পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

441 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড পশ্চিম পাকিস্তানের এক ইউনিট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এক ইউনিট ভেঙ্গে ফেলার জন্য সেখানে একটা দাবী উঠেছে। তারা এক ইউনিট চায় না। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে পশ্চিম পাকিস্তানের জনসাধারণের ভোট নেয়া হোক তারা যদি এক ইউনিট না চায় তবে তা ভেঙ্গে দিতে হবে। এক ইউনিট ভেঙ্গে দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রদেশগুলোকেও স্বায়ত্তশাসন প্রদানের তিনি দাবী জানান। শেখ মুজিব বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানে প্রদেশগুলো নিয়ে একটা ফেডারেশন গঠন করতে হবে। জনমতের বিরুদ্ধে কোন কিছু চালিয়ে দেয়া চলবে না। চাকুরী, অর্থনীতি, শিল্প ইত্যাদি ক্ষেত্রে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্যের উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজধানী পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থিত। ফলে সেখানকার লোক সবরকম সুবিধা পাচ্ছে। দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৫৫ জন পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসী হওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকারে বিভিন্ন চাকুরীতে পূর্ব পাকিস্তানীয় সংখ্যা শতকরা দশজনের কম। কেন্দ্রীয় সরকারের সকল অফিস-আদালত শুধু রাজধানীতে। তাই ব্যবসা বাণিজ্যও সেখানে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। ফলে এই প্রদেশে মূলধন গড়ে উঠছে না। দেশরক্ষা খাতের ব্যয় সম্পকে তিনি বলেন এই খাতের শতকরা আশি ভাগ অর্থই পশ্চিম পাকিস্তানের ব্যয় হয়। কারণ সামরিক সদর দফতর সেখানে অবস্থিত। তিনি বলেন পশ্চিম পাকিস্তানের মজলম এবং পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নাই। ............... ১৯৬৫ সালে ভারতের সাথে সংঘর্ষের সময় পূর্ব পাকিস্তানের অসহায় অবস্থার উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই অবস্থার অবসানের জন্যই লাহোরে জাতীয় সম্মেলনে আমি দলের পক্ষ হতে ৬-দফা দাবী পেশ করেছিলাম। তাতে আমাদের বিছিন্নতাবাদী আখ্যা দেয়া হয়েছিল। আমরা দেশের জনসংখ্যার শতকরা ৫৬ জন। আমরা কেন বিছিন্ন হয়ে যাব? আমরা চাই ন্যায্য অধিকার। ................. তিনি বলেন,........গুটিকয়েক ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও আমলার জন্য আমরা পাকিস্তান অর্জনের সংগ্রাম করিনি। এ দেশের চাষী, মজুর, ছাত্র সকল মানুষের বাঁচার জন্য আমরা সংগ্রাম করেছিলাম। কিন্তু জালেমের পর জালেম এসেছে দেশে শাসন ক্ষমতায়। জনগণ মুক্তি পায়নি।.................. জগন্নাথ কলেজসহ বিভন্ন প্রভিন্সিয়ালাইড করার তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন এদেশের সব মুনাফা লুটেপুটে খেলে এমন দিন আসবে যখন কলকারখানা সবই বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে। শ্রমিক নির্যাতনের তিনি নিন্দা করেন। রবীন্দ্র সংগীত প্রচারে সরকারী নীতির তিনি তীব্র সমালোচনা করেন। বেতার কেন্দ্রসমূহকে তিনি হুশিয়ার করে দিয়ে বলেন রবীন্দ্রনাথ বাংলার মানুষের কবি। তার গান রেডিওতে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। ...... শান্তি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ হতে পারে এরুপ কাজ হতে বিরত থাকার জন্য তিনি জনগণকে অনুরোধ জানান এবং সরকারকে উস্কানীমূলক কাজ হতে বিরত থাকতে বলেন। এ প্রসঙ্গে তিনি শহরের প্রতি মহল্লায় এবং মহকুমা ও জেলায় সংগ্রাম সমিতি গঠনের জন্য আহবান জানান।