পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৬৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

607 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড যে রাষ্ট্রে কেবল মুসলমনদের সার্বজনীন ভোটে নিদিষ্ট মেয়াদ অন্তর নির্বাচত গণপ্রতিনিধি (খলিফা), কেবল লমুসলমানদের সার্বজনীন ভোটে নির্দিষ্ট মেয়াদ অন্তর নির্বাচিত গণপরিষদ এবং বিচার বিভাগের মধ্যে রাষ্ট্রীয় শাসণ ক্ষমতার ভারসাম্য এমনভাবে রাখা হবে যাতে একটি আরেকটিকে ডিঙ্গাতে না পাড়ে। যেখানে কোন প্রার্থী নির্বাচনী প্রচার করতে পারবে না। রাষ্ট্র থেকে সকলের জন্য সমান প্রচারের ব্যবস্থা করা হবে এবং প্রার্থীসংখ্যা কমানোর জন্য জামানোত বাজেয়াপ্ত বা অন্য কোন রকম ব্যাবস্থা থাকবে। পদের গুরুত্ব যত বেশী হবে, ব্যবস্থাও তত কড়া হবে। যে রাষ্ট্রে অমুসলিম সংখ্যালঘুদের সার্বজনীন ভোটে নির্বাচিত একটি পৃথক পরিষদ থাকবে। কেবল সংখ্যালঘুদের ধর্মসংক্রান্ত কোন আইন পাশ করতে হলে সরকার এই পরিষদের মতামত মেনে চলবে। অমুসলিমদের ভোটাধিকার নাই দেখে অনেকে হয়তো আতকে উঠবেন। ইহাতে আতকে উঠার কোন কিছুই নাই। শুধু ইসলামী রাষ্ট্রই অমুসলিমদের ভোটাধিকার খর্ব করে না। আধুনিক কমু্যনিষ্ট ধর্মাবলম্বী রাষ্ট্রগুলিও অকমু্যনিষ্টদের ভোটাধিকার খর্ব করেছে। আদর্শবাদী রাষ্ট্রের নিয়মই তাই। কমু্যনিষ্ট ধর্ম গ্রহণ অথবা সমর্থন অথবা মান্য না করলে, তাদেরকে সোজাসুজি পরপারে যাবার ব্যবস্থাও করে। কমু্যনিষ্ট রাশিয়া এই কারণেই তাদের দেশের অন্যান্য জাতের অসংখ্য লোকের সঙ্গে লাখে লাখে মুসলমানকেও মেরে ফেলেছে। এই একই কারণে কমু্যনিষ্ট চীন, তাদের দেশের অন্যান্য জাতের অসংখ্য লোকের সঙ্গে ৬ কোটি মুসলমানের মধ্যে প্রায় ৫ (পাঁচ) কোটিকেই লাপাত্তা করে দিয়েছে। কমু্যনিষ্ট, তথা সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে, অতীতের পুঁজিবাদী অথবা পুঁজিবাদের সমর্থকদের ভোটাধিকার নাই। সর্বহারাগণ ভোটাধিকার দিলেও ভোটাধিকার প্রয়োগ করার ক্ষমতা, সর্বহারাগণের হাতে দেওয়া হয় নাই। ভোটাধিকার প্রয়োগ করার ক্ষমতা অর্জনের জন্য কোন সর্বহারা, নির্বাচন মারফৎ গণপ্রতিনিধি হতে চাইলে তাহা সে পারবে না, যদি না সে কমু্যনিষ্ট ধর্ম গ্রহণ করে অর্থাৎ কমু্যনিষ্ট পার্টির সদস্য হয়। কিন্তু কমু্যনিষ্ট তথা সমাজতন্ত্রী নামধারী স্বার্থপর, ভন্ড ও ক্ষমতালোভী মূখগুলো জেনেও জানে না যে সর্বহারা সকল বিধানেই সর্বহারা। সে কমু্যনিষ্ট ধর্ম বা অন্য কোন ধর্ম গ্রহণ করলে অথবা না করলে, মার্কসবাদ-লেনিনবাদ বা মাওবাদ মানলে