পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

282 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড করিয়া তোলাই প্রতিবাদের একমাত্র পথ। "রাজবন্দীর মুক্তি’ ও ‘স্বায়ত্তশাসনের জনপ্রিয় দাবীর আওয়াজ তুলিয়াছিলেন- এই অপরাধে আমাদের ১১ জন শহীদ ভাইয়ের বুকের তাজা খুনে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের রাজপথ লাল হইয়াছে। তাঁহাদের এই দেশাত্মবোধ ও কোরবানী সকল কালের সকল মানুষের মুক্তি-পথের আলোকবর্তিকারূপে চিরকাল বিরাজ করবে। শহীদানের অমর স্মৃতির প্রতি আমরা লাখো তসলিমাত জানাই। দুঃখভারাক্রান্ত তাঁহাদের পরিবার-পরিজনের প্রতি আমরা আন্তরিক সমবেদনা জানাইতেছি। বাংলা ভাষার করিয়াছেন-তাঁহাদের সে আত্মহুতি ব্যর্থ হয় নাই। আজ গণতান্ত্রিক অধিকার ও স্বায়ত্বশাসনের দাবীতে যে নির্ভীক সেনানীরা আত্মহুতি দিয়াছেন, তাঁহাদের মহান ত্যাগও বিফল হইবে না। শহর-বন্দর-নগর-পল্লীর ঘরে ঘরে আজ প্রতিটি নরনারী শহীদ স্মরণে গণতান্ত্রিক অধিকার, স্বায়ত্তশাসন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার বৈপ্লবিক শপথ গ্রহণ করিবে। ৭ই জুনের নির্মম হত্যাকান্ড জালিমশাহীকে জনগণ হইতে আরও বিচ্ছিন্ন করিয়া দিয়াছে। প্রতিটি লোক আজ শাসকচক্রের গণবিরোধী চরিত্র সম্পকে ওয়াকেবহাল ও অধিকতর সচেতন হইয়া উঠিয়াছে। ৭ই জুন আরো প্রমাণিত করিয়াছে যে, জনগণ আজ জালিমশাহীর মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের পথে পা দিয়াছে। কিন্তু গণতান্ত্রিক শিবিরের নেতৃত্বে আজও অনৈক্য বিরাজিত জনতার এই ঐক্য গণতান্ত্রিক শিবিরের নেতৃত্বের প্রতি চ্যালেঞ্জস্বরূপ। তাই আমরা আশা করি রাজনৈতিক দলসমূহ জনতার এই চ্যালেঞ্চ গ্রহণপূর্বক তাঁহাদের ভিতরকার অনৈক্য দূর করিয়া ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট গঠনপূর্বক জনতার সংগ্রামকে সফল পরিণতির দিকে আগাইয়া নিবেন। জনগণ হইতে বিচ্ছিন্ন স্বৈরাতন্ত্রী সরকারের এই নির্মম হামলার মোকাবিলায় গণতান্ত্রিক দল ও দেশপ্রেমিক ব্যক্তিদের উপর এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব বর্তইয়াছে। গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহ ঐক্যবদ্ধ না হইলে গণআন্দোলনের সফল পরিণতি সুদূরপরাহত। বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহের বর্তমান অনৈক্য ও বিচ্ছিন্নতা ক্ষমতাসীনদের পক্ষেই সহায়ক হইবে। কোন দলের একক প্রচেষ্টায় সর্বাত্মক আন্দোলন গড়িয়া তোলা সম্ভবপর নয়। সুতরাং বর্তমান মুহুর্তের ঐতিহাসিক কৰ্তব্য হইতেছে ঐক্য- গণতান্ত্রিক শিবিরের ঐক্য। আমরা নিম্নোক্ত দাবীসমূহের ভিত্তিতে সকল দলের স্বীকৃত নিম্নতম কর্মসূচী প্রণয়ন ও দলমত নির্বিশেষে জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়িয়া তুলিবার জন্য সকল রাজনৈতিক দল, গণ-প্রতিষ্ঠান ও জনগণের প্রতি আবেদন জানাইতেছি। দাবীসমূহঃ (1) দেশের সর্বোচ্চ বিচার বিভাগ ও সত্যিকার গণপ্রতিনিধি সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিশন মারফত ৭ই জুনের গুলিবর্ষণ ও আনুপূর্বিক ঘটনার তদন্ত, দোষীদের আদর্শ শাস্তির ব্যবস্থা, নিহত আহতদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দান। এই উপলক্ষে আটক ও সাজাপ্রাপ্ত সকলের মুক্তি, ১৪৪ ধারাসহ আরোপিত সকল বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার। (2) সকল রাজবন্দীদের মুক্তি, হুলিয়া প্রত্যাহার, জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার করা, দমনমূলক সকল বিধি-নিষেধ বাতিল করা। (3) পূর্ব পাকিস্তানের আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনঃ দেশরক্ষা, পররাষ্ট্রনীতি ও মুদ্রা- মাত্র এই তিনটি ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে রাখিয়া বাকি সকল ক্ষমতা পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান আঞ্চলিক সরকারদ্বয়ের হাতে ন্যস্ত থাকিবে। এক ইউনিট রদ করিয়া পশ্চিম পাকিস্তানে ভাষা, কৃষ্টি ও ভৌগলিক ঐক্যের ভিত্তিতে সরহদ, বেলুচিস্তান, সিন্ধ ও পাঞ্জা- এই চার পৃথক পৃথক প্রদেশ গঠন করা। (4) ফেডারেল ও পার্লামেন্টারী শাসন ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা