পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

457 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড (৬) স্থানীয় পরিস্থিতিসাপেক্ষে জমির মালিকদের পরিবার প্রতি সর্বোচ্চ জমি সংরক্ষণের সীমা নিৰ্দ্ধারণ করিয়া দেওয়া হইবে। ধনী কৃষকের নিকট হইতে এলাকা অনুযায়ী রাষ্ট্র নির্দিষ্ট উচ্চতম সীমার অতিরিক্ত জমি ক্রয়ের ব্যবস্থা করিবে। (২) খাদ্যদ্রব্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যমানের সহিত সামঞ্জস্য বিধান করিয়া ক্ষেতমজুরদের বাঁচার উপযোগী নিম্নতর মজুরী নির্ধারণকরা হইবে। (৮)অকৃষক বিধবা ( এই অকৃষক বিধবা বলিতে কোন কৃষক পরিবারের বিধবাকে বুঝাইবে না )। শিক্ষক, কুটিরশিল্পী, ছোট দোকানদার প্রভৃতির হাতে বর্তমানে যে জমি রহিয়াছে সেই সম্পর্কে জনগণতান্ত্রিকরাষ্ট্রের নীতি হইবেঃ (ক) মুক্ত এলাকায় যদি ইহাদের অবস্থান হয় (যেখানে শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে কৃষকের বিপ্লবী সরকার প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে ) সেই এলাকায় অথবা সারা পূর্ব বাংলাব্যাপী জনগণতান্ত্রি করিয়া লইবে এবং গরীব ও ভূমিহীন কৃষকদের নিকট বিতরণ করবে। কিন্তু রাষ্ট্র তাহদের জীবন ধারণের জন্য বিকল্প কর্মসংস্তান অথবা তাহারা যে পেশায় নিযুক্ত রহিয়াছেন তাহাতে তাহারা পরিবারের ভরণ-পোষণের উপযোগী আয় যাহাতে করিতে পারেন রাষ্ট্র অবশ্যই তাহার ব্যবস্থা করিবে। (খ) জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব সুম্পন্ন হওয়ার পূর্বে অকৃষক বিধবা, শিক্ষক, কুটির শিল্প, ছোট দোকানদার, শহরে কার্য্যরত শ্রমিক, স্বল্প আয়ভোগী ব্যক্তিদের জমি যে অবস্তায় রহিয়াছে সেই অবস্থাতেই থাকিবে। কিন্তু বর্গাপ্রথার মাধ্যমে জমি চাষাবাদ করিতে দেওয়া হইবে না-উপযুক্ত মজুরী দিয়া ক্ষেতমজুর নিয়োগ করিয়া জমি চাষ করা যাইবে। (৯) (ক) খাজনা প্রথার সম্পূর্ণ বিলোপসাধন করা হইলে খাজনার পরিবর্তে উৎপাদনের উপর কৃষি আয়কর প্রথা চালু করা হইবে। ফসল না হইলে অথবা উৎপাদন পর্যাপ্ত পরিমাণে না হইলে আয়কর দিতে হইবে না। ফসল উৎপাদনের পর কৃষকদের সাধারণভাবে খাওয়া-পরার পর যাহা থাকিবে, তাহার উপর আয়কর ধার্য হইবে। কৃষকদের আয়কর ফসলে লওয়া হইবে। এই আয়কর ধার্য্য করিবে মূলতঃ কৃষক প্রতিনিধি সমবায়ে গঠিত ইউনিয়ন গণপরিষদ। (খ) গরীব ও মাঝারী কৃষকের সকল বকেয়া খাজনা ও সুদসহ ঋণ মওকুফ করা হইবে। (গ) নদী শিকস্তি জমির জন্য কোন আয়কর দিতে হইবে না এবং ইহার উপর কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা হইবে না বা নদী-নালা জমি-জমা ও ভিটামাটি হইতে উচ্ছেদপ্রাপ্ত কৃষকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হইবে। (১০) হাট-বাজার, ঘাট, বন, পাহাড় বিল প্রভৃতিতে যে ইজারাদারী, মহালদারী ও কনট্রাক্ট প্রথা চালু রহিয়াছে এবং মধ্যস্বত্ব ভোগ করিবার যে অধিকার বর্তমান ব্যক্তি বিশেষকে দেওয়ার বিধান প্রচলিত রহিয়াছে, তাহা বিলোপ করা হইবে। (খ) হাট-বাজারে জনসাধারণের খুচরা বেচা-কেনার উপর তোলা বা কর বিলুপ্ত করা হইবে। রাষ্ট্র নিজেই ইহা সংরক্ষণ করিবে এবং জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা ইহা পরিচালনার ব্যবস্থা করিবে। হাট-বাজার যথাযথ সংরক্ষণ ও উহার উন্নয়ন সাধনের জন্য পাইকারী ব্যবসায়ের উপর কর ধাৰ্য্য করা হইবে। (গ) বন, পাহাড়, বিল, হাওর, নদী সকল প্রাকৃতিক সম্পদ রাষ্ট্রের সম্পত্তি হিসাবে গণ্য হইবে। যাহারা কাটিবার এবং বিলে ও জলাশয়ে মাছ দরিবার অনুমতি প্রদান করিবে।