পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

814 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ইত্তেফাক পত্রিকার মিঠো-কড়া’ শীর্ষক দৈনিক ‘ইত্তেফাক’ ২০ এপ্রিল, ১৯৬৫ আরও একটি উপ-সম্পাদকীয় মিঠে-কড়া ভিমরুল* মূলধন গঠন, সরকারী উন্নয়ন ব্যয়, বৈদেশিক সাহায্য বন্টন, বৈদেশিক মুদ্রা বন্টন, দেশরক্ষা ও প্রশাসনিক বিভাগে চাকুরী, সরকারী রাজস্ব বণ্টন, শিক্ষা সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সরকারী আনুকূল্য ও সুযোগসুবিধা তথা জাতীয় জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তান অবিরাম কিভাবে বঞ্চিত হইয়া আসিতেছে, তাহা অধুনা বহুল আলোচনার বিষয়বস্ত। অতীতে প্রথম যখন এসব বৈষম্য বঞ্চনার কথা তোলা হয়, তখন অপরাঞ্চলের কায়েমী স্বার্থের মুখপাত্ৰগণ সরাসরি ইহার অস্তিত্ব অস্বীকার করিয়া প্রাদেশিকতা’, ‘আঞ্চলিকতা, দেশানুগত্যহীনতা ইত্যাদি তিরস্কারের দ্বারা সমস্যাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু আগুনকে যেমন ছাই-চাপা দিয়া রাখা যায় না, তেমনি দুই অঞ্চলের গুরুতর বৈষম্যের বাস্তব সত্যকেও শেষ পর্যন্ত ঢাকা দেওয়া সম্ভব হয় নাই। ক্ষমতাসীন মহলের রক্তচক্ষু এবং রাজনৈতিক নির্যাতনের তাপ সহ্য করিয়াও জনগণ বিষয়টি তুলিয়া ধরিয়াছে। অবশেষে প্রধানতঃ কয়েকজন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদের সত্যানুসন্ধিৎসা ও বলিষ্ঠতার গুণেই সমস্যাটির প্রকৃত স্বরূপ পরিস্কারভাবে অনুধাবনযোগ্য হইয়া উঠে। আজ অবশ্য সরকারীভাবে সমস্যাটি স্বীকৃত এবং দায়িত্বশীল সরকারী মুখপাত্রগণও এ সমস্যার প্রতিবিধানকল্পে রীতিমতো মুখর। কিন্তু ইত্যবসরে এ ব্যাপারে নূতনতর একটি কথা চালু করার চেষ্টা চলিতেছে। বলা হইতেছে যে, সরকার যখন সমস্যাটির কথা স্বীকার করিয়া লইয়াছেন এবং উহার প্রতিকারের সংকল্প প্রকাশ করিতেছেন, তখন এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা ও লেখালেখি বন্ধ হওয়া উচিত। কারণ, বিষয়টি অধিক আলোচনা নাকি দুই প্রদেশের মধ্যে তিক্ততা বাড়াইয়া তুলিবে এবং তার ফলে জাতীয় সংহতি ও ঐক্য বাধাগ্রস্ত হইবে। বলা বাহুল্য, অতীতে দুই প্রদেশের বৈষম্যের কথা উঠিলে যে মহলটি উহাকে ‘প্রাদেশিকতা’ ও ‘আঞ্চলিকতা’ বলিয়া চিৎকার জুড়িয়া দিত, সেই বিশেষ মহলটিই উপরোক্ত যুক্তিটির উদ্ভাবক। এই যুক্তি যে প্রকৃতপক্ষে সমস্যাটি হইতে দৃষ্টি সরাইয়া নিবার একটি কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয় তাহা বলার অপেক্ষা রাখে না। কেননা, দুই প্রদেশের মধ্যে তিক্ততা যদি বৃদ্ধি পায়, তাহা হইলে উহা বৃদ্ধি পাইবে বৈষম্যের বাস্তব সমস্যাটিরই জন্য-তৎসংক্রান্ত আলোচনার জন্য নয়। সমস্যাটির প্রতিবিধান হইলে তিক্ততা বৃদ্ধির আশংকা বিদূরিত হইতে পারে। সমস্যাটি অক্ষত রাখিয়া তৎসংক্রান্ত আলোচনা বন্ধ করিয়া দিলে তিক্ততা কিভাবে দূর হইবে আমরা বুঝি না; বরং তদবস্থায় সন্দেহ সংশয় আরো বৃদ্ধিই পাইবে। তাই বারবার আমরা এ কথাই বলিয়া আসিয়াছি যে, তিক্ততার আসল কারণকে দূর করিতে হইবে, লক্ষণগুলিকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা অর্থহীন। দুই অঞ্চলের অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ সম্পর্কে সরকারী মহলের প্রতিশ্রুতির মাত্রা অধুনা বৃদ্ধি পাইলেও সত্যিকার কাজ ঠিক সেভাবে হইতেছে কিনা, বলা কঠিন। আগামী কুড়ি বৎসরের মধ্যে দুই অঞ্চলের মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠিত হইবে বলিয়া যে সব আশ্বাসবাণী উচ্চারিত হইতেছে, তৎসম্পর্কে সজ্ঞান মহলে আদৌ কোন আস্থার ভাব সৃষ্টি হইতেছে না।

  • আহমেদুর রহমান (ভিমরুল)।