পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৬১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

592 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড গেরিলারা যখন লড়াই করেছে তখনও সংগ্রামের মুখে নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু তার দ্বারা এ কথা প্রমাণিত হয়নি যে নির্বাচনে বিজয়ীরা জনগণের বন্ধু। বরং তারা সাম্রাজ্যবাদ ও স্বৈরাচারের তলপীবাহক।” বিদেশী সৈন্য হটাও দুর্গত এলাকায় রিলিফ দেওয়ার নামে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বিপুলসংখ্যক মার্কিন ও বৃটিশ সৈন্যেও ঘাঁটি স্থাপন সম্পর্কে মওলানা ভাসানী বলেন, “আমেরিকা ও বৃটেন ব্যতীত পৃথিবীর সকল দেশ দুর্গত মানবতার সেবায় স্বেচ্ছাসেবক, সাহায্য দ্রব্য ও সাংবাদিক প্রেরণ করেছেন। শুধুমাত্র আমেরিকা ও বৃটিশরা কামান-বন্দুক নিয়ে সশস্ত্র অবস্থায় মানবতার সেবা করতে এসেছে। সশস্ত্র হয় সেবা করা যায় না-যুদ্ধ করা যায়।” তিনি পৃথিবীর জনগণের শত্রুমার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার লেজুর বৃটেনের সেনাবাহিনীকে আগামী ৩০শে ডিসেম্বরের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের মাটি থেকে বিদায় নেওয়ার নির্দেশ দেন। অন্যথায় মার্কিন ও বৃটিশ দূতাবাস জুলিয়ে দেওয়া হবে’ বলে হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন। যুদ্ধ জননেতার বক্তৃতাকালে তিন লক্ষাধিক লোকের এই বিশাল জনসমুদ্র থেকে মাঝে মাঝে ‘স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান জিন্দাবাদ ইঙ্গ- মার্কিন দস্যরা বাংলা ছাড়া, পূর্ব বাংলার নয়নমণি- মওলানা ভাসানী প্রভৃতি শ্লোগানে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয়ে উঠেছিল। এই পর্যায়ে মওলানা ভাসানী বলেন, শুধু শ্লোগানে সংগ্রাম হয় না। হয় মরে যাব, নয়তো সার্বভৌমত্ব পাব এই কি আপনারা চান? ডববেকের কাছে জিজ্ঞেস করুন। যদি কোরবানী দিতে প্রস্তত্তত থাকেন তবে হাত তুলুন।’ জনতা মুহুর্মুহু শ্লোগানের সাথে হাত তোলেন। মওলানা ভাসানী তখন নিজেই শ্লোগান দেন, নারায়ে তকবীর-আল্লাহু আকবর’ স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান- জিন্দাবাদ’। সঙ্গে সঙ্গে লক্ষ লক্ষ কণ্ঠ থেকে তাদের প্রিয় নেতার শ্লোগানের প্রতিধ্বনি ভেসে আসে। উক্ত জনসভায় আরও যারা ভাষণ দেন তাঁরা হলেন ন্যাশনাল লীগের সভাপতি জনাব আতাউর রহমান খান, পূর্ব পাকিস্তান জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের সভাপতি পীর মোহসেন উদ্দীন, কৃষক-শ্রমিক পার্টি প্রধান জনাব এ,এস,এম সোলায়ামান ও পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাধারণ সম্পাদক জনাব মশিয়ুর রহমান। সভাশেষে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে উপস্থিত জনতার এক বিরাট মিছিল বিভিন্ন শ্লোগান দিতে দিতে রাজধানীর সড়ক প্রদক্ষিণ করে।