পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৬৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

606 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড পোড়া কপাল। কোন জাতের শাসনেই পর্ব পাকিস্তানের উপর শোষণ হয় নাই। চাকরীর বৈশম্য দূর হয় নাই। অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়তেই থাকে। অফিস-আদালতে বাংলা ভাষার প্রতিষ্ঠা তথা বাংগালীর মর্যাদার প্রতিষ্ঠা হয় নাই। ১৯৬৯ ইংরেজীর স্বতঃস্ফূর্ত গণআন্দোলন মারফৎ ভোটাধিকার আদায় করা হয়। ঐ সময় অন্যান্য লোকজনসহ জনৈক্য তথাকথিত নেতাকেও ফাঁসির মঞ্চ হতে ছিনিয়ে আনা হয়। আশ্চর্যের বিষয়, ঐ অকৃতজ্ঞ নেতাই এখন দাবী করছেন যে, তিনিই নাকি হাজতে থেকে দৈববলে ভোটাধিকার আদায় করেছেন। তার দাবী যদি সত্য বলে ও ধরে নেওয়া যায় তাহলে বলতে হয় কিছুদিন পর পর সাম্রাজ্যবাদী শয়তানগুলি বেয়নেটের আদায়ের কাজেই ব্যাপৃত থাকব ? উভয় অঞ্চলের বৈষম্য দূর করার ব্যাপারে, ক্ষমতালিপসু রাজনীতিকদের কথা বাদ দিলে ও দেখা যায়, দু জাতের রাজনৈতিক তত্ত্ববাগিশ দু’ধরনের যুক্তি দিচ্ছে। কমু্যনিষ্ট তথা সমাজতন্ত্রীরা বলছে-সমাজতন্ত্র চালু হলেই, উভয় অঞ্চলের বৈশম্য দূর হয়ে গিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে দুধের নহর বইতে থাকবে। মোল্লারা বলেছেউভয় অঞ্চল নিয়ে একটি মাত্র খাঁটি ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করলেই সকল বালা-মছিবত দূর হয়ে যাবে। উভয় তরফের যুক্তিই আংশিক সত্য বটে। উভয় নীতির যে কোন একটি প্রতিষ্ঠা হলে, পূর্ব পাকিস্তানে কিছুটা সাময়িক সমৃদ্ধি আসবে। কিন্তু তাতে বৈষম্য দূর হবে না। কারণ বর্তমানে পশ্চিম পাকিস্তান একটি শিল্পভিত্তিক দেশ এবং পূর্ব পাকিস্তান একটি কৃষিভিত্তিক দেশ। তাই উভয় অঞ্চল এক সঙ্গে থাকলে পর, অর্থ-বিজ্ঞানের বাড়ন্ত এবং পড়ন্ত উৎপাদন (ইনক্রিজিং এন্ড ডিমিনিশিং রিটান) নীতি অনুযায়ী আঞ্চলিক বৈষম্য কমার হউক না কেন, নেতৃত্বটা উভয় ব্যাবস্থাতেই ঘুরে ফিরে পশ্চিম পাকিস্তানী সাম্রাজ্যবাদীদের হাতেই থেকে যাচ্ছে। কারণ সাম্রাজ্যবাদীদের নিয়োজিত লোকজনই বর্তমানে উভয় তরফের নেতৃত্ব দিচ্ছে। ৫। একমাত্র প্রতিকার উপরে বর্ণিত আলোচনায় ইহা পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে যে, অর্থবিজ্ঞানের নীতি অনুসারে, পশ্চিম পাকিস্তান চিরদিনই পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণ করবে। পূর্ব পাকিস্তানের দাবীর কথা উঠলেই পশ্চিম পাকিস্তানী সাম্রাজ্যবাদীগণ ছল-চাতুরী, গাড়ি মিসি ও টালবাহানা করে চিরদিনই ইহা ধামা চাপা দেবে। এবং এখন উপযুক্ত সময় নয় জাতীয় কথার আশ্রয়ও চিরদিনই নেবে। অথবা এক দাবী মেটালে তার চেয়েও বেশী ঘায়েল অন্য দিক করবে। সুতরাং আমাদের পূর্ব পাকিস্তানীদের বাচার একমাত্র পথ হল- ছয়দফার প্রথম দফায় বর্ণিত লাহোড় প্রস্তাবের মর্ম হতে সকল দেনা-পাওনা পরিষ্কার করতঃপশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে আলাদা করে, ইহাকে নিয়ে একটি পৃথক স্বাধীন ও সার্বভৌম ইসলামী সাম্যবাদী রাষ্ট্র গঠন করা। কোরান এবং সুন্নার উপর ভিত্তি করে যে রাষ্ট্রের আদর্শ, রসুলে করিমের সময় হতে আরম্ভ করে ওমর বিন খাত্তাব পর্যন্ত চালু, খেলাফতের আদর্শের অনুরূপ হবে। যে রাষ্ট্রের বড় বড় সকল সম্পত্তি তথা বড় বড় শিল্প, ব্যবসা, বানিজ্য, খানি, খামারা ইত্যাদি বিনা ক্ষতিপূরণে জাত্যায়ন করা হবে অর্থাৎ গণতহবিলে (বায়তুল মালে) নিয়ে আসা হবে। যেখানে কোন পরিবার গাড়ী-বাড়ী ইত্যাদি ব্যবহারের জিনিস একটার বেশী থাকবে না। যেখানে কেহ ব্যবহারের জিনিষ ভাড়া দিয়ে খেতে পারবে না। যেখানে কর্মচারীদের বেতনের তারতম্য অথবা নাগরিকদের আয়ের তারতম্য ১<৫-এর বেশী অর্থাৎ এক গুণ থেকে পাঁচগুণের বেশী হবে না এবং কোন নাগরিকের আয় পাঁচগুণের অধিক হলে যাহা গণতহবিলে (বায়তুল মালে) নিয়ে আসা হবে। যেখানে সংগতিহীন বেহাল নাগরিকগণকে কোন কাজ দেওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বেকার ভাতা দেওয়া হবে। যেখানে কোন বিদেশী ইজমের প্রচার নিষিদ্ধ হবে।