পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৫১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

492 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড আত্ম-সন্তুষ্টির অবকাশ নাই পরিশেষে আমরা আমাদের দেশের গণতন্ত্রকামী, স্বায়ত্তশাসনকামী ছাত্রসমাজ, শ্রমিক, কৃষক, মধ্যবিত্ত তথা জনগণের নিকট ও সকল গণতান্ত্রিক শক্তির নিকট আবেদন জানাইয়া বলিতে চাই যে, প্রেসিডেন্টের ঘোষণার মাধ্যমে গণদাবীর কতকগুলি বিজয় সূচিত হইলেও আত্ম-সন্তুষ্টির কোন অবকাশ নাই। ইহা সকলেরই জানা আছে যে আমাদের দেশে গণতন্ত্র বিকাশে ও বাংলাসহ বিভিন্ন ভাষাভাষী জাতির জাতীয় অধিকার লাভের বিরুদ্ধে দেশী বিদেশী প্রতিক্রিয়াশীল কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠী গত ২২ বৎসরব্যাপী প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করিয়া আসিয়াছে এবং দেশে একটি সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হইতে দেয় নাই। এই প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী শেষ পর্যন্ত শেষ পর্যন্ত ষড়যন্ত্র চালাইয়া যাইবে, ইহাতে কোন সন্দেহ নাই। কাজেই নির্বাচন ও পার্লামেন্টারী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং পূর্ব বাংলাসহ সকল ভাষাভাষী জাতির পূর্ণ ও প্রকত স্বায়ত্তশাসন অর্জনের জন্য আজ আমাদরে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকিতে হইবে ও আন্দোলনের তীব্রতা বৃদ্ধি করিতে হইবে। অন্যথায় বর্তমান বিজয়সমূহও পুনরায় নস্যাৎ হইবার আশংকা আছে। তদুপরি দেশে উগ্র দক্ষিণপন্থী ও উগ্রহঠকারী বামপন্থীগণ কর্তৃক পুনরায় নির্বাচন বানচালের সুযোগ সৃষ্টি করিয়া দেওয়ার বিপদ এখনও আছে। এক্ষেত্রে আমরা সুস্পষ্টভাবে একথা ঘোষণা করিতে চাই যে, শুধু নির্বাচন ও পালামেন্টারী গণতন্ত্র অর্জন করিলেই জনগণের জীবনের সকল সমস্যার সমাধান হইয়া যাইবে, এ কথা আমরা মনে করি না। সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও একচেটিয়া পুঁজির উচ্ছেদ, দেশে পূর্ণ গণতন্ত্র কায়েম, বাঙ্গালীসহ সকল জাতির পূর্ণ জাতীয় স্বাধীকার প্রতিষ্ঠা এবং ছাত্র-শ্রমিক-শ্রমিক ও অন্যান্য মেহনতী মানুষের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের মধ্য দিয়াই দেশ মুক্তির পথে যাইতে পারে। এই জন্য নির্বাচন ও পার্লামেন্টারী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা দ্বারা যে ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার অর্জিত হয় উহা ঐ লক্ষ্য অগ্রসর হইবার একটি পথ মাত্র। ১১-দফার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ থাকুন কাজেই আমরা জনগণ এবং গণতান্ত্রিক শক্তির নিকট আহবান জানাইতেছি যে, দেশী-বিদেশী প্রতিক্রিয়াশীল কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর চক্রান্ত ও উগ্র-দক্ষিণ এবং উগ্র বামের বিপদের বিরুদ্ধে ১১-দফার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হউন এবং গণতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে বর্তমানে অগ্রসর করিবার মধ্য দিয়া সাম্রাজ্যবাদ, সামন্ত বাদ ও একচেটিয়া পুঁজির শোষণ শাসন উচ্ছেদ করুন। ১। শামসুদোহা, সভাপতি, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন। ২। নূরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ঐ ৩। তোফায়েল আহমেদ, সভাপতি, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ। ৪। আবদুর সাধারণ সম্পাদক, ঐ ৫। ইব্রাহিম খলীল, সভাপতি, জাতীয় ছাত্র ফেডারেশন। ৬। খায়রুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক, ঐ পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কার্যালয় ৩১/১ হোসেনী দালান হইতে প্রকাশিত ও কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক কামাল উদ্দিন আহমেদ কর্তৃক প্রচারিত। বর্ণশ্রী মুদ্রায়ণ, ৩৪, টিপু সুলতান রোড, ঢাকা-১ হইতে মুদ্রিত।