পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

379 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ বাংলা ভাষার উপর আক্রমণের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দৈনিক ১১ অক্টোবর, ১৯৬৮ একাডেমিক কাউন্সিল সমীপে হাসান হাফিজুর রহমানের খোলা পাকিস্তান চিঠি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কাউন্সিল সমীপে একটি খোলা চিঠি হাসান হাফিজুর রহমান ংলা বর্ণমালা এবং বানান সংস্কার বিষয়ক প্রস্তাব পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ এমন উৎসাহে এবং কর্মতৎপরতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, যা তাঁদের সক্রিয়তার ইতিহাসে অভিনব বলে অনায়াসেই আখ্যায়িত হতে পারে। অবশ্য কি প্রস্তাব পাস করা হয়েছে তার স্বাক্ষরিত বিবরণ জনসাধারণের সম্মুখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজ পর্যন্ত পেশ করার প্রয়োজনবোধ করেননি। তবে নান সূত্র থেকে যতটুকু জানা যায় তাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ উদ্যমের পেছনে যে অন্ততঃ বাংলা ভাষার বর্তমান লিখিত রুপের খোল-নলচে পাল্টাবার আয়োজন রয়েছে সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। এতে কি সুবিধা-অসুবিধা হবে প্রশ্ন বাদ দিলেও একথা তর্কাতীত যে, প্রস্তাবিত সংস্কারটি বহুমুখী, ভয়াবহভাবে জটিল ও ব্যাপক এবং এর বাস্তবায়ন একা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ম নয় এবং একে স্বার্থক করে তুলতে বহুজনের হাত লাগলেও কয়েক বছরের গন্ডিতে তা সম্পন্ন হবে কিনা এবং তারপরেও নানা বিভ্রান্তি ও জটিলতার জড় এড়িয়ে উক্ত ফরমূলার নির্দেশিত মান এককভাবে এদেশের ভাষার লিখনরীতিতে প্রতিষ্ঠিত হবে কিনা সে ব্যাপারেও সন্দেহের অবকাশ থেকে যায়। অন্যদিকে জানা গেছে, কোন প্রকার সংস্কার ছাড়াই উর্দুকে পশ্চিম পাকিস্তানের শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে সর্বস্তরে পুরোপুরি চালু করার বাঞ্ছিত সিদ্ধান্তটি ইতিমধ্যেই গৃহীত হয়েছে এবং অচিরেই তা চালুও হবে, যদিও উর্দু বর্ণমালায় তথাকথিত জটিলতা বাংলার তুলনায় কোন অংশেই কম নয়। তাদের এই প্রশংসনীয় ও দৃষ্টান্ত মূলক উদ্যোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের একটি মাত্র জিজ্ঞাসা যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাকে শিক্ষার সর্বস্তরে চালু করার ব্যাপারে কতদূর অগ্রসর হয়েছেন? বাংলা ভাষার বর্ণমালা এবং বানান সংস্কারের বেলায় যে উৎসাহ ও কর্মতৎপরতা তার দেখাচ্ছেন, বাংলাকে শিক্ষার সার্বিক মাধ্যম করার ক্ষেত্রে তা আদৌ স্পষ্ট নয়। তবে কি এই ভাবতে হবে যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ সম্পূর্ণ নিজ দায়িত্বেই বাংলা ভাষার বর্তমান রূপকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে একেবারেই উপযুক্ত মনে করতে পারছেন না এবং সেই সংস্কারের সাহায্যে একে যোগ্য করে তুলতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন? এবং সে কারণেই কি শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলা চালু করার আশু কর্তব্য পালনের পরিবর্তে বাংলা ভাষার সংস্কার তাদের কাছে অধিকতর প্রয়োজনীয় হয়ে দেখা দিয়েছে? তাই যদি হয়, এ সংস্কারের মহান দায়িত্ব তারা সম্পন্ন তারা কিভাবে করবেন, এতে কত সময়ই বা তারা নেবেন এবং অতঃপর কবে নাগাদ বাংলা ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে সর্বস্তরে চালু করতে সক্ষম হবেন কিংবা পরিণামে আদৌ তার প্রয়োজন হবে কিনা- এসব বিষয়ে অবশ্যই তাঁদের দেশবাসীকে সঠিক ও সৎভাবে জানানো উচিত। পক্ষান্তরে বাংলাকে অনিশ্চয়তা সংক্রান্ত আমাদের এই সন্দেহ যদি অমূলক হয়, তাহলেও বাংলা বর্ণমালা ও বানান সংস্কার এবং বাংলাকে শিক্ষার মাধ্যমরুপে সর্বস্তরে পুরোপুরি চালু করার মতো দুটি আপাতবিরোধী দুরুহ ও জটিল দায়িত্ব একই সঙ্গে বাস্তবায়নের অনুকূল কি অলৌকিক মন্ত্রসিদ্ধি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ লাভ করে বসে আছেন, সে বিষয়েও দেশবাসীকে জানানো তাঁদের অবশ্যই কর্তব্য। বিশেষতঃ বাংলা ভাষা এবং শিক্ষার