অথবা না মানলেও সর্বহারাই থেকে যায়। পুঁজিবাদ যেমন কোন বিশেষ ধর্ম গ্রহণ করা অথবা না করার উপর নির্ভর করে না- সেইভাবে সর্বহারা গরীবও কমু্যনিষ্ট ধর্ম বা অন্য কোন ধর্ম গ্রহণ করা অথবা না করার উপর নির্ভর করে না, বরং একটি লোকের অর্থনৈতিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। এখন দেখা যাচ্ছে পৃথিবীর কোন কমু্যনিষ্ট তথা সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই রাষ্ট্রের মোট লোকসংখ্যার শতকার ৪ (চার) অথবা ৫ (পাঁচ) ভাগের বেশী লোক কমু্যনিষ্ট ধর্ম গ্রহণ করে নাই অর্থাৎ মগজ ধোলাই করতঃ কমু্যনিষ্ট পার্টির সদস্যভুক্ত হয় নাই। ফলে, আদর্শবাদী কমু্যনিষ্ট তথা সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে শতকার চারি অথবা পাঁচভাগ কমু্যনিষ্ট মতাবলম্বী তথা খোদাবিরোধী ব্যতীত বাকী শতকরা ৯৫ (পচানববই অথবা ৯৬ ছিয়ানববই) ভাগ সর্বহারার ভোটাধিকার প্রয়োগ করার জন্য গণপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার ব্যবস্থা তথা কার্যকরী ভোটাধিকার নাই। অনুরূপভাবে, আদর্শহীন পুঁজিবাদী দেশেও ৯৫% ভাগ দরিদ্র জনসাধারণের অর্থাভাব হেতু গণপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার ক্ষমতা তথা কার্যকরী ভোটাধিকার নাই। আদর্শবাদী বা ধর্মবাদী রাষ্ট্রে ভিন্ন আদর্শের অনুসারীগণকেই কৌশলগত (টেকনিকেল) কারণেও ভোটাধিকার দেওয়া যায় না। কারণ ভিন্ন আদর্শের লোকজনকে ভোটাধিকার দিলে পর আদর্শবাদী রাষ্ট্রটির রাষ্ট্ৰীয় আদর্শের অস্তিত্বই থাকে নাঃ ধবংস হয়ে যায়। পূর্ব পাকিস্তানে ইহার দু’বার পরীক্ষা হয়ে গেছে, তাহার একটি স্বতন্ত্র নির্বাচনের মাধ্যমে, অপরটি যুক্তনির্বাচনের মাধ্যমে। স্বতন্ত্র নির্বাচনের সময় দেখা গেছে পূর্ব পাকিস্তান পরিষদে অমুসলিমদের আসন সংখ্যা নির্দিষ্ট থাকে। তাহারা সংখ্যালঘু বিধায় সংখ্যাগুরু মুসলমানদের ভয়ে, তাদের মধ্যে দৃঢ় ঐক্য বজায় থাকে। তাই তাহারা সংখ্যালঘু হওয়া সত্ত্বেও দৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ, নির্দিষ্ট সংখ্যক আসনের অধিকারী থাকায়; বিভক্ত, ক্ষমতালিপসু এবং নিজেদের আদর্শ সম্বন্ধে উদাসীন সংখ্যাগুরু মুসলমানগণকে কান ধরে ঘুরাতে থাকে। লোভী ও বিভক্ত মুসলমানগণ সংখ্যালঘু অমুসলিমদের ইচ্ছানুযায়ী অনেক কিছুই করতে বাধ্য হয়। যাহা অনেক সময় ইসলামী আদর্শেরও পরিপন্থী হয়ে দাঁড়ায়। এই জিনিষটা টের পেয়ে, দূরদর্শী মুসলমান রাজনীতিকগণ যুক্ত নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। তাতে সাধারণতঃ মুসলমান সদস্যগণই