পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খণ্ড
426

 দুপুর ১২টা ২০মিনিটের সময় বিশ্ববিদ্যালয় নতুন কলা ভবন থেকে শোভাযাত্রা বের হয়ে নীলক্ষেত রোড, নিউমার্কেট, আজীমপুর, লালবাগ, উর্দু রোড, চকবাজার, ইসলামপুর, সদরঘাট, নবাবপুর, জিন্নাহ এভিনু, তোপখানা রোড প্রদক্ষিণ করে বিকাল সাড়ে তিনটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত হয় এই দীর্ঘ পথ অতিক্রমকালে শোভাযাত্রার কলেবর বৃদ্ধি পায় এবং বিভিন্ন এলাকার নাগরিকগণ করতালি ও পুষ্প বর্ষণের মাধ্যমে শোভাযাত্রীদের অভিনন্দন জানায়।

বুধবারের ছাত্র ধর্মঘট

 সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রামে কমিটির আহবানে গত বুধবার ছাত্র ও গণহত্যা সহকারী নির্যাতন ও ব্যাপক হারে গ্রেফতারের প্রতিবাদে প্রদেশব্যাপী ছাত্র ধর্মঘট ও শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।

 এই দিন ঢাকা শহরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীগণ ধর্মঘট করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলাভবনে এক বিরাট ছাত্র সভায় মিলিত হয়। ডাকসুর সহ-সভাপতি জনাব তোফায়েল আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ছাত্র জনতার দাবী মেনে নিয়ে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানান হয়।

 সভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে বলা হয় যে, ছাত্র-জনতার দাবী মেনে নেয়া না হলে ক্ষমতাসীনদের সাথে কোন বৈঠক জনসাধারণ ও ছাত্রসমাজের নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না।

 সভায় ছাত্র, শ্রমিক ও কৃষক নেতাসহ সকল রাজবন্দীদের মুক্তিদান, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাসহ সকল রাজনৈতিক মামলার গ্রেফতারী পরোয়ানা ও হুলিয়া প্রত্যাহার, জরুরী আইন, দেশরক্ষা আইন ও নিরাপত্তা আইন বাতিল, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রদান, ইত্তেফাক ও অন্যান্য সংবাদ পত্রের উপর থেকে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার, বাকস্বাধীনতা, ব্যক্তিস্বাধীনতা প্রদান সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার, ছাত্র, কৃষক ও শ্রমিকের দাবী পূরণ পুলিশের গুলিতে নিহতদের পরিবারবর্গকে ক্ষতিপূরণ দানের দাবী জানানো হয়।

 সভায় গৃহীত অপর দুটি প্রস্তাবে প্রাদেশিক গভর্ণর জনাব আবদুল মোনেম খানের অপসরণ এবং ছাত্র, শ্রমিক ও কৃষকদের নির্যাতনের জন্য সরকারী কর্মচারীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবী করা হয়।

 সভাশেষে এক বিরাট শোভাযাত্রা শহরের বিভিন্ন রাজপথে প্রদক্ষিণ করে।