পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

463 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড (৭) বাংলা ভাষাকে উচ্চ শিক্ষার মাধ্যম করা হইবে। বিদেশী ভাষায় জ্ঞান-বিজ্ঞান বইসমূহ দ্রুত বাংলা ভাষায় অনুবাদের ব্যবস্থা করা হইবে। পূর্ব বাংলার অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতিরা যাহাতে তাহদের মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করিতে পারে তাহার ব্যবস্থা করা হইবে। (৮) রাষ্ট্রভাষা হইবে বাংলা এবং প্রতিটি রাষ্ট্ৰকাজে বাংলা ভাষা ব্যবহার করা হইবে। (৯) যে সমস্ত তরুণ তাহদের শিক্ষা জীবন অসমাপ্ত রাখিয়া বিপ্লবে আত্মনিয়োগ করিবে, বিপ্লবোত্তর যুগে তাহদের শিক্ষা ও প্রতিভার বিকাশের জন্য রাষ্ট্র সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে। (১০) বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার চরম অবহেলিত শিক্ষক সম্প্রদায় বিপ্লবের পরে জনগণতান্ত্রিক সমাজে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী হইবেন। তাঁহারা যাহাতে নির্ভাবনায় তাঁহাদের শিক্ষকতা ও গবেষণা কাৰ্য্য এবং প্রতিভার বিকাশ সাধন করিতে পারেন, সেই জন্য রাষ্ট্র তাঁহাদের পর্যাপ্ত বেতন ও অন্যান্য সর্বপ্রকার সুযোগ ও সুবিধা-প্রদান করিবে। (১১) বর্তমানে পচাগলা ঘুণে ধরা সমাজ ব্যবস্থার ধারক ও বাহক যে সাম্রাজ্যবাদী, সামন্তবাদী ও বুর্জোয়া ভাবাদর্শে বিষাক্ত প্রতিক্রিয়াশীল ও সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি প্রচলিত রহিয়াছে, তাহ সমূলে করা হইবে এবং সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও সকল প্রতিক্রিয়াশীল ও সাম্প্রদায়িক ভাবধারাবিরোধী জনগণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে এমন ধাঁচে গড়িয়া তুলিতে হইবে যাহাতে ইহা জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের শত্রদের চূড়ান্তভাবে ধ্বংস করিতে পারে। এই সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে প্রধান ও নেতৃস্থানীয় উপাদান হইবে সর্বহারা শ্রেণীর বিপ্লবী মতাদর্শ ও সংস্কৃতি, যাহাতে ইহা দ্রুত সমাজতন্ত্রের লক্ষ্য অভিমুখে অগ্রসর হইয়া যাইতে পারে এবং সমজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের কার্যকরী হাতিয়ারে পরিণত হইতে পারে। (১২) বাঙালী জাতির সংস্কৃতির বিকাশ ও মানোন্নয়নের জন্য বিশেষ চেষ্টা গ্রহণ করা হইবে। এই জাতীয় সংস্কৃতি পূর্ব বাংলার গোটা জনগণ বিশেষ করিয়া শ্রমজীবী মানুষের সংঘাতময় জীবন ও নিরস্বর শ্রেণী সংগ্রামের একটি সার্থক দর্পণ হইবে। (১৩) বাঙলা ভাষা ও সাহিত্যের গৌরবময় ঐতিহ্যকে রাষ্ট্র পরম নিষ্ঠার সহিত সংরক্ষণ করিবে-ইহার মধ্যে যে অংশ বিপ্লবের সাহায়ক হইবে, তাহার বিকাশের জন্য রাষ্ট্র সর্বপ্রকার প্রচেষ্টা চালাইবে, যে অংশসংগ্রাম ও শ্রমজীবী মানুষের বিরুদ্ধে যাইবে, তাহা জনগণের নিকট সমালোচনা সহকারে তুলিয়া ধরা হইবে। কিন্তু রাষ্ট্র মাইকেল, রবীন্দ্র, নজরুল বা অন্য ঐতিহ্যবাহী সাহিত্য প্রচারে বিঘ্ন সৃষ্টি করিবে না। (১৪) বিদেশের যে সকল শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি মানবজাতির সম্পদ হিসাবে পরিগণিত হইয়াছে, তাহার সারবস্তু আত্মস্থ করিবার জন্য অনুশীলন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে। কিন্তু ইহার সম্পর্কেও শ্রমিক শ্রেণীর দৃষ্টিভঙ্গি ও সমালোচনা তুলিয়া ধরা হইবে। (১৫) সকল প্রকার লোক সাহিত্য ও সংস্কৃতির অবলুপ্তি রোধের জন্য এবং তাহার বিনাশসাধনের জন্য রাষ্ট্র সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাইবে। (১৬) সকল জাতীয় সংখ্যালঘুদের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশ ও মানোন্নয়নের জন্য বিশেষ প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হইবে। (১৭) নোংরা মার্কিনী সিনেমা, অশ্লীল, পত্র-পত্রিকা ও গণবিরোধী সকল প্রকার সাংস্কৃতিক কার্যকে উৎখাত করা হইবে ও নিষ্ঠুর হস্তে দমন করা হইবে।