পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৫১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

490 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড করিয়াছিল। কেননা, বিশ্ববাসী যেন একথা ভাবিবার অবকাশ না পায় যে পাকিস্তানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য মার্শাল ল’ রাখিতে হয়। তাই আমাদের দেশের ও জনগণের মর্যাদা ও রক্ষার জন্যও ইহা প্রয়োজন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সরকার কেন এই দাবী পূরণ করিলেন না, উহা আমরা বুঝিতে অক্ষম। তাই মার্শাল ল’ প্রত্যাহার, ব্যক্তিস্বাধীনতা কায়েম, রাজনৈতিক কারণে জারীকৃত মামলা, সামরিক মামলা ও গ্রেফতারী পরোয়ানা প্রত্যাহার এবং সকল রাজবন্দীর আমরা অবিলম্বে মুক্তি দাবী করিতেছি। নির্বাচনের সংগে শাসনক্ষমতা জনপ্রতিনিধিদের হাতে দাও ছাত্রসমাজ ও জনগণ ইহাও আশা করিয়াছিল যে, দেশে ৫ই অক্টোবরের পূর্বে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে ও নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে দেশের শাসনভার এবং শাসনতন্ত্র রচনার সার্বভৌম ক্ষমতা নির্বাচিত পরিষদ তথা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে আস্থার সহিত অৰ্পণ করা হইবে। কিন্তু এই আশাও পরিপূর্ণবাবে বাস্তবায়িত নাই। যেভাবে সবকিছু ঘোষণা করা হইয়াছে অনুরুপভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে ১৯৭১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত দেশে সামরিক শাসন বলবৎ থাকিয়া যাইবে এবং ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সৃষ্টি করিয়া জাতীয় পরিষদ ১২০ দিনের মধ্যে শাসনতন্ত্র প্রণয়নে ব্যর্থ হইলে সামরিক শাসনের মেয়াদ আরও অনির্দিষ্টকালের জন্য বৃদ্ধি পাইবে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের সুনির্দিষ্ট সময় সীমা নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা আমরা মর্মে মর্মে উপলদ্ধি করি। কিন্তু সামরিক শাসন দেশে বলবৎ থাকিলেও কায়েমী স্বার্থবাদীদের ষড়যন্ত্রের ফলে ১২০ দিনের মধ্যে শাসনতন্ত্র প্রণয়ন ব্যর্থ হইতে বসিলে নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ সামরিক আইনের মেয়াদ যেন আর বৃদ্ধি না পায় এই লক্ষ্য হইতে তাড়াতাড়ি করিয়া শাসনতান্ত্রিক বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব না দিয়াই গোঁজামিলের পথে চলিয়া যাইতে পারেন। ইহার ফল ভবিষ্যতের জন্য হইবে খুবই মারাত্মক। কাজেই আমরা মনে করি যে নির্বাচনের সাথে সাথে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতেই শাসনভার অর্পণ করা দরকার। ব্যাখ্যা প্রয়োজন পূর্ব পাকিস্তান তথা বিভিন্ন প্রদেশসমূহের স্বায়ত্তশাসন সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া তাঁহার ভাষণে কেন্দ্রীয় সরকারের এক্তিয়ারধীন কি কি বিষয় থাকিবে তাহা সুস্পষ্টভাবে কিছু না বলায় আমরা ইহাই মনে করিতেছি যে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদে পরিপূর্ণ স্বাধীনভাবে সহজ সংখ্যাধিক্যের ভোটে স্বায়ত্তশাসনসহ সকল শাসনতান্ত্রিক সমস্যার সমাধান করিবেন ইহাই আশা করেন। ‘এক লোক এক ভোট যেমন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নির্বাচনের গণতান্ত্রিক ভিত্তি নুতনভাবে দেশের শাসন প্রণয়নের সময়ে সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে উহা গ্রহণ করাও তেমনই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত গণতান্ত্রিক পদ্ধতি। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তাঁহার ভাষণে এই সম্পর্কিত তিনটি বিষয়ে যাহা বলিয়াছেন উহার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রয়োজন বলিয়া আমরা মনে করি। প্রথমতঃ তিনি শাসনতন্ত্রের একটি বিশেষ পবিত্র দলিল হিসাবে বর্ণনা করিয়া জাতীয় পরিষদে শাসনতন্ত্র গ্রহণের জন্য বিশেষ ভোট পদ্ধতি কি হইবে উহা স্থির করার দায়িত্ব জাতীয় পরিষদের উপরই ন্যাস্ত করিয়াছেন। ইহার দ্বারা তিনি সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটপদ্ধতির পরিবর্তনের প্রতি ইঙ্গিত করিয়াছেন বলিয়াছেন বলিয়াই অনুমান করার অবকাশ আছে। দ্বিতীয়তঃ জাতীয় পরিষদের শাসনতন্ত্র গৃহীত হইবার পর উহা প্রেসিডেন্ট কর্তৃক অনুমোদিত হইবার কথাও বলা। এই অনুমোদন দানের বিষয়টি রাষ্ট্র প্রধান হিসাবে আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষরদানের ব্যাপার মাত্র কিনা উহা ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে। তৃতীয়তঃ স্বায়ত্তশাসন বিশেষতঃ পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন বিশেষতঃ পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন সম্পর্কে বলিতে গিয়া প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অর্থ (-Φ-Μ- νw - - - - -4 0-1 - w- ) এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ব্যাপারে কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতার ভাগ বণ্টনের কথা বলিয়াছেন ও এইভাবে রাষ্ট্ৰীয় সংহতি রক্ষার গুরুত্ব ব্যক্ত করিয়াছেন। স্বায়ত্তশাসন সম্পর্কে ছাত্রসমাজের বক্তব্য ঐতিহাসিক ১১-দফা দাবীতে বর্ণনা করা হইয়াছে, কিন্তু প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া স্বায়ত্তশাসন সম্পর্কে যাহা বলিয়াছেন জাতীয় পরিষদের সামনে উহা একটি শাসনতান্ত্রিক ভিত্তি হিসাবে থাকিবে কিনা তাহাও