পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

438 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড সান্ধ্য আইনের স্তদ্ধতা ভঙ্গ করিয়া ঢাকা নগরীর প্রচন্ড বিস্ফোরণঃ ছাত্র-জনতার আকস্মিক বিক্ষোভ মিছিলের দৃপ্ত পদভারে সমগ্র শহর প্রকম্পিত। গত রাত্রে রাজধানী ঢাকা নগরীতে অকস্মাৎ সান্ধ্য আইনের কঠিন শৃংখল এবং টহলদানকারী সামরিক বাহিনীর সকল প্রতিরোধ ছিন্নভিন্ন করিয়া হাজার হাজার ছাত্র-জনতা আকস্মিক জলোচ্ছাসের মত পথে নমিয়া আসে এবং শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি ও ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে প্রচন্ড বিক্ষোভ ফাটিয়া পড়ে। এই অবস্থার মধ্যে আজ সকাল সাতটা হইতে বৈকাল ৫টা পর্যন্ত সান্ধ্য আইনের যে বিরতি ঘোষণা করা হইয়াছিল, তাহা অকস্মাৎ প্রত্যাহার করা হয় এবং কোনরুপ বিরতি ছাড়াই পরবর্তী ২৪ ঘন্টার জন্য সান্ধ্য আইন জারি করা হয়। খোজ লইয়া জানা যায়, গতকল্য রাজশাহীতে জনৈক অধ্যাপকের হত্যা এবং সান্ধ্য আইন জারির খবর এখানকার ছাত্র ও সর্বশ্রেণীর নাগরিকের মনে প্রবল অসোন্তষের সঞ্চার করে। তদুপরি গতকালকার সংবাদপত্রে আগরতলার ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও শেখ মুজিবের মুক্তি সম্পর্কে আশাবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরেও শেখ সাহেব গোল টেবিল বৈঠকে যোগদানের উদ্দেশ্যে গতকাল ঢাকা ত্যাগ না করায় ছাত্র-জনমনে এই বিশ্বাস দানা বাঁধিয়া উঠে যে, শেখ সাহেবের মুক্তির ব্যাপারে সরকার আন্তরিক নহেন। বর্তমান প্রচন্ড গণজাগরণের পটভূমিতে উপরোক্ত ঘটনা ছাত্র-জনতাকে ক্ষিপ্ত করিয়া তোলে এবং তাহারা সান্ধ্য আইনের অনুশাসন উপেক্ষা করিয়া দাবী দাওয়ার প্রতিধ্বনি করার জন্য অকস্মাৎ রাস্তায় নামিয়া আসে। কোন রকম পূর্ব ঘোষণা বা পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই একই সঙ্গে শহরের এক প্রান্ত হইতে অন্য প্রাপ্ত পর্যন্ত এইভাবে ছাত্র-জনতাকে রাস্তায় বাহির হইতে দেখিয়া সকলেই বিস্মিত হয়। রাত্রি ৮টার পর হইতে মধ্য রাত্রি পার হইয়া যাওয়া পৰ্য্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থানে সমানে বিক্ষোভ চলিতে থাকে। সামরিক বাহিনীর গাড়ীর শব্দ এবং বিক্ষিপ্তভাবে বন্দুকের গুলির আওয়াজ পরিবেশকে আতঙ্কগ্রস্ত করিয়া তোলে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে অভিযোগ করা হয় যে, হাসপাতালের একটি এম্বুলেন্স আহত অবস্থায় রাস্তায় পড়িয়া থাকা লোকজন বা মৃতদেহ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার চেষ্টা করিলে টহলদানকারী সশস্ত্র বাহিনী বাধা প্রদান করে। হাসপাতালে বুলেটবিদ্ধ ৩ ব্যক্তিকে ভর্তি করা হয় এবং রাত্রি ২টার পর এমুলেন্সের জন্য হাসপাতালের সামনে টেলিফোন আসিতে থাকে।