পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

762 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড প্রশ্নঃ আপনি কি আপনার চার-দফা দাবী নিয়ে আলোচনা করেছেন? উত্তরঃ যখন আমি প্রেসিডেন্টের সাথে আলোচনা বৈঠকে মিলিত হয়েছি তখন অবশ্যই রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আমার দাবী নিয়ে আলোচনা করেছি। প্রশ্নঃ মঙ্গলবার আলোচনার সময় নির্ধারিত হয়েছিল, আজ তা কেন হয়নি? উত্তরঃ এটা আমাদের উপর ছেড়ে দিন। প্রশ্নঃ আপনাদের মধ্যকার আলোচনা কি সফল হয়েছেঃ উত্তরঃ সফল হয়েছে কি বিফল হয়েছে তা আমি বলতে পারবো না। আমি শুধু এইটুকু জানি যে, সংলাপ অব্যাহত রয়েছে। প্রশ্নঃ পরবর্তী আলোচনা কবে হবে? উত্তরঃ আজ রাতে (বুধবার) অথবা বৃহস্পতিবার পরবর্তী আলোচনার কর্মসূচী ধার্য হতে পারে। প্রশ্নঃ পরবর্তী আলোচনায় আপনি কি আপনার দলীয় অন্যান্য নেতৃবৃন্দকেও নিয়ে যাবেন ? উত্তরঃ আমি এখন তা বলতে পারছি না। সাংবাদিকদের সাথে শেষ পর্যায়ে শেখ সাহেবকে খুব প্রফুল্ল দেখা যায়। এ সময়ে জনৈক বিদেশী সাংবাদিক তাঁকে প্রশ্ন করেন যে, এ হাসি থেকে কি আমরা কোন কিছু ধরে নিতে পারি? শেখ সাহেব তখন সহস্যে বলেন, “আমি সব সময়েই হাসতে পারি এবং এমনকি জাহান্নামেও হাসতে পারি।” জন্মদিন বিদেশী সাংবাদিকরা এ পর্যায়ে শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর ৫২ তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানালে তিনি বলেন, “১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ আমার জন্মদিন। আমি জীবনে কখনও আমার জন্মদিন পালন করিনি। আপনারা আমার দেশের মানুষের অবস্থা জানেন, তাদের জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই। যখন কেউ ভাবতেও পারে না মরার কথা তখনও তারা মরে। যখন কেউ ইচ্ছে করে তখনও তাদের মরতে হয়।” গভীর দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে শেখ মুজিব আরও বলেন, “আমার জন্মদিন কি, মৃত্যু দিবসই বা কি? আমার জীবনই বা কি? মৃত্যুদিন আর জন্মদিবস অতি গৌণভাবে এখানে অতিবাহিত হয়। আমার জনগণই আমার জীবন।” প্রেসিডেন্টের সাথে আলাপ-আলোচনার ধারায় তাঁর (শেখ মুজিব) মন ভার হয়েছে কিনা জিজ্ঞাসা করা হলে শেখ মুজিব উপরোক্ত জবাব দেন। তিনি বলেন, আমার মন ভার হতেই পারে না। জনসাধারণের কারও মন ভার হয়নি। তারা লক্ষ্য অর্জনের জন্যে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।