পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৬৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

609 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড আল্পস অতিক্রমের কথা কেউ কোনদিন কল্পনাও করেনি। ম্যাজিনো লাইনের পিছনে জার্মান ছত্রী বাহিনী নামার বিষয়ে ফরাসীরা স্বপ্নেও ভাবেনি। মিশরের রাডার ষ্টেশন চুরির কাহিনী, সমগ্র পৃথিবীর গাঁজাখোরগণকেও টেক্কা দিয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানীরা যদি মনে করে থাকে আলাদা হওয়ার জন্য যুদ্ধ হলে তাহা পূর্ব পাকিস্তানেই সীমাবদ্ধ থাকবে, তাদের গায়ে আর্চড় লাগবে না; তবে তাহা তাদের ভুল ধারণা। আলাদা হওয়ার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানেও যুদ্ধ হতে পারে। ওহাবী আন্দোলনের সময় দেখা গেছে, বাংগালী মুজাহিদগণ সীমান্তের দুর্গম এলাকায় পর্যন্ত গমন করে সেখানেও বীরত্বপূর্ণ সশস্ত্র সংগ্রাম করেছে। ঐাহা হউক শান্তিপূর্ণভাবে আলাদা হওয়াই, আলাদা হওয়ার উত্তম পন্থা। ইহাতে কোন পক্ষই বাড়তি ক্ষতির সম্মুখীন হয় না। হিন্দুস্তান ও পাকিস্তান আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই আলাদা হয়ে গেছে। এমনকি তিক্ততা কমিয়ে সদভাব রক্ষার জন্য সহোদর ভাইয়েরাও শান্তিপূর্ণভাবে আলাদা হয়। তাই ইসলামের বৃহত্তর সংহতির স্বার্থে, সকল দেনা পাওনা পরিশোধ করে, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের এখন আপোষে আলাদা হয়ে যাওয়াই মুক্তির ও শক্তি বৃদ্ধির একমাত্র পথ। কারণ কলহরত বৃহৎ পরিবারের চেয়ে সংহত ছোট্ট পরিবারই অধিক শক্তিশালী। কেহ কেহ বলতে পারেন, পশ্চিম পাকিস্তানের সাহায্য ব্যতীত আমরা টিকতে পারব না। ইহা ভুল। কারণ ১৯৬৫ ইংরেজীর লাহোর যুদ্ধের সময় দেখা গেছে পশ্চিম পাকিস্তানীরা পূর্ব পাকিস্তানকে সাহায্য করবে কি, তাহারা তাহদের নিজেদের দেশ পশ্চিম পাকিস্তানকেই রক্ষা করতে পারে না। বরং ঐ যুদ্ধের সময় পশ্চিম পাকিস্তানকে রক্ষা করেছে বাংগালী বৈমানিক আলম ও অন্যান্য বাংগালী সৈন্যের অতুলনীয় সাহস, শৌর্য এবং বীৰ্য্য। ফলে, যুদ্ধের পর পর বাংগালীর বীরত্বের স্বীকৃতি স্বরুপ, মুগ্ধ দু’জন পশ্চিম পাকিস্তানী দুটি যশোগাথা রচনা করে। ঐ যুদ্ধের সময়ে হিন্দুস্তানী সৈন্যগণ, লাহোরের দিকে প্রায় দশ মাইল পাকিস্তানের ভিতরে ঢুকে যেখানে খুটা গেড়েছিল, তাদেরকে তাদের সেই অবস্থান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের বাহাদুর সৈন্যরা এক ইঞ্চিও পিছু হটাতে পারে নি। তাই বাধ্য হয়ে তাসখন্দ চুক্তি করে। এখন বুঝে দেখুন যাহারা নিজেদের দেশ রক্ষা করতে পারে না, তাহারা কিভাবে ১৫০০ (পনরশত) মাইল শত্রদেশ ডিঙ্গিয়ে আমাদেরকে সাহায্য করবে? গত ১২/১১/৭০ইং তারিখের ঘূর্ণি ও গরকীতে পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় ১০ দশ লক্ষ লোক প্রাণ হারায় এবং আরো প্রায় ২৫ (পচিশ) লক্ষ লোক অবর্ণনীয় ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। সারা দুনিয়ার লোক দুর্গত বনি আদমের সাহায্যের জন্য পাগলের ন্যায় ছুটে আসে। ৬,০০০ (ছয় হাজার) মাইল দুর আমেরিকা তার হেলিকপ্টার পাঠায়। রাশিয়া, চীনা, জাপান, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, অষ্ট্রেলিয়া ইত্যাদি দেশ কমবেশী অনুরুপ দূরুত্ব থেকে বেহিসাব সাহায্য এবং বিমান ও জাহাজাদি পাঠায়। পূর্ব পাকিস্তানের এই দুর্যোগকে ইরান তার জাতীয় বলে ঘোষণা করতঃ ইরানী বিমান দিয়ে ঢাকা ও ইরানের মধ্যে আকাশ সেতু রচনা করে। ছোটখাটো ঐ কেয়ামতের সময়ও দেখা গেছে, পশ্চিম পাকিস্তানী সাম্রাজ্যবাদীগণ, পূর্ব পাকিস্তানের টাকায় ক্রীত শত শত বিমান ও হেলিকপ্টার নিয়ে চুপটি মেরে পশ্চিম পাকিস্তানে বসে থাকে। বেহিসাব বিদেশী সাহায্য দ্রব্য যখন পূর্ব পাকিস্তানে স্তুপীকৃত হয়ে যায়, তখন তাহার ভাগ-বাটোয়ারার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানী সাম্রাজ্যবাদীগণ, তাহাদের প্রতিভূ ইয়াহিয়া খান ও অন্যান্য কতিপয় কেন্দ্রীয় কর্মচারীকে পূর্ব পাকিস্তানে প্রেরণ করে। উপরোক্ত দু’টি ঘটনায় এখন ইহা দিবালোকের মত পরিষ্কার হয়ে গেল যে, পশ্চিম পাকিস্তানী সাম্রাজ্যবাদীগণ, পূর্ব পাকিস্তানকে যুদ্ধের সময়ে সাহায্য করা দূরে থাক শান্তির সময়ে পূব পাকিস্তানের ধ্বংসরুপী প্রলয়ঙ্কর বিপদের দিনে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনা। নেমকহারামগুলো, কেন্দ্রে সঞ্চিত পূর্ব পাকিস্তানের সম্পদ এবং যানবাহনাদি দিয়ে পৰ্যন্ত পূর্ব পাকস্তানীকে সাহায্য করতে পাবাড়ায় না। বরং পূর্ব পাকিস্তানের বিপদকে অতিরঞ্জিত করছে বলে, তাহারা বিশ্ববাসীকে অপবাদ দেয়। নেমকহারাম কি আর গাছে ধরে? এই জাতের নেমকহারামদের থেকে যত শীঘ্র আলাদা হওয়া যায় ততই মঙ্গল। এখন সকল পূর্ব পাকিস্তানীর উচিৎ শান্তিপূর্ণভাবে আলাদা হওয়ার জন্য আন্দোলন আরম্ভ করা। উক্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন যদি