পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খণ্ড
416
শিরোনাম সূত্র তারিখ
ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষঃ লাঠিচার্জ ও কাঁদুনে গ্যাস
নিক্ষেপ
দৈনিক পাকিস্তান ১৯ জানুয়ারী ১৯৬৯

ছাত্র-পুলিশে সংঘর্ষঃ লাঠিচার্জ ও কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ

(ষ্টাফ রিপোর্টার)

 গতকাল শনিবার পুলিশ ১৪৪ ধারা ভঙ্গকারী ছাত্রদের উপর কয়েক দফা লাঠিচার্জ ও কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে। ধর্মঘটী ছাত্ররা মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। ফলে ছাত্রদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি এক পর্যায়ে এমন আকার ধারণ করে যে, যখন ছাত্র ও পুলিশের মধ্যে এক ঘণ্টারও অধিক সময় ধরে কাঁদুনে গ্যাস ও ইষ্টক বিনিময় হতে দেখা যায়। ছাত্ররা শত্রুবার পুলিশের লাঠিচার্জ ও কাঁদুনে গ্যাস বর্ষণের প্রতিবাদে গতকাল শনিবার ঢাকায় ছাত্র ধর্মঘট আহবান করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এই ধর্মঘটে যোগ দেয়। ছাত্ররা ই পি আর টিসির একটি ডবল ডেকার বাসে অগ্নিসংযোগ করে।

 সন্ধ্যার পর ইকবাল হল ও জিন্নাহ হলে ইপি আর বাহিনী ঢুকে ছাত্রদের মারধর করে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

 পুলিশের লাঠিচার্জ ও কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপের ফলে কয়েকজন আহত হয়েছে। শতকরা ঢাকা শহরে ৩৪ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মঘটী ছাত্র-ছাত্রীদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সভা অনুষ্ঠানের পর ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। ফলে ছাত্ররা পুলিশের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।

 ছাত্রদের শোভাযাত্রা বন্ধ করার জন্য পুলিশ বাহিনী প্রথমে কাঁদুনে গ্যাস প্রয়োগ করে। এর জবাবে ছাত্ররা ইষ্টক বর্ষণ শুরু করে। পুলিশের রায়টকারের বারংবার রাস্তায় টহল দিয়ে বেড়াতে থাকে এবং ছাত্রদের উপর লাল পানি নিক্ষেপ করতে থাকে। ছাত্রদের ইটে রায়টকারের একদিকের কাঁচ ভেঙ্গে যায়। ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সড়কের উপর বেঞ্চ, টেবিল ও চেয়ার ইত্যাদি জমা করে ব্যারিকেট তৈরী করে।

 গতকাল এন এস এফ-সহ ছাত্র প্রতিষ্ঠান একযোগে ধর্মঘটে যোগ দেয়। গতকাল প্রথমে থেকেই বহুসংখ্যক ছাত্রকে বাঁশ ও লাঠি দ্বারা সুসজ্জিত অবস্থায় দেখা যায়। বেলা ১২-১০ মিনিট থেকে প্রায় সোয়া দু’টো পর্যন্ত ছাত্র-পুলিশ এক খণ্ডযুদ্ধ অব্যাহত থাকে। এই সময়ে কাঁদুনে গ্যাসের তীব্রতায় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার দিকে থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। মাঝখানে পুলিশের কাঁদুনে গ্যাস ষ্টক শেষ হয়ে যাওয়ায় পুনরায় তা সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়। প্রবল কাঁদুনে গ্যাসে অসুস্থ হলে প্রায় ২৫ জনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

 রোকেয়া হলের সামনে যে পুলিশ বাহিনী মোতায়েন রাখা হয় তাদের উদ্দেশ্যে হলের ভিতর থেকে ছাত্রীরাও ইষ্টক বর্ষণ শুরু করলে পুলিশ সেখানেও কয়েক রাউণ্ড কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এখানে ছাত্রীদের প্রতি পুলিশ বাহিনীর অশোভন আচরণ করতে দেখা যায়। পুলিশের অশোভন গালি-গালাজ থেকে রোকেয়া হলের শিক্ষকরাও রেহাই পাননি।