পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

262 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ১৯৫৮ সালে কতিপয় সমর নেতা কর্তৃক পাকিস্তানের মৌলিক প্রতিষ্ঠানসমূহের বাতিল, আমাদের পররাষ্ট্রনীতির পরিবর্তন, জাতীয় চিন্তার ক্ষেত্রে ভারতের সাথে সেপ্টেম্বরের যুদ্ধের ফলাফল, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে জনগণের মধ্যে পুঞ্জীভূত অসন্তোষ এবং এই অবস্থা পরিবর্তনের ইচ্ছাসহ ১৯৫৭ সালে ন্যাপের জন্মলগ্ন হইতে এ যাবৎ সংঘটিত ঘটনাবলী সম্পর্কে ১৯৫৭ সালে আমরা সুস্পষ্টভাবে যে বক্তব্য তুলিয়া ধরিয়াছিলাম, তাহার সত্যতাই প্রমাণ হইয়াছে। ইতিহাস আমাদের চিন্তাধারার যৌক্তিকতা ও ঘটনাপ্রবাহ জাতীয় সমস্যাবলী সম্পর্কে আমাদের বিশ্লেষণ নির্ভুল বলিয়া প্রমাণ করিয়াছে। ফেডারেল সরকারের সাথে জনগণের সরাসরি যোগাযোগকে অস্বীকার করার ফলে সেপ্টেম্বর যুদ্ধের পরে এক গুরুতর অবস্থার সৃষ্টি হয়। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব ও তাঁহার দলের যে কোন জাতীয় প্রতিনিধিত্বমূলক চরিত্র নাই তাহা উদঘাটিত হইয়াছে। এবং জনগণের বিরুদ্ধ যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার ভীতি প্রদর্শন ব্যতিরেকে কোন বিস্ফোরণোন্মুখ রাজনৈতিক পরিস্থিতির মোকাবেলা করিতে তাহারা অক্ষম। ইহা অত্যন্ত দুভার্গজনক, গত ৮ বছর যাবৎ দেশ যে গণপ্রতিনিধিত্বহীন স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার যাতাকালে নিষ্পিষ্ট হইতেছে, ইহা তাহারই প্রত্যক্ষ ফল। খাদ্যের ব্যাপারে ক্রমবর্ধমান সঙ্কট আমাদের অর্থনীতির দুর্বল চরিত্রকে প্রকট করিয়া তুলিয়া ধরিয়াছে। চড়া হারের সুদে কোটি কোটি ডলারের সাহায্যে গ্রহণ করিয়াও সরকার জনসাধারণের অর্থনৈতিক সম্পদ দ্রুত ও ক্রমবর্ধমান ভাবে পুঞ্জীভূত হইয়া ওঠা এবং আমলাতন্ত্রের একটি নূতন ও শক্তিশালী ভূস্বামী ও শিল্প অভিজাত শ্রেণীতে রূপান্তর এমন এক বিরাট সমস্যার সৃষ্টি করিয়াছে সমাজতন্ত্রের ভিত্তিতে ছাড়া যাহারা মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। বহুদিন পূর্বেই ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ইহা উপলব্ধি করিয়াছিল যে, পাকিস্তানের দুই অংশের অর্থনৈতিক জীবনের উন্নতি সাধনে ব্যর্থ হইয়াছে। মুষ্টিমেয় কয়েকটি পরিবারের হাতে দেশের অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীভূত হওয়া এবং পূর্ব পাকিস্তানের শিল্পোন্নয়ন তুরান্বিত করা উচিত। শিল্প উন্নয়নের সুফলগুলি ও অর্থনৈতিক উন্নতি কতিপয় এলাকায় অথবা মুষ্টিমেয় পরিবারের মধ্যে যেন সীমাবদ্ধ না হয়, তাহার নিশ্চয়তা বিধানও একান্ত আবশ্যক। যাহাদের বুঝিবার সদিচ্ছা আছে তাহদের প্রত্যেকের জন্য আমাদের পার্টির পক্ষ হইতে ভবিষ্যৎ আন্তর্জাতিক সম্পকের রূপরেখা বর্ণিত রহিয়াছে। চীন, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, তুরস্ক ও অন্যান্য আফ্রো- এশীয় দেশ প্রমাণ করিয়াছে যে, পাকিস্তান তাহাদের মৈত্রিক উপর নির্ভর করিতে পারে। সাম্রাজ্যবাদীদের স্বরূপ উদঘাটিত হওয়ার সাথে সাথে আমাদের বৈদেশিক সম্পকের এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকা ঘেঁষা রূপরেখা নূতন করিয়া অনুমোদিত হইয়াছে। ঘটনা প্রবাহ বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির ভূমিকার অকাট্য যৌক্তিকতা হাজির করিয়াছে। অনেক মূল্যের বিনিময়ে দেশ আজ বুঝিতে পারিয়াছে যে, রাওয়ালপিন্ডি হইতে পাকিস্তানকে রক্ষা করা হইবে, উচ্চৈঃস্বরে ঘোষিত এই তত্ত্ব বাস্তব অথবা কার্যোপযোগী নয়। পাকিস্তানের দুই অংশের প্রতিরক্ষার জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের এবং প্রতিরক্ষা নীতির সমন্বয় সাধনজনিত প্রয়োজনাদিসাপেক্ষে পূর্ব পাকিস্তানে নৌ-সদর দফতর স্থানান্তরের অত্যাবশ্যকতার কথা ১৯৫৭ সালের প্রণীত ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির গঠনতন্ত্রে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হইয়াছে। আমরা পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে সরকারী খাতে মূল ও ভারী শিল্প স্থাপনের দাবীও করিয়াছিলাম। যদি আমাদের প্রস্তাব গ্রহণ করা হইত এবং আমলাতন্ত্র উহাকে উপেক্ষা না করিত তবে