পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৬৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

604 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড ৬-দফা ইত্যাদি। সকল নেতাই জানেন আলাদা হওয়া ব্যতীত মুক্তি নাই। তবুও উজির-নাজির হওয়ার আশায় এ সকল দফা দেন। আশ্চর্য্যের বিষয় যারাই এই সকল দফা দেন, রাজনৈতিক জীবনে দুরের কথা-ব্যক্তিগত জীবনেও তাদের প্রায় সকলেই এ সকল দফার পালনযোগ্য দফাগুলির একটিও পালন করেন না, বরং বিরোধিতা করেন। ছোট্ট একটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে উঠবে। সকলেই জানেন বাংলা ভাষা আন্দোলনের উপর ভিত্তি করে, বাংলার বান্ধবরূপী তথাকথিত অনেক নেতাই, অন্যান্য দফাসহ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে চালু করার ওয়াদা তথা দফা দিয়ে মন্ত্রী পর্যন্ত হয়েছিলেন। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, পশ্চিম সাম্রাজ্যবাদীগণকে খুশী রাখার জন্যই মন্ত্রী হওয়ার পরে আর তাহারা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে চালু করেন নাই। যাহা করতে একটি পাই পয়সাও খরচ হতো না। বেইমান রাজনীতিকরা বলে বেড়ায়, বাংলা নাকি রাষ্ট্রভাষা হিসাবে চালু হয়ে গেছে। ইহা একটি ডাহা মিথ্যা কথা। অনেকেই জানেন না যে, ঢাকা হাইকোটে বাংলায় আরজি লিখার অপরাধে আজ প্রায় ৪. (সাড়ে চারি) বৎসর যাবৎ ঢাকা হাইকোটে আমার ওকালাত বন্ধ আছে। ইহার বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টে, বাংলায় লিখিত আরজি মারফৎ মামলা চলতে থাকার অপরাধে, সুপ্রীম কোর্টও আজ ৩. (সাড়ে তিন) বৎসর যাবৎ আমার ঐ মামলার শুনানী দিচ্ছে না। আমরি রাষ্ট্রভাষা। সাম্রাজ্যবাদীদের পদলেহনকারী, বেহায়া এবং ধোঁকাবাজ নেতাগুলো তাদের দলীয় কাজের অনেক কিছুই এখন পর্যন্তও ইংরেজীতেই করে। তাহার ২১শে ফেব্রুয়ারীর শহীদ দিবস পর্যন্ত ইংরেজীতে বিবৃতি দেওয়ার আস্পর্ধা রাখে। তাদের ছেলেপিলেগণকে ইংরেজী-মাধ্যম স্কুল- কলেজ পড়ায়। পশ্চিমা প্ৰভুদের সংগে দেখা হলেই, তথাকথিত নেতাগণ সুবোধ ক্রীতদাসের মত, গড় গড় করে ইংরেজী অথবা উর্দুতে কথা বলতে থাকে। বাংলায় কথা বলতে, তাদের শরমের উদ্রেক হয়!! নেতা আর কাকে বলে!! আরেকটি উদাহরণ দিলেই সাম্রাজ্যবাদীদের তলপীবাহকে তথাকথিত নেতাগুলির মেকি খোলস ঝরে পড়বে। নেতাদের অনেকেই বলে, দেশের মালিকানা জনসাধারণের হাতে। তাহার দেশের মহামান্য নাগরিকগণেরই প্রতিনিধিত্ব করতে চায়। কিন্তু প্রশ্ন দাড়ায়, তাহারা যদি সত্যি সত্যি জনগণকেই দেশের মালিক হিসাবে মেনে নিয়ে থাকে, তবে তাহার ১৯৭০ ইংরেজীর নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে সম্মত হল কিভাবে? ঐ নির্বাচনের পূর্বশর্ত ছিল, সাম্রাজ্যবাদীদের প্রতিভূ, জনৈক অবাঞ্ছিত ও বেইমান গণকৰ্মচারী, ইয়াহিয়া খানের আংগুলি হেলনে নির্ধারিত গণপ্রতিনিধিগণকে উঠতে-বসতে হবে। এতদসত্ত্বেও তথাকথিত নেতাগুলো জনগণের সার্বভৌমত্বকে পর্যন্ত বিসর্জন দিয়ে লজ্জাশরমের মাথা খেয়ে, সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। এতে বুঝা যায়; তথাকথিত রাজনৈতিক নেতারা পশ্চিম পাকিস্তানী সাম্রাজ্যবাদীগণকেই, তাদের প্রভু বলে মেনে নিয়েছে। দেশের মহামান্য নাগরিকগণকে তাহারা দেশের মালিক (সভরীণ) বলে স্বীকার করে নাঃ কেবল ভোটদাতা ও বেতনের যোগানদাতা বলেই স্বীকার করে। পশ্চিম পাকিস্তানী সাম্রাজ্যবাদীদের তল্পীবাহক তথাকথিত নেতাগুলো তাদের প্রভুদের ইশারায় পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলন তথা আলাদা হওয়ার আন্দোলনকে দাবিয়ে রাখার জন্য বর্তমানে, স্বায়ত্তশাসন নামে একটি শ্লোগানের উপর খুব জোর দিয়েছে। তাহারা এই শ্লোগান দ্বারা জনগণকে নূতনভাবে ধোঁকা দিতে চায়। তাহারা বুঝাতে চায়, স্বায়ত্তশাসন আদায় হলে পূর্ব পাকিস্তানের আর কোন দুঃখ থাকবে না। আদতে কোন স্বাধীন দেশে স্বায়ত্তশাসন বলতে কোন জিনিস নাই। একটি স্বাধীন দেশে কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে প্রশাসনিক বিষয়ে ভাগ বাটোয়ারা হয়, ইহাকে স্বায়ত্তশাসন বলা যায় না। যদি ইহাকেই কেহ স্বায়ত্তশাসন বলে, তাহলেও দেখতে পাই প্রায় ১৩ (তের বৎসর) পূর্বে জনৈক বাংগালী-দরদী নেতা বলেছিলেন-৯৮% (শতকরা আটানববই ভাগ) প্রাদেশিক বিষয় তথা স্বায়ত্তশাসন আদায় হয়ে গেছে। ঐ উক্তির পরে রেলওয়ে, পি,আই,ডি.সি, উয়াপদা ইত্যাদি প্রদেশের হাতে এসে গেছে, সুতরাং বর্ণিত হিসাব অনুযায়ী অধিক কোন স্বায়ত্তশাসন তথা প্রাদেশিক বিষয়, কেন্দ্রের হাতে আর জমা নাই।