পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

265 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড বিরুদ্ধে প্ররোচিত করিয়া সব চাইতে প্রতিক্রিয়াশীল ও দুর্নীতিপরায়ণ এমন সকল রাজনীতিককে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করায়, যাহাদের উন্নতি বৈদেশিক পুঁজির সাথে সহযোগিতা ও সম্পর্কের উপর নির্ভরশীল। পাকিস্তানে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরা প্রকাশ্যে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি দরদ প্রকাশ করিতে শুরু করিয়াছে। কিছুকাল পূর্বে তদানীন্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মিঃ ম্যাকনগী পূর্ব পাকিস্তান সফরকালে প্রকাশ্যে পূর্ব পাকিস্তানীদের সাহায্য করার প্রস্তাব করিয়াছিলেন। দক্ষিণ ভিয়েৎনামে একদা মার্কিন শিখন্ডী নগো দিন দিয়েমের অপসারণ ও হত্যা ইহাই প্রমাণ করে যে, সাম্রাজ্যবাদীরা এতটুকু দ্বিধা করে না। ইহাতে কোন সন্দেহ নাই যে, বিশ্বের এই অঞ্চলে মার্কিন বিশ্বরণপরিকল্পনাকে সাহায্য না করার জন্য বর্তমান সরকারের প্রধানের উপর মার্কিনীরা সন্তুষ্ট নহে। শত্রর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য আমাদের নিজস্ব শক্তি সম্পর্কে ধারণা রাখা প্রয়োজন। আমাদের জনগণ সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে ততটা সচেতন নহে। বিগত পাক-ভারত যুদ্ধ জনগণকে অন্ততঃ মার্কিনবিরোধী করিয়াছে। অবশ্য ইহার অর্থ এই নয় যে, তাঁহারা সাম্রাজ্যবাদবিরোধী হইয়া গিয়াছেন। কিন্তু এখন এই মার্কিনবিরোধী মনোভাবকে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মনোভাবে পরিণত করা সহজতর হইয়াছে। আমাদের দেশে সাম্রাজ্যবাদী অবস্থানের ফলশ্রুতি হিসেবে জনগণ অধিক ট্যাক্স, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির অগ্নিমূল্য, বিভিন্ন ফসলের নিম্নমূল্য ও চরম দুনীতির চাপ নিশ্চয় অনুভব করিয়া থাকেন। ট্যাক্স, ব্যবসায় একচেটিয়া আধিপত্য, দুনীতি প্রভৃতি সমস্যার উপর আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণকে বর্তমান অদৃশ্য সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে সামিল করার ও তাঁহাদের সাম্রাজ্যবাদবিরোধী করিয়া তোলার যথেষ্ট সুযোগ রহিয়াছে। কাশীর এই সমস্যার দ্বারা যে ব্যাপক আবেগের সৃষ্টি হইয়াছে এই কমিটি তাহা পরিপূর্ণরুপে অনুধাবন করে এবং তাহার সহিত ঐকমত্য। কাশীরবাসীর আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার সমর্থন বিশ্বের স্বাধীনতা ও শাস্তির সংগ্রামের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ বলিয়াই আমরা মনে করি। যে পর্যন্ত কাশীরবাসী তাঁহাদের নিকট গ্রহণযোগ্য নহে এমন একটি সরকারী ব্যবস্থার অধীনে নিস্পিষ্ট হইতে থাকিবেন এবং তাঁহাদের ভাগ্য নির্ধারণের অধিকার প্রদান সম্পর্কে ১৯৪৯ সালে ভারত, পাকিস্তান ও জাতিসংঘের মধ্যে যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হইয়াছিল তাহা অস্বীকার করা হইবে ততদিন পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ায় অনিশ্চয়তা বিরাজ করিবে এবং ভারত ও পাকিস্তান তাহাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করিয়া তাহদের জনগণের দুখ-দুর্দশার অবসানকল্পে সর্বতোভাবে তাহাদের শক্তি নিয়োগ করিতে পরিবে না। উপসংহার জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে চাপাইয়া দেওয়া একটি অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের অধীনে দেশ আজ নিস্পিষ্ট হইতেছে। দুনীতি জাতির অস্থিমজ্জায় প্রবেশ করিয়াছে। পুঁজিপতি ও সমাজবিরোধীরা তাহাদের জীবনের চরম সুযোগ লাভ করিতেছে। এক রাজনৈতিক শাসরুদ্ধকর ও বুদ্ধিবৃত্তির স্থবিরতার পরিবেশে মানুষের মন আজ দ্বিধাগ্রস্ত, মৌলিক স্বাধীনতার অস্বীকৃতি দেশের মূলে আঘাত হানিতেছে এবং সন্দেহ ও হতাশার এক পরিবেশে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহ আমাদের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপের সুযোগ লাভ করিতেছে। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির কেন্দ্রীয় কাৰ্যনিৰ্বাহী সংসদ জনগণের ঐক্য, প্রদেশসমূহের স্বায়ত্বশাসন, পাকিস্তানের সংহতি, ফেডারেল ধরনের পালামেন্টারী গণতন্ত্র, বর্তমান স্বৈরাচারী একনায়কত্বের উচ্ছেদ সাধন \G