পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/১০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৭৭

আর-এর দুর্জয় সৈনিক শত্রুপক্ষের এক ব্যাটালিয়ন সৈন্য শক্তির অব্যহত শেলিং এবং উপর্যুপরি আক্রমনের মুখে ৩ দিনেরও বেশী সময় তাদের অবস্থান আগলে রেখে ছিলো। কাজেই এই পরাজয় তাদের অদম্য সাহস ও বিক্রমের মহিমাকে ম্লান করে দিতে পারে না।

॥ ভারতের সাথে যোগাযোগ ॥

 এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই আমি অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সংগে যোগাযোগ করার জন্য রামগড় যাই। সেখান থেকে সাবরুম গেলে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর (বি এস এফ) অফিসাররা আমার সঙ্গে কথা বলেন এবং অবিলম্বে আগরতলার নেতৃস্থানীয় কর্মকর্তাদের সাথে আমার সাক্ষাতের ব্যবস্থা করেন। প্রয়োজনবোধে ভারতীয় রাজধানীতে যাওয়ার ব্যবস্থাও তারা করে রাখেন।

 ২রা এপ্রিল আমি আগরতলা পৌঁছালে সরাসরি আমাকে বিএসএফ-এর সিনিয়র অফিসার মিঃ কালিয়ার অফিসে নিয়ে যাওয়া হলো। আমি তার কাছে আমাদের লড়াইয়ের অবস্থা বর্ণনা করে সামরিক সাহায্যের অনুরোধ জানালাম। মিঃ কালিয়া অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন বিধায় আমাকে অপেক্ষা করতে বললেন। অপেক্ষা করা ছাড়া আমার আর কোন গত্যন্তর ছিলো না। আমাকে আগরতলার এক অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হলো এবং সেখানেই এক কক্ষে আমি সারাদিন রইলাম। সেখানে সাদা পোশাক পরিহিত কয়েকজন ভারতীয় অফিসার পর্যায়ক্রমে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। তারা আমার কাছে থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থান, তাদের শক্তি, কোন ধরনের অস্ত্র তারা ব্যবহার করছে ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করলেন। তারা আমার অতীত জীবন এবং কি কারণে আমি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করেছিলাম সে বিষয়েও প্রশ্ন করলেন, ঘটনাবলী সম্পর্কে আমার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি, পাকবাহিনীর সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং স্বাধীনতা অর্জনে আমরা কি কি উদ্যোগ নিয়েছি তাও জানতে চাইলেন।

 এদের সেঙ্গে আমার আলোচনা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন এবং আন্তরিকতার মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। তারা খুবই সহানুভূতিশীল ছিলেন। তবে এদের আলোচনার ধারা থেকে আমি বুঝতে পারি, এরা সকলেই ভারতীয় সামরিক বাহিনী এবং বি এস এফ-এর গোয়েন্দা বিভাগের লোক। পরের দিন নেতৃস্থানীয় ভারতীয় অফিসারদের সঙ্গে আমার দীর্ঘ আলোচনা হলো। বিকালের দিকে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী শ্রী শচীন সিং-এর সঙ্গে আমি বৈঠকে মিলিত হলাম। তার আচরনও ছিলো বন্ধুসুলভ। তার কাছেও আমি অস্ত্রশস্ত্র এবং কিছু জরুরী জিনিসপত্রের জন্য অনুরোধ জানাই।

 মুখ্যমন্ত্রী আমাকে আশ্বাস দিয়ে বললেন, দিল্লী থেকে জবাব এলেই তিনি আমার জন্য কিছু সাহায্যের ব্যবস্থা করতে পারবেন। এ সময় আমাকে দরকার হলে দিল্লী যাবার জন্যও প্রস্তুত থাকতে বলা হলো।

 পরদিন চট্টগ্রাম জেলার কয়েকজন রাজনৈদিক নেতা আগরতলা পৌঁছলেন। তাদের নিয়ে আমি পুনরায় শ্রী শচীন সিং-এর সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি আমাকে জানালেন যে, ৯২তম বি এস এফ ব্যাটালিয়ন থেকে জরুরী ভিত্তিতে আমি কিছু অস্ত্রশস্ত্র পেতে পারি। আমার অন্যন্য জিনিসপত্রের চাহিদা সম্পর্কেও তাকে অবহিত করতে বললেন। আমি তার কামরার এক কোনায় বসে প্রায় ১০ মিনিটের মধ্যে প্রয়োজণীয় জিনিসপত্রের একটি তালিকা প্রস্তুত করে ফেলি। আওয়ামী লীগ নেতাদের হাতে সেটি তুলে দিয়ে আমি তখনই চট্টগ্রামের পথে আগরতলা ত্যাগ করলাম। পথে ৯২তম বি এস এফ এর কমাণ্ডিং অফিসার কর্নেল ঘোষের সঙ্গে আলোচনা করলাম। তিনি ততক্ষনে আমাকে কয়েকটি লাইন মেশিনগান, রাইফেল, হ্যাণ্ডগ্রেনেড এবং কিছু গোলাবারুদ সরবরাহ করার জন্য তার ব্যাটালিয়নকে নির্দেশ দিয়ে ফেলেছেন এবং সেগুলো ইতিমধ্যেই সাবরুম থানায় পৌঁছানো হয়ে গিয়েছিলো। জিনিসগুলো আমাকে দেয়ার জন্যে ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার থেকে বি-এস-এফ এর ক্যাপ্টেন মেহেক সিংকে আমার সঙ্গেই পাঠানো হয়।