পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

811 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড রায় প্রদান করিয়াছে, তাতে তাদের বিচলিত বোধ না করিয়া উপায় নাই। বিরোধীদল সংগঠিত হইবার পরে- বিশেষতঃ মোহতারেমা ফাতেমা জিন্নাহর মত দল-নিরপেক্ষ, নিঃস্বার্থ সর্বজনমান্য নেত্রীর প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করিতে অবতীর্ণ হইবার পরে জনমতের যে প্লাবন সৃষ্টি হইয়াছে, তারই অভিব্যক্তি হিসাবে ২৯শে তারিখের সর্বত্র অভূতপূর্ব হরতাল, সভা ও শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। মনকে অন্যভাবে সান্তনা দিবার চেষ্টা করা হইলেও জনমতের এই গতিধারা লক্ষ্য করিয়া ক্ষমতাসীন মহল ত্ৰাসিত ও হতোদ্যম। এই মুহুর্তে তাদের মানসিক ভারসাম্য হারান অস্বাভাবিক কিছু নয়। অতীতেও দেখা গিয়াছে যে কোন স্বার্থসর্বস্ব ক্ষমতাসীন দলের পতনের পূর্বাহ্নে তারা দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হইয়া যা খুশি বলেন, যা খুশি করেন। তাই, প্রেসিডেন্ট আইয়ুব কর্তৃক রাজনৈতিক দলগুলকে গালিগালাজ করা, তাদেরকে বন্য বিড়াল আখ্যায়িত করাসর্বোপরি মোহতারেমা ফাতেমা জিন্নাহর দেশপ্রেমের উপরও কটাক্ষা করা ভবিষ্যতের পরাজয়েরই লক্ষণ। ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব মোহতারেমা ফাতেমা জিন্নাকে সহজেই পরাজিত করিবার দম্ভেক্তি করিয়াছেন। জনমতের প্রতি লক্ষ্য থাকিলে এই মুহুর্তে তার এই দাবী অশোভন ও অসময়োচিত। তিনি যদি নিজের জয় সম্পর্কে এতদূর স্থিরনিশ্চিত হন, তাহা হইলে মৌলিক গণতন্ত্রীদের মারপ্যাঁচ বাদ দিয়া তাঁকে প্রাপ্তবয়স্কদের সরাসরি ভোটে মিস জিন্নাহকে এই চ্যালেঞ্জ দিলেই তার দম্ভোক্তির সার্তকতা থাকিবে। অন্যথায়, গোটা দেশ যেখানে আজ একদিকে, সেখানে এই ধরনের দম্ভোক্তির অর্থ কি? ইহা কি মৌলিক গণতন্ত্রীদের উপর অবাঞ্ছিত সম্পর্কে এবং সর্বশেষ জামাতে ইসলামী বিরোধী দলে থাকিবে না এবং মিস জিন্নাহকে সমর্থন দিবে না বলিয়া অলীক প্রচার করিয়া নিরাশ হইয়াছেন, সেইরূপ আজিকার একটানা জনমতের প্রেক্ষিতে মৌলিক গণতন্ত্রীর উপর প্রভাব বিস্তারের স্বপ্নও আলীকে প্রমাণিত হইবে। রাজনৈতিক দলের সমালোচনা অবাঞ্ছিত কিছু নয়। কিন্তু ক্ষমতাসীন দল কর্তৃক বিরোধীদলসমূহের আদর্শ ও কর্মপন্থার ভুল ব্যাখ্যা প্রদান-বিশেষতঃ তাদের দেশপ্রেমের উপর কটাক্ষা করা জনসাধারণ কোন কালেই সমর্থন করে নাই। বরং এই ধরনের সমালোচনা ও গালাগালিতে যারা লিপ্ত হইয়াছে, জনমত তাদের বিরুদ্ধে গিয়াছে এবং তাদের ভরাডুবি হইয়াছে। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দল উঠিতে বসিতে তাদের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হইয়াছিল, ফিল্ড মার্শাল আইয়ুবকে তাহা না জানা থাকিলেও দেশবাসীর তাহা জানা আছে। ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে যে ভাষায় গালাগালি করিয়াছেন, তাহা পরিতাপজনক। দেশব্যাপী বিরোধী দলকে যেমন চেনেন, তার দলকে তেমনি চেনেন। আওয়ামীলীগ সম্পর্কে তিনি যে মন্তব্য করিয়াছেন, তার হেতু কি তা আমরা কিছুটা আঁচ করিতে পারি। তিনি বলিয়াছেন যে, আওয়ামী লীগ জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করে, পাকিস্তান শক্তিশালী হউক এমনি ব্যবস্থাদিতে তাদের আস্থা নাই। তাঁর এই ধারণার মূলে কি রহিয়াছে, তা ব্যক্তিগতভাবে আমার কিছু কিছু জানা আছে। আমি আওয়ামী লীগ বা কোন দলের মুখপাত্র হিসাবে নয়, একজন সাংবাদিক এবং এই প্রদেশের একজন অধিবাসী হিসাবে পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের দাবী-দাওয়া নিয়া শুধু ইত্তেফাকে এবং ঢাকা টাইমসে লিখিত বিভিন্ন প্রবন্ধেই নয়, প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের সহিতও সরাসরি একাধিকবার খোলাখুলি আলোচনা করিয়াছি। ১৯৬১ সালের ১৬ই আগষ্ট ঢাকাতে সম্পাদকদের এক সভায় আমরা বলিয়াছিলাম যে, আমরা পার্লামেন্টার ধরনের শাসনতন্ত্র চাই, যাতে পূর্ব ও পশ্চিম পকিস্তান দেশের রাজনৈতিক শাসন-ব্যবস্থার সমান অংশ ও সমমর্যাদা ভোগ করিতে পারে। আর যদি প্রেসিডেন্সিয়াল ধরনের শাসন-ব্যবস্থাই তার (প্রেসিডেন্টের) একান্ত কাম্য হয়, তবে