পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

692 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ প্রদেশব্যাপী আন্দোলনের ওপর প্রতিবেদন সাপ্তাহিক স্বরাজ ৬ মার্চ, ১৯৭১ ঢাকা বন্দঃ কারফিউঃ বুলেটঃ হত্যা (স্বরাজের নিজস্ব প্রতিনিধি) হত্যা শুধু নরহত্যা ! রংপুর, চট্টগ্রাম, খুলনা, যশোহর আর ঢাকায় গত ক'দিন ধরে এক বিভীষিকাময় অবস্থা বিরাজ করছে। পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবী করার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ব বাংলার সাত কোটি আদম-সন্তান আক্রোশে ফেটে পড়েছে। শহর, বন্দর আর গ্রামে গ্রামে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ ও জনসভা। সমস্ত বাংলায় পুঞ্জীভূত আক্রোশের প্রচন্ড বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। হরতাল শুধু হরতাল ! পহেলা মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণার সংগে সংগে রাজধানী ঢাকা নগরী ভয়াল ও ভয়ংকর রূপ পরিগ্রহ করলো। প্রথমে শত শত পরে হাজার হাজার বঙ্গসন্তান ঢাকার পথে পথে বেরিয়ে পড়লো। অফিস, আদালত, স্কুল-কলেজ, বাজার-হাট সব কিছুই বন্ধ হয়ে গেল। সংগে সংগে সশস্ত্র পুলিশের দল রাস্তায় টহল দিতে শুরু করলো। শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করলেন দুদিনব্যাপী হরতাল। সন্ধ্যায় ঢাকা নগরীতে সান্ধ্য আইন জারি করা হলো। রাতের অন্ধকার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো সংঘর্ষ। শত-সহস্র ঢাকাবাসী সান্ধ্য আইন ভংগ করে প্রকাশ্য রাজপথে বেরিয়ে এলো। ঢাকা নগরী রক্তাক্ত হলো। কিন্তু বুভুক্ষু মানুষের গগনবিদারী শ্লোগান কেউ দমাতে পারলো না। বুলেট শুধু বুলেট ! মানুষের বুক ঝাঁঝরা হয়ে গেলো। কিন্তু অধিকার সচেতন বাংগালীকে নিশ্চপ করা সম্ভব হলো না। রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড তৈরী হলো রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রক্তবীজের দল অগ্নিমত্রে দীক্ষিত হয়ে ঝাপিয়ে পড়তে লাগলো। সশস্ত্র বাহিনীর ট্রাক আর এমুলেন্স গাড়ী ঘন ঘন রাস্তায় যাতায়াত করতে শুরু করলো। ফার্মগেট, রাজারবাগ, রামপুরা, গভর্ণর ভবনের সম্মুখে ; নবাবপুর, সদরঘাট, নিউমার্কেট প্রভৃতি এলাকায় হাজার হাজার বীর বাঙ্গালী বুলেটের মুখোমুখি হলো। ঢাকায় ২৬ জন নিহত হলো। গভীর রাতে চট্টগ্রাম থেকে ভয়াবহ আর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের খবর এলো। একদিনের সংঘর্ষে এতো লোকের শাহাদাৎ বরণ ইতিহাসে বিরল। চট্টগ্রামের দেওয়ানহাট, রেলওয়ে কলোনী, টাইগারপাস মানুষের রক্তে পিচ্ছিল হয়ে উঠলো। একদিনে নিহতের সংখ্যা ৯৭-এ দাঁড়ালো। চটটগ্রাম হাসপাতালের মর্গ লাশে ভরপুর হয়ে গেলো। গুলী, বুলেট, চাকু, বেয়োনেট, লাঠি আর এ্যাসিড বালবের যথেচ্ছ ব্যবহারে চট্টগ্রামে নাগরিক জীবন দারুণভাবে বিপর্যস্ত হলো। তবু নতুন শপথে বলীয়ান চট্টবাসী বার বার মৃত্যুর গহবরে হানা দিলো। নিহতের সংখ্যা ১২০-এ উপনীত হলো। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের চল্লিশ বছর পর চট্টগ্রামবাসী আবার নয়া ইতিহাস রচনা করলো। এরপরেই খুলনা আর রংপুরের বীর সংগ্রামের সংবাদ এসে পৌছালো। খুলনায় প্রতিবাদ শোভাযাত্রার উপর বর্বরোচিত আক্রমণ হলো। ন’জন নিহত হলো।