পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৬২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খণ্ড
595

 আইন পরিষদের অধিবেশন বলিতে এখনও স্পষ্টতঃ মাস দুয়েক দেরী। ইহার মধ্যে স্বাধীনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের আকাঙ্খা জনসাধারণের মধ্যে যাহাতে আরও তীব্র হইয়া না উঠিতে পারে, মিলিটারী শাসকগোষ্ঠী তজ্জন্য চিরাচরিত কায়দায় দেশের সংবাদপত্রসমূহের টুঁটি টিপিয়া ধরিতেছে এবং তাহা অত্যন্ত গোপনে। কেন্দ্রীয় তথ্য বিভাগ ‘স্বাধীন পূর্ব বাংলা’ ‘স্বাধীন বাংলা’ বা ‘স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান’ এমনকি ‘সার্বভৌম পূর্ব পাকিস্তান' কথাগুলি যাহাতে উচ্চারিত না হয় তজ্জন্য সংবাদপত্রগুলির প্রতি গোপন নির্দেশ জারি করিয়াছে। এই নির্দেশ ‘প্রেস নোট’ আকারে জারি করিলে উল্টা ফল ফলিতে পারে, এইরূপ আশঙ্কাও তাহাদের রহিয়াছে।

 ইহা হইতে স্পষ্টতঃ অনুমান করা চলা যে, জেনারেল ইয়াহিয়া নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিকট শাসনক্ষমতা হস্তান্তরের তখনই ব্যবস্থা করিবে, যখন বর্তমান ঘুণে ধরা রাষ্ট্রযন্ত্রটি বহাল রাখার মত করিয়াই একটি শাসনতন্ত্র প্রণীত হইবে। এবং তাহাই যদি হয় তাহা হইলে শাসনক্ষমতা হস্তান্তরিত হইলে জনপ্রতিনিধিরা কায়েমী শোষকগোষ্ঠীর ক্রীড়নক হিসাবেই কাজ করিবে।

 ১৯৬৮-৬৯ সালে ১১-দফার গণঅভ্যুত্থান ঘটাইয়া জনসাধারণ যে রাষ্ট্রযন্ত্রটি অচল করিয়া দিয়াছিল ও ভাঙ্গিয়া চুরমার করিয়া দিতেছিল, মার্শাল ল’র শেষ অস্ত্র প্রয়োগ করিয়া কায়েমী শাসকগোষ্ঠী সেই রাষ্ট্রযন্ত্রকেই আবার জোড়া তালি দিয়া চালু করিয়া রাখিয়াছে। এইবার নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় উহা বাতিল করা গেল না দেখিয়া দেশের বিভিন্ন ভাষাভাষী জাতি, বিশেষ করিয়া পূর্ব বাংলার জনসাধারণ নিশ্চিতভাবেই আরেক নবতর গণঅভ্যুত্থান ঘটাইয়া উহাকে উৎখাত করিয়া আকাঙ্খিত ১১-দফাভিত্তিক স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র কাঠামো প্রতিষ্ঠা করিবেই।