পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

456 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড জনগণতান্ত্রিক অর্থনীতি রুপরেখাঃ সমাজতন্ত্রের অর্থনীতির লক্ষকে সম্মুখে রাখিয়া বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে আমুল পরিবর্তন করিয়া জনগণতান্ত্রিক অর্থনীতি কায়েম করা হইবে। এই জনগণতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ভিত্তিতে জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করার জন্য সম্পূর্ণ স্বাধীন, স্বয়ংসম্পূর্ণ ও আত্মনির্ভরশীল জাতীয় অর্থনীতি গড়িয়া তোলা হইবে। ইহার রুপরেখা হইবে নিম্নরুপঃ রাষ্ট্ৰীয় মালিকানাঃ (১) সকল সাম্রাজ্যবাদী পুঁজি বাজেয়াপ্ত করা, সকল প্রকার সাম্রাজ্যবাদী ঋণ অস্বীকার করা, সাম্রাজ্যবাদী এজেন্টদের সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা। (২) সকল বৃহৎ পুজি, যাহার চরিত্র আমলা-মুৎসুদি এবং যাহা পূর্ব বাংলার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বিজাতীয় তাহা বাজেয়াপ্ত করা। (৩) যাহারা প্রতিবিপ্লবী ও বিপ্লবের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করিবে তাহদের সমুদয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা। (৪) জোতদার, মহাজন, দুনীতিবাজ, আমলা ও তাহদের দালালদের সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা। (জোতদারের বাজেয়াপ্তিত জমি গরীব ও ভূমিহীন কৃষকদের সধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হইবে ) (৫) সকল ব্যাঙ্ক ও বীমা কোম্পানী রাষ্ট্রয়ত্ব করা হইবে এবং রাষ্ট্র নিজেই তাহা পরিচালনা করিবে। (৬) সকল প্রাকৃতিক সম্পদ রাষ্ট্রের সম্পদ হিসাবে গণ্য হইবে, মধ্যস্বত্ব প্রথা বিলোপ করিয়া রাষ্ট্র নিজেই ইহা রক্ষা করিবে বরং নিজের তত্ত্বাবধানে সম্পদ আহরণ করিবে। (৭) রেলওয়ে, জাহাজ বিমান কোম্পনী, অস্ত্রের কারখানা, বিদুৎ শিল্প ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শিল্প রাষ্ট্রের মালিকানায় থাকিবে। (৮) যে সকল শিল্প ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বর্তমানে সরকারী বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে আছে, তাহা সম্পূর্ণরুপে রাষ্ট্রের মালিকানায় রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে থাকিবে। (৯) পাটশিল্পকে রাষ্ট্রয়ত্ব করা হইবে এবং নিজের মালিকানায় ইহা পরিচালনা করিবে। কৃষিনীতিঃ (১) “খোদ” কৃষকের হাতে জমি” এই নীতির ভিত্তিতে ভূমি ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করা হইবে। বিপ্লবের পর সমস্ত জমি পুনরায় জরিপ করিয়া বর্তমানে জমি রেকর্ড ও খতিয়ানের ব্যাপারে যে সমস্ত ভুলভ্রান্তি রহিয়াছে রাষ্ট্র তাহা দূর করার ব্যবস্থা করিবে। (২) জোতদার প্রথার উচ্ছেদ সাধন করা হইবে। জোতদার ও তাহদের দালালদের সমস্ত জমি ও চাষের যন্ত্রপাতি রাষ্ট্র দখল করিবে এবং উহা বিনামূল্যে ভূমিহীন ও গরীব কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করবে। (৩) সরকারের সকল খাস জমি রাষ্ট্র দখল করিবে এবং গরীব ও ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করিবে। (৪) কৃষকদের মধ্যে বন্টনকৃত জমির প্রতি তাহদের স্বত্বাধিকারের স্বীকৃতি ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করিবে। (৫) সকল প্রকার বর্গা প্রথা বিলোপসাধন করা হইবে। রাষ্ট্রকর্তৃক নির্ধারিত দৈনিক মজুরী দিয়া ক্ষেতমজুর নিয়োগ করা যাইবে। কিন্তু চাষের যন্ত্রপাতি ও কৃষি উৎপাদনে আবশ্যকীয় অন্যান্য সামগ্রী জমির মালিককে বহন করিতে হইবে।