পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

250 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড তবে তা শরীয়তে প্রমাণ হিসেবে গৃহীত হতে পারে। সুতরাং বর্ণনা থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় মহিলার নেতৃত্ব চলিতে পারে। (ইমদাদুল ফাতাওয়া তাতিৰ্ম্মায়ে ছানিয়া ১৬৯-৭০: ৫৪ বৎসর পূর্বে প্রদত্ত) (দৈনিক আজাদ, ২২শে অক্টোবর ১৯৬৪ ইং) মাওলানা সৈয়দ সোলেমান নদভী ছাহেব বলেনঃ রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালনের জন্য ইসলাম যেসব শর্তারোপ করেছে তা পালন করা কোন মহিলার পক্ষে দুঃসাধ্য। এ জন্যই নারী জাতিকে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শুধু এই একমাত্র কারণে যদি কেহ মনে করেন যে কোন অবস্থায়ই মহিলা মুসলমানদের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিতে পারেন না, তবে তা ভুল হবে। কারণ যখন জাতি কোন ফেতনা- ফাসাদের সম্মুখীন হয় এবং সে ফেতনা থেকে রক্ষা করতে পারে এমন কোন ব্যক্তিত্ব জনগণের দৃষ্টিতে কোন মহিলা ব্যতীত আর না থাকে, তবে উক্ত মহিলাকেই জাতির নেতৃত্ব প্রদান করতে হবে। (সীরাতে আয়েশা, ৩য় খ- ১১৩ পৃঃ ) হজরত মাওলানা মুফতী মোহাম্মদ শফী ছাহেব বলেনঃ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মহিলা রাষ্ট্রপ্রধান হওয়া ইসলামী শিক্ষা ও ঐতিহ্যের খেলাপ নহে। (দৈনিক জঙ্গ, ৩রা নভেম্বর, ১৯৬৪ ইং) হজরত মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী ছাহেব বলেনঃ এখন আমি এমন একটি বিষয়ে বলবো, যা খুব জোরে-শোরে তোলা হচ্ছে এবং কিছুসংখ্যক আলেম ও পীরদের দ্বারাও তা লোকসমক্ষে প্রচার করানো হচ্ছে- তা হলো রাষ্ট্রপ্রধান মহিলাকে নিযুক্ত করা। বলা হচ্ছে যে, ইসলামে কোন নারীকে মুসলমানদের নেতা বা রাষ্ট্রপ্রধান বানানো যায় না। এই ব্যাপারে বিশেষ করে আমার লেখা বই থেকে নানা উদ্ধৃতি পেশ করা হচ্ছে। আর আমি সময় ও সুযোগ দেখে ইসলামের নীতি পরিবর্তন করে ফেলি বলে আমার নামে অভিযোগ তোলা হচ্ছে। এর জওয়াবে আমি অবশ্যই জিজ্ঞেস করতে পারি যে, ইসলামের দৃষ্টিতে নারীকে মন্ত্রী ও পার্লামেন্টার সেক্রেটারী এবং বিদেশে রাষ্ট্রদূত বানানো যায় কি? ছেলে ও মেয়েদের সহ-শিক্ষা ব্যবস্থা কি ইসলামসম্মত? পুরুষ ও মেয়েলোকের একত্রিত হয়ে একই অফিসে কাজ করা কি জায়েজ? ষ্টেজে নেমে মেয়েদের নাচ, গান করা কি ইসলাম সমর্থন করে? উড়োজাহাজে যুবতি মেয়েরা সেবিকা হয়ে পুরুষ যাত্রীদের মধ্যে মদ পরিবেশন করে, তা কি জায়েজ.... আর এসব যদি নাজায়েজ কাজই হবে, তাহলে আজ পর্যন্ত এ ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশ মেনে কাজ করা হয়নি কেন? এ সব ব্যাপারে ইসলামের কথা স্মরণ করা হয়নি কেন? আর আজ নারীর রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার প্রশ্নেই কেবল ইসলামের দোহাই দেয়া হয় কেন? এ হচ্ছে পাল্টা প্রশ্ন। এর পরে আমি আসল বিষয়ে শরীয়তের দৃষ্টিভংগী আপনাদের সামনে পেশ করছি। একথা সর্ববাদীসম্মত যে, ইসলামে রাজনীতি আর রাষ্ট্ৰীয় কার্যকলাপ নীতিগতভাবে পুরুষদের কর্মক্ষেত্রের আওতার মধ্যে রাখা হয়েছে, এসবের দায়িত্ব পালনে মেয়েলোকদের শরীক করা হয়নি। মুসলমানদের আমীর বা নেতা হবার জন্যে যেসব শর্ত করা হয়েছে তার মধ্যে পুরুষ হওয়াটাও একটা শর্ত, একথা অস্বীকার করা যায়