পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

302 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড হে গর্ভনর বাহাদুর এ দেশের কৃষক শ্রমিক তথা মেহনতী মানুষের রক্ত নিংড়াইয়া বিমানবন্দরের যে অনুপম প্রাসাদ গড়িয়া উঠিয়াছে তার শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত লাউঞ্জে দাঁড়াইয়া কৃষকের সৃষ্ট দিগন্ত প্রসারিত শ্যামল বনানীর শ্যামলিমাই তুমি দেখিয়াছ। তুমি দেখ নাই তার অন্তরালের নিরন্ন বিবস্ত্র আর তিলে তিলে মৃত্যুপথযাত্রী শীর্ণ কৃষকেরা শোষণ জর্জর পাণ্ডুর চেহারা। যাহারা তোমাদের জন্য সৃষ্টি করিয়াছে নয়নাভিরাম প্রাচুর্যের সমারোহ তাহদের দিকে একবার ফিরিয়া তাকাইবার প্রয়োজনীয়তাও তোমরা অনুভব কর নাই। তোমাদের আরাম-আয়েশ আর বিলাস বাসনের স্বার্থে তোমরা শোষক গোষ্ঠী এ দেশের কৃষককুলের ঘাড়ে চাপাইয়া দিয়াছ ৯৩ কোটি টাকার ঋণের বোঝা তোমাদের শিল্পপতি গোষ্ঠী বিগত ২০টি বছর ধরিয়া এদেশের কৃষক-শ্রমিকের রক্তের বিনিময়ে গড়িয়া তুলিয়াছে বিরাট বিরাট পুঁজি আর মুনাফার পাহাড়। কৃষককে তোমরা দাও নাই তার অর্থকরী ফসল-পাট, তামাক আর কুসাইয়ের মূল্য। কৃষকের দীর্ঘকালের দাবী পাটের ন্যায্যমূল্য ৪০ টাকার দাবীকে তোমরা প্রহসনে পরিণত করিয়াছ। বাহ্যিক লোক দেখানো কায়দায় তোমরা পাটের তথাকথিত সর্বনিম্ন মূল্য ২৬ টাকা থেকে ২৮ টাকা ধাৰ্য্য করিয়াছ কিন্তু ঐ নিধারিত মূল্যে পাট ক্রয়ের জন্য কলকারখানার মালিক আর বড় বড় ব্যবসায়ীদের বাধ্য করার কোন ব্যবস্থা তোমরা কর নাই। তোমরা সুকৌশলে কৃষক সমাজকে ১৫/১৬ টাকা মূল্যে পাট বিক্রয় করিতে বাধ্য করিয়া একচেটিয়া ধনিক গোষ্ঠীর সস্তা দরে পাট ক্রয়ের সুযোগ করিয়া দিয়াছো। অতিরিক্ত করের বোঝা চাপাইয়া দিয়া তোমাদের শাসক-শোষক গোষ্ঠীর বিলাস ব্যসনের সুবন্দোস্ত করিয়াছ। চলতি সনেও তোমরা একর প্রতি ৫০ পয়সা জমির খাজনা বৃদ্ধি করিয়াছ। তারপরেও তোমাদের শোষণ লিঙ্গার কমতির কোন লক্ষণ আমরা দেখি না। তোমাদের রাজস্ব মন্ত্রী এই সেদিনও বলিয়াছেন যে, এ দেশের জমির খাজনা নাকি অন্য দেশের তুলনায় কম। তোমরা এ দেশের কৃষক সমাজের ঘাড়ে আরও ট্যাক্স খাজনার বোঝা চাপাইতে চাও। কী ধৃষ্টতা! কী দুঃসাহস তোমাদের ৪০/৫০ টাকা মণ দরে চাউল কিনিয়া খাইবার ক্ষমতা যখন দেশের শতকরা ৯২টি কৃষক পরিবারের নাই তখন তাদের প্রাসাচ্ছাদনের কথা তোমরা একবারও ভাব না। তোমরা তোমাদের লগ্নির টাকা আদায়ের জন্য কৃষকদের উপর যখন লক্ষ লক্ষ সার্টিফিকেট জারি কর এমনকি তাদের বিরুদ্ধে বডি-ওয়ারেন্ট পর্যন্ত জারি করিতে তোমরা দ্বিধা কর না। তখন কি তোমরা মুহুর্তের জন্যও ভাবিয়া দেখিয়াছ যে তোমাদের জীবনে প্রাচুর্যের সমারোহ সৃষ্টি যে কৃষক সমাজ, সেই কৃষক সমাজ আজ তিলে তিলে মৃত্যুর পথে চলিয়াছে। বন্ধুগণ! আমি জানি কৃষক জীবনের এই দুরাবস্থার চিত্র আজ শোষক গোষ্ঠীর সামনে তুলিয়া ধরা নিরর্থক। তাই আমাদের কৃষককুলের সমস্যাবলী আমি আপনাদের সামনেই উপস্থিত করা সঙ্গত মনে করি। ন্যাপের দৃষ্টিতে আইয়ুব সরকারঃ ন্যাপের দৃষ্টিতে আইয়ুব সরকার হইতেছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সাহায্যপুষ্ট বড় বুর্জোয়া ও সামন্তবাদী শ্রেণী-একনায়ক সরকার, একই শ্রেণী স্বার্থের প্রতিরক্ষক সরকার। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, দেশী বড় বুর্জোয়া এবং সামন্তবাদ এই ত্রিশক্তি এক এবং অবিভাজ্য। এই তিন শক্তির শাসনের অবসানের মধ্য দিয়াই আমাদের দেশের জনগণ তাহাদের সত্যিকারের গণতান্ত্রিক সরকার কায়েম করিতে পারে। আজিকাল মূল রাজনৈতিক প্রশ্নঃ বন্ধুগণ, দেশী প্রতিক্রিয়াশীল শাসক গোষ্ঠী ও তাহদের সহযোগী মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে আমাদের গণতান্ত্রিক মহলের কিছুটা মোহমুক্তি ঘটিলেও আজিকার কর্তব্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে তাহদের বিভ্রান্ত কাটে নাই।