পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

386 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড পূর্ববাংলার হিন্দু বুর্জোয়া শ্রেনী ও সামন্তবাদীরা মুসলিম বুর্জোয়া, কৃষক শ্রমিকের ওপর অর্থনৈতিক শোষণ ছাড়াও ধর্মীয় নিপীড়িন চালাতো। বঙ্গভঙ্গ আইনের মাধ্যমে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ববাংলা একটি আলাদা প্রদেশ হলে অর্থনৈতিক শোষণ ও ধর্মীয় নিপীড়িন এর কিছুটা লাগব হবে জেনে বাঙালী মুসলিম বুর্জোয়া ও সামন্তবাদীরা তা সমর্থন করে । কিন্তু নিজ বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হবে বলে হিন্দু বুর্জোয়া ও সামন্তবাদীরা এ বিভাগের বিরোধীরা করে; ফলে বঙ্গভঙ্গ রদ হয়। কাজেই মুসলিম বুর্জোয়া ও সামন্ত শ্রেণীর বিকাশের দুটি বাধা ছিল, একটি হল বৃটিশ উপনিবেশবাদ আর একটি হিন্দু বুর্জোয়া ও সামন্তবাদিদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও ধর্মীয় নিপীড়ন। কাজেই স্বাধীনতা আন্দোলন কমিউনিষ্ট পার্টি পরিচালিত না হওয়ায়, পূর্ববাংলার সৃষ্টি ঐতিহাসিকভাবে প্রয়োজন ছিল। পূর্ববাংলার বুর্জোয়া ও সামন্তবাদীরা পাকিস্তানের মাধ্যমে নিজেদের শ্রেণী বিকাশ ঘটাতে সক্ষম মনে করে পাকিস্তান আন্দোলন সমর্থন করে এবং মুসলিম শ্রমিক-কৃষকদের পাকিস্তান দাবীর পিছনে ঐক্যবদ্ধ করে। তারা পাকিস্তানে যোগ দেয় এবং এভাবে পূর্ববাংলা পাকিস্তানের প্রদেশে পরিণত হয়। স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্বে অবাঙালী বুর্জোয়া ও সামন্তবাদীদের হাতে থাকায় বৃটিশ উপনিবেশবাদীরা রাষ্ট্রক্ষমতা তাদের নিকট হস্তান্তর করে। কেন্দ্রীয় রাজধানী করাচিতে স্থাপন, বৃটিশ উপনিবেশবাদের সামরিক আমলা দ্বারা রাষ্টযন্ত্রের প্রধান উপাদান সশস্ত্র বাহিনী গঠন এবং বেসামরিক আমলা দ্বারা রাষ্টযন্ত্রের অন্যান্য অংশ চালু করা (এই সকল সামরিক আমলাদের অধিকাংশই বৃটিশ উপনিবেশবাদ সমর্থক অবাঙালী ছিল) প্রভৃতির মাধ্যমে এই অবাঙালি বুর্জোয়া ও সামন্তবাদীরা রাষ্টযন্ত্রের একচ্ছত্র মালিকানা লাভ করে এবং নিজেদের শ্রেণী বিকাশের অবাধ সুযোগ পায়। এ শাসক শ্রেণী পূর্ববাংলার স্বতন্ত্র জাতিয় ও অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য স্বয়ত্তশাসন কিংবা আতুনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রদানের পরিবর্তে একে অবাধ শোষণের জন্য প্রথম থেকেই প্রচেষ্টা চালিয়ে আসে। এ শাষকশ্রেণী রাষ্টক্ষমতার মাধ্যমে পূর্ববাংলার পাট, চা, চামড়া প্রভূতির অর্থ দ্বারা বিকাশ লাভ করে এবং এ বিকাশ তুরান্বিত করার জন্য সাম্রাজ্যবাদ বিশেষতঃ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সাথে সিয়াটাে, সেন্টো প্রভৃতির সামরিক চুক্তি ও বিভিন্ন প্রকার অর্থনৈতিক চুক্তি সম্পাদন করে। এভাবে পাকিস্তান আধা-উপনিবেশে পরিণত হয়। সম্প্রতি এ শাসক শ্রেণী সংশোধনবাদ বিশেষতঃ সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের সাথে নানা প্রকার অর্থনৈতিক চুক্তি সম্পাদক করেছে। পূর্ববাংলায় পাট, চা, চামড়া, কাগজ প্রভৃতির অর্থ দ্বারা, সস্তা শ্রমশক্তি দ্বারা, প্রায় সাত কোটি মানুষের বাজার এবং সাম্রাজ্যবাদের সাহায্যে পাকিস্তানী বুর্জোয়া শ্রেণী একচেটিয়া পুঁজিপতিতে পরিণত হয়। তারা পূর্ববাংলাকে শাসন ও শোষণের একটি স্থায়ী ক্ষেত্রে পরিণত করে। পূর্ব বাংলাকে শাষন ও শোষণের একটি বিরাট বাধা হলো তার স্বতন্ত্র জাতিসত্তা এবং ভাষা ও স্বাতন্ত্রের প্রধান উপাদান। জাতি হিসাবে পূর্ববাংলার স্বাতন্ত্র মুছে দেয়ার জন্য এ পাকিস্তানী শাসক শ্রেণী বাংলা ভাষার পরিবর্তে উর্দু ভাষা প্রচলনের হীন প্রচেষ্টা চালায়। এ হীন প্রচেষ্টাকে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন নস্যাৎ করে দেয়। বর্তমানেও এ শাসক শ্রেণী বাংলাভাষা পরিবর্তনের হীন প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এ পাকিস্তানী বুর্জোয়া এ সামন্তবাদী শ্রেণীর বিকাশের জন্য ক্রমশঃ পূর্ববাংলার সম্পদ, সস্তা শ্রমশক্তি ও প্রায় সাত কোটি মানুষের বাজার অপরিহার্য হয়ে পড়ে।এভাবে বৃটিশ উপনিবেশবাদের প্রত্যক্ষ উপনিবেশ থেকে পূর্ববাংলা পাকিস্তানের অংশ হিসাবে কিছু কালের জন্য আধা-উপনিবেশ পরিণত হলেও এখানে প্রথম থেকেই পাকিস্তানী বুর্জোয়া ও সামন্তবাদী শাসকগোষ্ঠীর জাতীয় নিপীড়ন ও শোষণ বিদ্যমান ছিল। এ শাসকশ্রেণী নিজেদের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে পূর্ববাংলার ওপর জাতীয় নিপীড়ন বৃদ্ধি করে এবং তাদের বিকাশ একচেটিয়া রূপ