পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৫১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

491 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন আছে বলিয়া আমরা মনে করি। এই প্রসঙ্গে আমাদের অভিমত ও দাবী হইল এই যেঃ তিনটি দাবী (ক) জাতীয় পরিষদের সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে শাসনতন্ত্র গ্রহণের গণতান্ত্রিক ভিত্তি পূর্বাহ্নে ঘোষণা করা প্রয়োজন। অন্যথায় এই সম্পর্ক সিদ্ধান্ত গ্রহণে জাতীয় পরিষদে যে বিতর্কের সূচনা হইবে উহাতে অযথা সময় নষ্ট হইবে, ফলে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী কর্তৃক ষড়যন্ত্র সৃষ্টির সুযোগ বৃদ্ধি পাইবে এবং এইভাবে ১২০ দিনের সময়-সীমার মধ্যে শাসনতন্ত্র রচনার কাজ অসম্ভব হইয়া উঠিবে। (খ) জাতীয় পরিষদ কর্তৃক শাসনতন্ত্র রচনার পর প্রেসিডেন্টের অনুমোদন দানের বিষয়টিকে একটি আনুষ্ঠানিক ব্যাপার হিসাবে পূর্বাহ্নেই ঘোষণা দিতে হইবে। (গ) প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনসহ সকল বিষয়ে শাসনতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত গ্রহনে পূর্ণ সার্বভৌম ক্ষমতা জাতীয় পরিষদের উপর ন্যস্ত করিতে হইবে ও এই সম্পর্কেও পূর্বাহ্নেই ঘোষণা দিতে হইবে। তবে এক ইউনিট বাতিল ও এক লোক এক ভোট নীতি পার্লামেন্টার গণতন্ত্র প্রভৃতি সর্বজনীস্বীকৃত নীতিসমূহ শাসনতন্ত্রের অনুর্ভুক্ত যে ৩১ শে মার্চের পূর্বেই নির্বাচনের সাময়িক আইনগত কাঠামো সম্পর্কে সরকার কর্তৃক যে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ঘোষণা করা হইয়াছে, এই আইনগত ভিত্তির মধ্যে উল্লেখিত তিনটি বিষয় অব্যশই অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। আইনগত কাঠামো দ্রুত ঘোষণা কর এই সকল কারণে নির্বাচনের আইনগত কাঠামো দ্রুত ঘোষণার জন্যও আমরা দাবী জানাইতেছি। পশ্চিম কয়টি প্রদেশ হইবে? ইহা শুভ লক্ষণ যে, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বলিষ্ঠতার সহিত এক ইউনিট ভাঙ্গিয়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করিয়াছেন। যদিও নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই এক ইউনিট বাতিল করিয়া আশা করেন। কিন্তু এক ইউনিট উঠিয়া গেলে চারটি সাবেক প্রদেশ পুনর্জীবিত করা হইবে, নাকি পশ্চিম পাকিস্তানে প্রদেশের সংখ্যা পূর্বের তুলনায় হ্রাস বৃদ্ধি করা হইবে, সে বিষয়ে পরিষ্কারভাবে কিছু বলা হয় নাই। এই বিষয়ে অবিলম্বে সুস্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া প্রয়োজন বলিয়া আমরা মনে করি। কেননা পশ্চিম পাকিস্তানে প্রদেশের সংখ্যা হ্রাস বৃদ্ধি করা হইলে বিভেদ ও বিদ্বেষ সৃষ্টি এবং ইহার ফলে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হওয়ার আশংকা আছে যে, পরিশেষে নির্বাচন নস্যাৎ করার পুরাতন ষড়যন্ত্র আবার মাথাচাড়া দিয়া উঠিতে পারে। বেসামরিক আইনে দেশ শাসন কর পহেলা জানুয়ারী হইতে রাজনৈতিক তৎপরতার সুযোগ দানের ঘোষণা দেওয়া হইয়াছে। আমরা মনে করি যে, ১লা জানুয়ারী হইতে সামরিক আইন তুলিয়া নেওয়া উচিত। ইহার ফলে শাসনব্যবস্থায় শুন্যতা সৃষ্টির অবকাশ নাই। কারণ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান স্বয়ং ঘোষণা করিয়াছেন যে, সামরিক ও বেসামরিক এই দুইভাবেই দেশ বর্তমানে শাসিত হইতেছে। কাজেই সামরিক আইন প্রত্যাহার করিয়া ১লা জানুয়ারী হইতে বেসামরিক আইনের বর্তমান ভিত্তিতে রাষ্ট্রকার্য পরিচালনার জন্য আমরা দাবী জানাইতেছি।