চীৎকার করিতে লাগিল যে, যেহেতু পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচন একটা প্রাদেশিক নির্বাচন মাত্র, সেই হেতু ইহার ফলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার রদবদলের কোন প্রয়োজন নাই। মার্কিনী সাম্রাজ্যবাদীরা ও ইহার সমর্থনে আগাইয়া আসিয়াছিল। পাকিস্তানে তদানীন্তন মার্কিনী রাষ্ট্রদূত মিঃ হিলড্রেথও কূটনৈতিক শীলতা বিসর্জন দিয়া এবং আমাদের দেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলাইয়া প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন যে, পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচনের ফলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় রদবদলের প্রয়োজন নাই’। এই সব ঘটনা হইতে বুঝা যায় যে, মার্কিনী সাম্রাজ্যবাদ এবং তাহদের সহযোগী দেশের বৃহৎ ধনিক চক্রের স্বার্থে, পরামর্শে ও সমর্থনে জনগণের রায় উপেক্ষা করিয়া কেন্দ্রে মুসলিম লীগ মন্ত্রিসভাকে বহাল রাখা হইয়াছিল। কিন্তু ইহাতেও সমস্যার সমাধান হইল না। কেননা পূর্ব পাকিস্তানে ইতিমধ্যে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা কায়েম হইয়াছিল। এই মন্ত্রিসভা ২১ দফা কর্মসূচী পূরণে ওয়াদাবদ্ধ ছিলেন। যুক্তফ্রন্টের নবনির্বাচিত আইন পরিষদ সদস্যদের অধিকসংখ্যক এক প্রকাশ্য বিবৃতি মারফত পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি (তখন এরূপ চুক্তি অনুষ্ঠানের আলোচনা চলিতেছিল) অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদও জানাইয়াছিলেন। কাজেই পূর্ব পাকিস্তানে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভাকে পদচ্যুত করা বিদেশী-দেশী কায়েমী স্বার্থবাদীদের পক্ষে জরুরী প্রয়োজন হইয়া পড়িয়াছিল। শুরু হইল পর্দার আড়ালে ষড়যন্ত্র। মার্কিনী সাম্রাজ্যবাদীদের অন্যতম প্রধান মুখপাত্র নিউইয়ক টাইমস’এর করাচীস্থ ভাড়াটিয়া সংবাদদাতা কালাহান এক আজগুবী খবর পরিবেশন করিল যে, পূর্ব পাকিস্তান যুক্তফ্রন্ট