পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

34 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড করতে চেষ্টা করে কিন্তু পলকে তারা চলে যেতে সমর্থ হয়। বাড়ীওয়ালা সদস্য মিঃ আশরাফ হুসেনকে পুলিশ সন্দেহের বশবর্তী হয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ময়মনসিংহ নিয়ে গেলো। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। অনেকদিন পর পুলিশ ময়মনসিংহের আবদুর রহমান সিদিক ও আর,এম,সাইদকে গ্রেপ্তার করলো কিন্তু কোন তথ্য না পাওয়ার দরুন শেষে নিরাপত্তা আইনে তাদের আটকিয়ে রাখে। আলী আছাদ তখন সম্পূর্ণভাবে ক্ষেতমজুরের বেশ ধরে সারা পূর্ব বাংলা ঘুরে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে প্রচারপত্র বিলি করে ও বিপ্লবী সংগঠন গড়ে তুলেছিল। তখন সে দিবারাত্রি কাজ করতো। দাড়ি-গোঁফ এরূপভাবে রাখলো যে, কেউ আর তাকে আলী আছাদ বলে চিনতে পারে নাই। আইয়ুব খান কর্তৃক সামরিক ময়মনসিংহ সদরে আসেন। আমরা তখন আলী আছাদের কথা তাকে জানালাম। মুজিব ভাই আলী আছাদকে প্রকাশ্যে বের হয়ে কাজ করার কথা বলে দিয়েছিল। আমরা এ সংবাদ বন্ধু আলী আছাদকে জানালাম কিন্তু সে প্রকাশ্যে বের হলো না। সে বললো যে রক্তস্বাক্ষরে শপথ নিয়েছি দেশকে মুক্ত করবো কিন্তু বেঈমানী করতে পারবো না। সে তখন ছদ্মবেশে সহানুভুতিশীল সারা ভারতে ঘুরে ঘুরে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে সাহায্য কুড়াচ্ছিল। একদিন আসাম হতে তার লেখা পত্র পেলাম। তার খোঁজে আসামে লোক পাঠালাম কিন্তু সেখানে তাকে পাওয়া গেল না। লোক এসে বললো যে, সে তখন দিল্লীর পথে পাড়ি জমিয়েছে। এর পর হতে সে নিরুদ্দেশ কথা ছিল যে ভারতে সুবিধে না করতে পারলে সে চলে যাবে সমাজতান্ত্রিক দেশ চীন অথবা রাশিয়াতে সাহায্যের জন্য। আমরা আশা করেছিলাম সে ফিরে আসবে কিন্তু সে আর ফিরে এলো না। কোনদিন হয়তো আর আসবে না। সে হারিয়ে গেছে। তার বীরত্ব ত্যাগ, তিতিক্ষাই আমাদের পাথেয়। ধ্রুবতারার মত সে আমাদের চোখের সামনে জুলছে।- তাকে অনুভব করা যায় কিন্তু ধরাছোঁয়া যায় না। দেশ স্বাধীন হয়েছে। সমাজতন্ত্রের পথে এগিয়ে চলেছে কিন্তু হারিয়ে গেছে একটি সৈনিক। আমরা আশ্র ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তাকে স্মরণ করবো- সে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছে স্বাধীনতার জন্য। (অসমাপ্ত)