পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

390 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড বর্তমানে সাম্রাজ্যবাদ ও সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের যুগে বুর্জোয়ারা এ বিপ্লব সম্পূর্ণ করতে পারে না। নিজেরাই কিছুদিন পরে সাম্রাজ্যবাদ ও সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের দালাল হয়ে যায়। এ বিপ্লব সম্পূর্ণ করার মত একটি শক্তিই রয়েছে, তা হচ্ছে সর্বহারা শ্রেণী ও তার পার্টি সর্বহারার নেতৃত্বে পরিচালিত বিপ্লবের লক্ষ্য ধনতন্ত্র নয়, সমাজতন্ত্র। বিপ্লব সর্বহারার নেতৃত্বে পরিচালিত বলে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব বা নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব বলে পরিচিত হবে, যা বিশ্ববিপ্লবের একটি অংশ। এ বিপ্লবের একটি চরিত্র হলো সশস্ত্র বিপ্লব। পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক শাসক শ্রেণীর রাষ্ট্রযন্ত্রের মূল উপাদান সামরিক বাহিনী, পুলিশ ও আইন এবং এদের সাহায্যে ঔপনিবেশিক শাসক শ্রেণী পূর্ব বাংলাকে শাসন ও শোষণ করছে। এ নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করতে হলে সর্বহারা শ্রেণীর নেতৃত্বে শ্রমিক-কৃষক ও অন্যান্য দেশপ্রেমিক শ্রেণী ও স্তরকে ঐক্যবদ্ধ করে সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে এই রাষ্ট্রযন্ত্রকে ধবংস করে সর্বহারা শ্রেণীর নেতৃত্বে কৃষক-শ্রমিক মৈত্রীর ভিত্তিতে এবং অন্যান্য দেশপ্রেমিক শ্রেণী ও স্তরের সমন্বয়ে নয়া রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করতে হবে। সভাপতি মাও-এর ভাষায় বন্দুকের নলের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করতে হবে। এ বিপ্লবের আর একটা চরিত্র হলো দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রাম। এ বিপ্লবে দ্রুত বিজয়ের সম্ভাবনা খুব কম। কারণগুলো হচ্ছে পূর্ববাংলার শ্রমিক-কৃষক জনগণের অনৈক্য অবস্থা, সঠিক মার্কসবাদী-লেনিনবাদী ও মাওসেতুঙ চিন্তানুসারী পার্টির অভাব, সংশোধনবাদী ও নয়া সংশোধনবাদী পার্টি কর্তৃক জনগণকে বিপথে পরিচালনা, জনগণের মাঝে প্রতিক্রিয়াশীল আদর্শের অভাব। পক্ষান্তরে, ঔপনিবেশিক শক্তি একত্রিত, শাসনক্ষমতা সুদৃঢ়, বিডি প্রথার মাধ্যমে গ্রাম পর্যন্ত তাদের শাসন ব্যবস্থা বিস্তৃত এবং সাম্রাজ্যবাদ, সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ, এবং সম্প্রসারণবাদ তাদের সাহায্য করবে। তাই বর্তমানে শক্তির ভারসাম্য পাকিস্তানী উপনিবেশবাদের পক্ষে। এ অবস্থা পরিবর্তন করতে সুদীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। কাজেই পূর্ববাংলার জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব দীর্ঘস্থায়ী দুরুহ যুদ্ধের মাধ্যমেই সম্পন্ন হবে। এ বিপ্লবের আর একটি চরিত্র হলো গ্রাম্য এলাকা দ্বারা শহর ঘেরাও এবং পরে শহর দখল। সভাপতি মাওসেতং বলেন, “নিয়ম অনুসারে বিপ্লব আরম্ভ হয়, গড়ে ওঠে এবং জয়ী হয় ঐ সকল স্থানে, যেখানে প্রতিবিপ্লবী শক্তিগুলো অপেক্ষাকৃত দুর্বল।” কাজেই, গ্রাম্য এলাকায় গিয়ে কৃষকদের গেরিলা যুদ্ধের জন্য জাগ্রত করে গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে গ্রাম্য এলাকা দখল করতে এবং ঘাটি স্থাপন করতে হবে। শহরগুলো দখলকৃত গ্রাম্য এলাকা দ্বারা ঘেরাও করতে হবে এবং পরে শহর দখল করতে হবে। এ বিপ্লবের আর একটি চরিত্র হলো ঐক্যফন্ট গঠন জাতীয় পতাকা উর্ধ্বে তুলে ধরে, জাতীয় সংগ্রামের ভিত্তিতে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা অপিরহার্য।[১] শ্রমিক-কৃষক মৈত্রীর ভিত্তিতে, সর্বহার শ্রেণীর নেতৃত্বে পাকিস্তানী উপনিবেশবাদ বিরোধী সকল দেশপ্রেমিক শ্রেণী ও স্তরকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। ঐক্যফ্রন্টের মাঝে সর্বহারা শ্রেণীর পার্টি অবশ্যই আদর্শগত, রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক স্বাধীনতা রক্ষা করবে এবং ‘স্বাধীনতা’ ও উদ্যোগ গ্রহণের নীতিতে অটল থাকবে এবং নিজের নেতৃত্বের ভূমিকার জন্য জিদ ধরবে। কাজেই ঐক্যফ্রন্টে সর্বহারা শ্রেণীর নেতৃত্ব স্বাধীনতা ও উদ্যোগ গ্রহণ থাকতে হবে আর তা থাকার একটি মাত্র গ্যারন্টি হচ্ছে সর্বহারা পার্টির নেতৃত্বে একটি গণফৌজ। সভাপতি মাও বলেছেন, “ গণফৌজ না থাকলে জনগণের কিছুই থাকবে না।” কাজেই ঐক্যফ্রন্ট প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক শর্ত হচ্ছে গণফৌজ।