পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

385 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড করতো। কাজেই উপনিবেশবাদবিরোধী জাতীয় বিপ্লব এবং সামন্তবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক বিপ্লব অর্থাৎ জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব হওয়া উচিত ছিল এদেশের বিপ্লবের চরিত্র। এ জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব বুর্জোয়া শ্রেণীর সম্পন্ন করতে অক্ষম। কাজেই ঐতিহাসিকভাবে সর্বহারা শ্রেণী ও তার পার্টির দায়িতু এ বিপ্লব সম্পন্ন করা। কাজেই এ বিপ্লব হওয়া উচিত ছিল জাতীয় গণতান্ত্রিক অথবা নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব যার লক্ষ্য সমাজতন্ত্র ও কমিউনিজম। বিশ্ব বিপ্লবের ইহা একটি অংশ। এ নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব পরিচালনা ও সম্পন্ন করার জন্য সর্বহারা শ্রেণীর পার্টির নিম্নলিখিত শর্ত পালনের প্রয়োজন ছিলঃ (ক) “সুশৃংখলিত, মার্কসবাদ লেনিনের তত্ত্বে সুসজ্জিত, আত্মসমালোচনার পদ্ধতি প্রয়োগকারী ও জনগণের সাথে সংযুক্ত এমন একটি পাটি; (খ) এমন একটি পার্টিরনেতৃত্বাধীন একটি সৈন্যবাহিনী; (গ) এমন একটি পার্টির নেতৃত্বে সমস্ত বিপ্লবী শ্রেণী ও বিপ্লবী দলের একটি যুক্তফ্রন্ট।” ভারতীয় কমিউনিষ্ট পার্টি উপরোক্ত শর্ত পালনে ব্যর্থ হয়; ফলে বুর্জোয়া ও সামন্তবাদীরা জাতীয় সংগ্রামের নেতৃত্ব গ্রহণ করে, নিজেদের শ্রেণী:স্বার্থে অবৈরী সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়ে ধর্মের ভিত্তিতে শ্রমিক-কৃষক শ্রেণীকে নিজেদের পেছনে ঐক্যবদ্ধ করে এবং ভারতকে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়! সভাপতি মাওসেতুঙ বলেছেন, “বিপ্লবী পার্টি হচ্ছে জনসাধারণের পথ প্রদর্শক; বিপ্লবী পার্টি যখন তাদেরকে ভ্রান্তপথে চালিত করে তখন কোন বিপ্লবই স্বার্থক হতে পারে ন৷] ‘স্বাধীনতা’ উত্তরকাল পূর্ববাংলার সামাজিক বিকাশের জন্য নিম্নলিখিত মূল দ্বন্দ্বগুলো বিদ্যমানঃ (1) পূর্ববাংলার জনগণের সাথে পাকিস্তানী উপনিবেশবাদের জাতীয় দ্বন্দ্ব। (2) পূর্ববাংলার বিশাল কৃষক জনতার সথে সামন্তবাদের দ্বন্দ্ব। (3) পূর্ববাংলার জনগণের সাথে (ক) সাম্রাজ্যবাদ বিশেষতঃ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের, (খ) সাম্রাজ্যবাদ বিশেষতঃ সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের ও (গ) ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের জাতীয় দ্বন্দ্ব। (4) পূর্ববাংলার বুর্জোয় শ্রেণীর সাথে শ্রমিক শ্রেণীর দ্বন্দ্ব। দ্বন্দ্বসমূহের বিশ্লেষণ প্রথমঃ পূর্ব বাংলার জনগণের সাথে পাকিস্তানী ঔপনিবেশবাদের জাতীয় দ্বন্দ্বঃ মুসলিম বুর্জোয়া ও সামন্তবাদের মাঝে পাঞ্জাব, সিন্ধু, সীমান্ত প্রদেশ, দিল্লী লক্ষণেী, বোম্বাই প্রভৃতি স্থানে বৃটিশ সমর্থক বুর্জোয়া ও সামন্তবাদীরা বাঙালী বুর্জোয়া ও সামন্তবাদীদের (যারা খুবই অল্পসংখ্যক) চেয়ে বহুগুণ বিকশিত থাকায় স্বাভাবিকভাবেই পাকিস্তান আন্দোলনের নেতৃত্ব কুক্ষিগত করে।