পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৯৩

একজন অফিসারসহ এক প্লাটুন পাকবাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে ক্যাপ্টেন কাদের পাকবাহিনীর অফিসারসহ প্রায় ২০জন পাক সৈন্যকে নিহত করতে সমর্থ হন। বাকী সৈন্য পালিয়ে যায়। অপরদিকে আমাদের মুক্তিবাহিনীর পক্ষে কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ক্যাপ্টেন কাদের নিরাপদে তার ঘাটিতে ফিরে আসেন। ১৭ই এপ্রিল পাকবাহিনীর প্রায় ২০জন সৈন্য একটি লঞ্চযোগে রেকি করতে বেরিয়েছিল। ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান ওত পেতে ছিলেন। কিছুক্ষণ পরই পাকসেনারা বুঝতে পেরেছিল যে তারা মুক্তিবাহিনীর রক্ষাব্যুহের কাছাকাছি চলে এসেছে। পাক সেনারা গুলি ছোড়া শুরু করে। কিন্তু ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান তবুও চুপ করেছিলেন। সম্পূর্ন লঞ্চটি তার এলাকায় চলে আসা মাত্রই তিনি গুলি চালানো শুরু করলেন। এতে লঞ্চসহ অধিকাংশ পাকবাহিনী ধ্বংস হয়ে যায়। কয়েকজন পালাতে সমর্থ হয়েছিল। এই যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর ২জন মাত্র আহত হয়েছিলেন।

 ১৮ই এপ্রিল পাক সেনারা দু'টি লঞ্চ ও একটি স্পীডবোটে সৈন্য নিয়ে চিঙ্গী নদী দিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল। লেঃ মাহফুজের কিছু সৈন্য হঠাৎ গুলি ছুড়ে বসেন।

 পাক সেনারা কিছু ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে পিছু হটে দূরে গিয়ে ডিফেন্স নিয়ে লেঃ মাহফুজের ওপর আর্টিলারী আঘাত হানতে থাকে। উভয় পক্ষের সংঘর্ষে লেঃ মাহফুজের কোন ক্ষতি হয়নি। তবে, পাক সেনাদের কিছু ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু তাদের চাপ আমাদের ওপর ক্রমে বাড়তে থাকে।

 ১৮ই এপ্রিল বিকেল ৩টায় সুবেদার মুত্তালিব তাঁর দল নিয়ে কুতুব ছড়িতে পাকবাহিনীর ৬ টি চলমান সৈন্যভর্তি ট্রাকের উপর এ্যামবুশ করে। এই এ্যামবুশ ৩০ থেকে ৪০ জন পাকসেনা নিহত ও দুই- তিনটি গাড়ী দ্বংস হয়।

১৯ শে এপ্রিল ৩ টায় পাক সেনাদের একটি বড় রকমের দল ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান চৌধুরীর ওপর বুড়িঘাটে ব্যাপকভাবে আক্রমন করে। পাক সেনারা ঐ সময় একটি জীপ থেকে তিনটি মর্টার ছুড়েছিল। তাদের বাহিণী ব্যাপকভাবে আক্রমন চালিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল। এমনি পরিস্থিতিতে ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান কিছুতেই থাকতে পারছিলেন না। তখন ল্যান্স নায়েক মুন্সী আবদুর রব (৮ম বেঙ্গল রেজিমেণ্ট) অটোমেটিক হাতিয়ার মেশিনগান হাতে তুলে নিয়ে বললেনঃ 'আমি গুলি চালিয়ে যাচ্ছি আপনি বাকী সৈন্যদের নিয়ে পিছু হটে যান'। ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান প্রায় ১০০ মুক্তিবাহিনী নিয়ে নিরাপদে পিছু হটলেন। কিন্তু ল্যান্স নায়েক মুন্সি আবদুর রব পাকবাহিনীর শেলের আঘাতে প্রাণ হারালেন। সেদিন মুন্সী আবদুর রব মুন্সীকে সরকার বীর শ্রেষ্ঠ উপাধি দিয়েছিলেন। ২০শে এপ্রিল লেঃ মাহফুজ ঐ স্থানে যান এবং মুন্সীর ছিন্ন দেহের অংশবিশেষ এবং কিছু গোলাবারুদ নিয়ে ঘাটিতে ফিরে আসেন।

 ঐ দিনই আমি লেঃ মাহফুজকে বরকলে পাঠিয়েছিলাম মিজো উপজাতিকে আমাদের স্বার্থে কাজ করার পক্ষে মত বিনিময়ের জন্য। লেঃ মাহফুজ বহু কষ্টে সুবলম পর্যন্ত পৌঁছে খবর পেলেন যে, পাকিস্তানীরা মিজোদের ইতিমধ্যেই হাত করে নিয়েছে। আমি আরো খবর পেলাম পাকবাহিনী মিজোদের নিয়ে মহালছড়ির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ২১শে এপ্রিল পাকবাহিনীর একটি কোম্পানী বন্দুকভাঙ্গা নামক স্থানে লেঃ মাহফুজের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। সংঘর্ষে পাকসেনারা পিছু হটে চলে যায়। আমাদের কোন ক্ষতি হয়নি।

 ২৩শে এপ্রিল পাকবাহিনীর প্রায় ২০০ সৈন্য রাঙ্গামাটি থেকে মহালছড়ির দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। আমি ক্যাপ্টেন কাদের এবং লেঃ মাহফুজকে পাঠালাম প্রতিরোধ করার জন্য। ২৪মে এপ্রিল কুতুবছড়ি নামক স্থানে অফিসারদ্বয় পাক বাহিনীর মুখোমুখি হন। এই যুদ্ধে পাকবাহিনী বেশ কিছু ক্ষতি স্বীকার করে।

 ২৫শে এপ্রিল খবর পেলাম চিঙ্গী নদী এবং নার্নিয়ার চর বাজার হয়ে পাকবাহিনী মহালছড়ি অভিমুখে অগ্রসর হচ্ছে। মাহলছড়ি আমাদের ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার ছিল।