পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/১১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৯২

পরিচালনাকালে নায়েক নায়েব আলী পাকবাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছিলেন। এমনি অবস্থায় আমি নিজে মাত্র ১০জন সৈন্য নিয়ে ৯ই এপ্রিল হাওলাদার হামদু মিঞা, নায়েক তাহের এবং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেণ্টের কয়েকজন বি-ডি-আরসহ সকলা ৮-৩০ মিঃ সময়ে কৃষি ভবনে অবস্থানরত পাক ঘাটি আক্রমন করি। আমার আক্রমনে প্রায় ২০জন পাকসেনা (১জন ক্যাপ্টেন ও ১জন সুবেদারসহ) নিহত হয় এবং তারা ঐ পোস্ট ছেড়ে পালিয়ে যায়।

 প্রঃ তারপর?

 উঃ তারপর আমি কালুরঘাট ব্রীজের চট্টগ্রামের দিক পুনর্দখল করেছিলাম। ১০ই এপ্রিল' ৭১ খবর পেলাম পাক সেনাবাহিনী পটিয়ার কালাপুলের দিক থেকে আমাদের ওপর আক্রমন করার চেষ্টা করছে। আমি তখনই ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান চৌধুরীকে কিছু সৈন্য দিয়ে পটিয়ায় কালাপুলে পাঠালাম। ১১ই এপ্রিল ভোরবেলা আমি নিজে পটিয়ায় কালাপুলের অবস্থা যানতে পেলাম। ঐ তারিখ সকাল ৮-৩০ মিঃ সময়ে ক্যাপ্টেন ওয়ালি আমাকে খবর পাঠালেন পাক সেনারা প্রায় সাত থেকে আটশত সৈন্য নিয়ে কালুরঘাট আক্রমন করেছে; ক্যাপ্টেন হারুন গুরুতররূপে আহত, লেঃ শমসের মবিন চৌধুরীর কোন খবর পাওয়া যাচ্ছে না। এ সংবাদ পেয়ে আমি ওয়ালিকে বললামঃ “আমাদের লোকদের একত্রিত করবার চেষ্টা কর, পরিস্থিতি ভালভাবে জেনে নাও, আমি আসছি”। সকাল ৯টার দিকে আমি কালুরঘাট এসে পৌঁছাই। ওখানে গিয়ে আমি মেজর জিয়ার সাথে অয়ারলেসে যোগাযোগের চেষ্টা করলাম।

 পরে আমি তাদের সবাইকে পিছনে সরে আসতে বললাম। লেঃ মাহফুজকে মদনঘাট ডিফেন্সে অবস্থান করতে বললাম যতক্ষণ না আমার কালূরঘাটের ডিফেন্সের সবাই পিছু হটতে পারে। আমরা সবাই কালুরঘাট থেকে পটিয়াতে একত্রিত হলাম। এবং সেখান থেকে সবাই বান্দরবন রওনা হই। আমার সাথে সৈন্য ছিল প্রায় ৪৫০জন (তৎকালীন ইপি আর পুলিশ এবং বেঙ্গল রেজিমেণ্টসহ)।

 আমরা ১২ই এপ্রিল বান্দরবান পৌঁছেছিলাম। ঐ তারিখেই কাপ্তাই হয়ে রাঙ্গামাটি পৌঁছি। রাঙ্গামাটিতে আমরা ডিফেন্স নেবার পর মহালছড়িতে ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টর স্থাপন করলাম। লেঃ মাহফুজ শত্রুর ওপর আঘাত হেনে চলেছিল। কিন্তু পাকবাহিনীর ব্যাপক আক্রমন টিকে থাকা দুরুহ বুঝে পাশ্ববর্তী নোয়াপাড়া নামক স্থানে ডিফেন্স নেয়। সেখান থেকে তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাতে সার্থকভাবে ডিফেন্স নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করলেন। শেষ পর্যন্ত আমার নির্দেশ মোতাবেক ১৪ই এপ্রিল লেঃ মাহফুজ তার ২০০ এর কিছু বেশী সৈন্য নিয়ে মহালছড়িতে আমার সঙ্গে মিলিত হন। ছুটি ভোগরত ক্যাপ্টেন আফতাব কাদের (আর্টিলারী) আমার কাছে ঐ তারিখে আসেন। বঙ্গ সন্তান সাহসী বীর ক্যাপ্টেন আফতাব কাদেরকে মেজর জিয়া আমার কাছে পাঠিয়েছিলেন। তাকে আমার সৈন্যদের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন অফিসারের নেতৃত্বে ডিফেন্স নিতে পাঠালাম।

 আমার রক্ষাব্যূহকে যেসব স্থানে অবস্থান দিলাম সেগুলি ছিলঃ

 ১। ক্যাপ্টেন আফতাব কাদেরের নেতৃত্বে প্রায় ১০০ সৈন্য রাঙ্গামাটির খাগড়াতে।

 ২। ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান চৌধুরীর নেতৃত্বে ১০০ সৈন্য রাঙ্গামাটির মধ্যস্থলে বুড়িঘাটে।

 ৩। লেঃ মাহফুজের নেতৃত্বে প্রায় ১০০ সৈন্য রাঙ্গামাটির বরকলের মধ্যস্থলে।

 ৪। সুবেদার মুত্তালিবের নেতৃত্বে প্রায় ১০০ সৈন্য রাঙ্গামাটির কুতুবছড়ি এলাকাতে।

 অপরদিকে ১৫ই এপ্রিল পাকবাহিনী রাঙ্গামাটি শহরে পৌঁছে যায়। রাজা ত্রিদিব রায় পাকবাহহীকে আহবান করে আনলেন।

 ১৬ই এপ্রিল এর মধ্যে আমাদের সবাই নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান নিলেন। ক্যাপ্টেন ওয়ালিকে মেজর জিয়ার নির্দেশানুযায়ী রামগড় পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। ঐদিন ক্যাপ্টেন কাদের তার বাহিনী নিয়ে খাগড়া রেস্ট হাউজে