পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৬৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

657 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড তৎকালীন রাজনৈতিক অবস্থার উপর পূর্ব | পূর্ব পাকিস্তান | ২৫ ফেব্রুয়ারী, ১৯৭১ ৷ পাকিস্তান কমিউনিষ্ট পাটির প্রস্তাব কমিউনিষ্ট পার্টি রাজনৈতিক প্রস্তাব ১। পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের পর জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অবিলম্বে বসিবে ইহাই সকল জনগণ আশা করিয়াছেন। এবং জনগণ ইহাও আশা করিয়াছেন যে, ঐ অধিবেশনে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে একটি গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র রচিত হইবে, পার্লামেন্টারী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হইবে এবং গণ-প্রতিনিধিত্বশীল সরকারের হাতে দেশের শাসনভার হস্তান্তরিত হইবে। বিলম্বে হইলেও ৩রা মার্চ পরিষদের যে অধিবেশন আহবান করা হইয়াছে তাহা অনুষ্ঠিত হউক ইহাও জনগণের আশা। এই অধিবেশনে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নূ্যনতম ভাবে ৬দফা ও ১১-দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র রচিত হউক ইহাও আজ পাকিস্তানের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের দাবী। ২। কিন্তু জনগণের ঐসব আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের পথে শাসকগোষ্ঠী ও দেশী-বিদেশী প্রতিক্রিয়াশীলরা যাহারা পূর্বাপর গণতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসনের বিরোধিতা করিয়া আসিয়াছে তাহারাই আজ কতকগুলি চক্রান্ত করিতেছে। প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির নয়া নেতা পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ভুট্টোর বর্তমান ভূমিকার মাধ্যমে এই চক্রান্ত প্রকাশ পাইতেছে। ভুট্টো নানা প্রকার গণতন্ত্রবিরোধী ও অযৌক্তিক কথা তুলিয়া পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে বিভেদ ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করিতেছে। ক্ষমতাসীন শাসকচক্রের ভূমিকাও এক্ষেত্রে অনিশ্চিত থাকিয়া যাইতেছে। ৩। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসিবে কি বসিবে না, গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র প্রণীত হইবে কি হইবে না, প্রণীত হইলে উহা প্রেসিডেন্টের অনুমোদন লাভ করিবে কি করিবে না এবং জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হইবে কি হইবে না-এই সমস্ত বিষয়ে একটা গভীর অনিশ্চয়তা বিরাজ করিতেছে। অন্যদিকে কিছু উগ্র বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী তথাকথিত স্বাধীন পূর্ব বাংলার নামে অবাঙ্গালীবিরোধী জিগির তুলিয়া এবং মওলানা ভাসানী স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের আওয়াজ তুলিয়া জনগণের মনে পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণবিরোধী মনোভাব গড়িয়া তুলিয়া অবস্থাকে আরও জটিল ও ঘোরালো করিয়া তুলিতেছে। ৪। এই রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমরা দাবী করিতেছি যে, জনগণের উপরোক্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন ও নির্বাচনে জনগণের রায়ের মর্যাদা রক্ষার জন্য প্রেসিডেন্ট কর্তৃক ঘোষিত ৩রা মার্চ তারিখে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসিতেই হইবে এবং উহার কোরাম পূর্ণ হইলেই ঐ বৈঠককে আইনসিদ্ধ বলিয়া গন্য করিতে হইবে। জাতীয় পরিষদের এই বৈঠকে গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করা হউক। এক্ষেত্রে আমরা দাবী করি যে, পাকিস্তানের জাতিসমূহের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের স্বীকৃতি ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক অধিকারের স্বীকৃতি সম্বলিত গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করা হউক। এই পরিষদ যে শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করিবে প্রেসিডেন্টকে তাহাই অনুমোদন করিতে হইবে এবং জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করিতে হইবে। ৫। কিন্তু প্রতিক্রিয়াশীলদের চক্রান্তে পরিষদের অধিবেশন যদি না বসে, যদি শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করিতে না দেওয়া হয়, যদি গৃহীত শাসনতন্ত্রে প্রেসিডেন্ট সম্মতি প্রদান না করেন বা কোন না কোনভাবে গৃহীত শাসনতন্ত্র নস্যাৎ করা হয়, তথা যদি জনসাধারণের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও নির্বাচনে গণরায়কে বানচাল করা হয় তাহা হইলে