পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

466 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড জনসংখ্যার ভিত্তিতে সার্বজনীন প্রত্যক্ষ ভোটাধিকর ও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি এপ্রিল, ১৯৬৯ সার্বভৌম পার্লামেন্টের আহবান (মোজাফফর) জনসংখ্যার ভিত্তিতে সার্বজনীন প্রত্যক্ষ ভোটে গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ২৬শে মার্চ তাঁহার বেতার ভাষণে ও পরে ১০ই এপ্রিল সাংবাদিক সম্মেলনে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করিয়াছেন, দেশে সামরিক শাসন জারীর পিছনে সামরিক বাহিনীর কোন রাজনৈতিক অভিলাষ নাই বরং প্রত্যক্ষ ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করাই কেবল তাহার সরকারের লক্ষ্য। দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ অনুকূল থাকিলে যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে বলিয়া তিনি ঘোষণা করিয়াছেন। পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির পক্ষ হইতে আমি এবং আমার দলীয় বন্ধুরা মনে করি যে, দেশে যেরূপ স্বাভাবিক অবস্থা বিদ্যমান থাকিলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইতে পারে বলিয়া ঘোষণা করা হইয়াছিল, দেশে সেইরুপ স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করিতেছে। তাই, আমরা মনে করিতেছে, বিলম্ব না করিয়া শীঘ্রই জনপ্রতিনিধিদের হাতে দেশের শাসন ক্ষমতা অর্পণ করা প্রয়োজন এবং এই জন্য অবিলম্বে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া দরকার এবং পূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশে পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুবিধার্থে বিশেষ কোন অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা অবলম্বনের বিষয় বিবেচনার জন্যও আমরা সকল দলমত ও সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি আহবান জানাইতেছি। দেশে বর্তমান কোন গণতান্ত্রিক সরকার নাই; কোন শাসনতন্ত্র নাই-ইহাই বাস্তব অবস্থা। এই অবস্থার হাত হইতে মুক্তি পাইবার জন্য বিভিন্ন মহল হইতে বিভিন্ন প্রস্তাব আসিতেছে। যেমন-১৯৫৬ সালের সাবেক শাসনতন্ত্রকে পুনর্বহাল করা, ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্রকে নির্বাচনের ভিত্তি হিসাবে ধরা, প্রথমবারের জন্য নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ (------------------- ) ভোটে শাসনতন্ত্র সংশোধনের অধিকারসহ ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র গ্রহণ করা। তা ছাড়া জাতীয় কনভেনশন ও গণভোটের মাধ্যমে শাসনতন্ত্র গ্রহণ করার প্রস্তাবও উঠিতেছে। শাসনতন্ত্র-সমস্যা সমাধানের তৈয়ার (------------------- ) ব্যবস্থা হিসাবে ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র বর্তমান সময়ে দেশবাসীর নিকট কোন মতেই গ্রহণযোগ্য হইতে পারে না। কারণ ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্রে পূর্ব পাকিস্তানের আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন নাই, অথচ এই দাবী আদায়ে দেশের জনগণকে দীর্ঘকাল হইতে অত্যাচার সহ্য করিতে হইয়াছে, এমনকি প্রাণ পর্যন্ত বিসর্জন দিতে হইয়াছে। ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্রে পশ্চিম পাকিস্তানের এক ইউনিট ব্যবস্থা কায়েম করা হইয়াছে। ইহা দ্বারা সেখানকার জনগণের বিশেষতঃ বেলুচ, পাঠান, সিন্ধিদের স্বায়ত্তশাসন হরণ করা হইয়াছে। এই শাসনতন্ত্রে জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্বের দাবীকে অস্বীকার স্বায়ত্তশাসন হরণ করা হইয়াছে। এই শাসনতন্ত্রে জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্বের দাবীকে অস্বীকার করিয়া অগণতান্ত্রিক সংখ্যাসাম্য নীতি কায়েম করা হইয়াছে। ইহা পূর্ব পাকিস্তানের একটি গণতান্ত্রিক অধিকার নস্যাৎ করিয়াছে। ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্রকে নির্বাচনের ভিত্তি হিসাবেও গ্রহণ করা যায় না। কারণ ইহাতে জনসংখ্যার ভিত্তিকে প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা নাই।