পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

458 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড (১১) রাষ্ট্র সকল প্রকার মহাজনী বাতিল করবে। মহাজনদের সকল সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করা হইবে। (খ) রাষ্ট্র কৃষকদের প্রয়োজনসাপেক্ষে চাষের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও দ্রব্যসামগ্রী যথা গরু, বীজ, সার, আধুনিক চাষের যন্ত্রপাতি প্রভৃতি ক্রয় করার জন্য বিনা সুদে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী ঋণ প্রদান করিবে। (১২) রাষ্ট্র কৃষকদের জীবনধারণের মনোন্নয়ন, উৎপাদন বৃদ্ধি ও সামগ্রিক স্বার্থে আধুনিক যান্ত্রিক চাষ ও যৌথ সমবায় প্রথা প্রবর্তনের জন্য তাহদের উৎসাহিত করিবে যাহতে কৃষকের নিজেরা স্বেচ্ছামূলকভাবে এই পথ গ্রহণ করে। কৃষকেরা স্বেচ্ছায় যৌথ সমবায় প্রথার রাজী হইলে তাহদের রাষ্ট্রের পক্ষ হইতে সস্তা দামে সকল প্রকার সামগ্রী সরবরাহ করা হইবে। খাস জমি বন্টনের ব্যাপারে যৌথ সমবায় অংশগ্রহণকারী কৃষককে অগ্রাধিকার দেওয়া হইবে। এই সমস্ত যৌথ সমবায় অবশ্যই কৃষকদের নির্বাচিত কমিটি দ্বারা পরিচালিত হইবে-রাষ্ট্র এই ব্যাপারে কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করিবেনা। (১৩) কৃষকদের ফসলের জন্য প্রকৃতির উপর যাহতে নির্ভরশীল হইয়া পড়িতে না হয় সেইজন্য রাষ্ট্রের পক্ষ হইতে আধুনিক জলসেচের ব্যবস্থা করা হইবে। (১৪) বন্যা নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নটিকে বিপ্লবোত্তর অবস্থায় রাষ্ট্র প্রথম ও প্রধান বিষয় বলিয়া গণ্য করবে। বিশ্বের সকল দেশ বিশেষ করিয়া গণচীনের সাহায্য লইয়া আমাদের দেশের অফুরন্ত জনশক্তির পূর্ণ সদ্ব্যবহার করিয়া পূর্ব বাংলার বন্যা সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান করা হইবে। (১৫) কৃষকেরা তাহাদের অর্থকরী ফসল যেমন পাট, ইক্ষু, তামাক প্রভৃতির ন্যায্য দাম যাহাতে পাইতে পারে, রাষ্ট্র তাহার নিশ্চয়তা বিধান করিবে। বিশেষ করিয়া কৃষক পাটের ন্যায্য দাম যাহাতে পাইতে পারে সেইজন্য রাষ্ট্র সরাসরি কৃষকের নিকট হইতে পাট ক্রয় করিয়া তাহদের প্রতিনিধি হিসাবে আন্তর্জাতিক বাজারে তাহা পথ এই যে, পাট বেচাকেনার ও অন্যান্য খরচ বাদে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রাপ্ত পূর্ণ মূল্য রাষ্ট্র কৃষককে প্রদান করিবে। দেশের শিল্পে ব্যবহার্য্য পাটের মূল্যও নির্ধারিত হইবে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রাপ্ত পূর্ণ মূল্য রাষ্ট্র কৃষককে প্রদান করবে। দেশের শিল্পে ব্যবহার্য পাটের মূল্যও নির্ধারিত হইবে আন্তর্জাতিক বাজারে পাটের মূল্যের সহিত সঙ্গতি বিধান করিয়া। এইভাবে কৃষকের অর্থনৈতিক বুনিয়াদকে দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করা হইবে। (১৬) শিল্পে ব্যবহার্য্য কৃষিপণ্য উৎপাদনের ব্যাপারে রাষ্ট্র সর্বপ্রকার উৎসাহ ও সাহায্য প্রদান করিবে। শিলপনীতিঃ (১) জনগণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের চরিত্র হইবে সামজতান্ত্রিক এবং ইহা সামগ্রিকভাবে জাতীয় অর্থনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হইবে। কিন্তু জনগণের জীবিকাকে নিয়ন্ত্রণ করিতে পারে না এমন ব্যক্তিগন মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত শিল্প ও পুঁজিবাদী উৎপাদনে রাষ্ট্র বাধা প্রদান করিবে না। (২) রাষ্ট্ৰীয় মালিকানায় ও পরিচালনায় মূল ও ভারী শিল্প গড়া হইবে। (৩) বিদ্যুৎশক্তি, কৃষি যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য আবশ্যকীয় কল-কব্জা নির্মানের ব্যাপারে অগ্রাধিকার প্রদান করা হইবে। (৪) বিলাশদ্রব্য উৎপাদন নিরুৎসাহ করা হইবে। (৫) (ক) ক্ষুদ্র শিল্প, যথা-তাঁত ও লবণ শিল্প সংরক্ষণ করার জন্য রাষ্ট্র যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে। (খ) পূর্ব বাংলার ঐতিহ্যবাহী তাঁত ও বয়ন শিল্প যাহাতে রক্ষা পাইতে পারে ও উন্নত শিল্পে পরিণত হইতে পারে,