উপর শত্রুদের এ্যামবুশ করে। এ এ্যামবুশের ফলে শত্রুদের ৯ জন লোক নিহত হয় এবং ১১টা জীপ ও ১টা ডজ ধ্বংস হয়ে যায়। শত্রুরা তাদের মৃতদেহগুলো রেখেই পালায়ন করে। পেট্রোল পার্টি ২ জন পাকসেনাকে জীবিত অবস্থায় ধরতে সক্ষম হয়। মে মাসের মাঝামাঝি ফেনী এবং লাকসামের মাঝে রেলওয়ে ব্রিজ উড়িয়ে দেওয়া হয়। রেলওয়ে ব্রিজের উপর পাক সেনাদের ১০ জন পহারারত ছিল। তাদেরকেও সে সঙ্গে মেরে ফেলা হয়।
২৬ শে মে ক্যাপ্টেন আইনউদ্দিনের নেতৃত্বে ১টি শক্তিশালী দল কসবার উত্তরে ইমামবাড়ীর নিকট ১৫০ পাউণ্ড এক্সপ্লোসিভ লাগিয়ে রেলওয়ে ব্রিজ ধ্বংস করে দেয়। এরপর এ দলটি শত্রুদের জন্য এ্যামবুশ করে বসে থাকে। শত্রুরা ব্রিজের দিকে অগ্রসর হয়। শব্দ শুনে আমাদের দল তৈরী হয়। ব্রিজ পর্যন্ত পৌঁছার আগেই পাক সেনারা এ্যামবুশ- এর ভয়ে সেখান থেকে ফেরত চলে যায়। ক্যাপ্টেন আইনউদ্দিন পরে তার দলটিকে নিয়ে কর্নাল বাজারে শত্রু অবস্থানের উপর অকস্মাৎ আক্রমণ চালায়। এ আক্রমণের সময় ৭৫- এমএম আর আর এর সাহায্যে শত্রুদের কয়েকটি ব্যাংকার ধ্বংস করে দেয় এবং সঙ্গে সঙ্গে ৩ ইঞ্চি মর্টারের সাহায্যেও গোলাবর্ষণ করে। এতে শত্রুদের ৮জন সেনা নিহত হয় এবং কয়েকটি ব্যাংকার ধ্বংস হয়।
আখাউড়া থেকে আমাদের অবস্থান পরিত্যাগ করার পর আমি আমার দলকে আখাউড়ার উত্তরে আজমপুর গ্রামে সিঙ্গারবিলে পজিশন নেওয়ার নির্দেশ দিই। লে. হারুনের নেতৃত্বে ১টি ইপিআর কোম্পানী এবং ৪র্থ বেঙ্গল-এর ১টি প্লাটুন আজমপুর রেলওয়ে কলোনী পছনে মাধবপুর সড়ক এবং রেল লাইনের উপর প্রতিরক্ষাব্যূহ গঠন করে। এ জায়গাটা ছিল একটু উঁচু এবং এর ডান দিকে তিতাস নদী থাকাতে এ অবস্থানটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। পাকসেনারা প্রথমে বুঝতে পারেনি যে আমরা এ জায়গাতে প্রতিরক্ষা অবস্থান নিয়েছি। শত্রুদল আখাউড়া দখল করার পর ভেবেছিল যে এবার তারা সিলেট আখাউড়া লাইনে ট্রেন যোগাযোগ পুনরায় চালু করবে। এ জন্য সিলেটের দিক থেকে ১টি লাইন ইঞ্জিন এবং কয়েকটি বগিসহ মাধবপুর থেকে দক্ষিণে পাঠায়। সিঙ্গুরবিল স্টেশনের কিছু উত্তরে পুলের নিকট লে. হারুন কয়েকটি এ্যাণ্টি ট্যাংক মাইন রেল লাইনের নিচে আগেই পুঁতে রেখেছিল। এ ট্রেনটি লাইনের উপর দিয়ে আসার সময় মাইনের আঘাতে লাইনচ্যুত হয়ে যায়। এর কিছুদিন পরে পাকিস্তান বাহিনীর কিছু সৈনিক এবং রেলওয়ে কর্মচারীরা ক্রেন নিয়ে আসে এ ট্রেনটি তোলার জন্য। কিন্তু পাক সেনাদের এ দলটি লে. হারুনের পূর্ব পরিকল্পিত এ্যাবমুশে পড়ে যায়। এর ফলে প্রায় ২০ জন পাক সেনা নিহত এবং তারা রেলওয়ে কমর্চারীসহ সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এর কিছুদিন পর লে. হারুন সিঙ্গারবিল রেলওয়ে ব্রিজ ১৪০ পাউণ্ড এক্সপ্লোসিভ লাগিয়ে উড়িয়ে দেয়। পাকবাহিনী এ সেতুটি মেরামত করার জন্য রেলওয়ে কর্মচারী ও আরো সরঞ্জাম সিঙ্গারবিল রেলওয়ে স্টেশনে জমা করে। এরপর সেসব সরঞ্জাম তারা রেলওয়ে সেতুটির নিকট নিজেদের তত্ত্বাবধানে এবং পাহারাধীনে আনে। লে. হারুনের মার্টার প্লাটুন সুবেদার শামসুল হক (বর্তমানে সুবেদার মেজর) এ সময়েরই অপেক্ষায় ছিল। পাকবাহিনী কয়েকদিন পর সকালে যখন তাদের সেতু মেরামতের কাজ আরম্ভ করেছে, ঠিক সে সময় সুবেদার শামসুল হকের মর্টার তাদের লক্ষ্য করে গোলা ছুঁড়তে থাকে এবং সঙ্গে সঙ্গে লে. হারুনও তার সৈন্যদের দিয়ে আক্রমণ চালায়। পাক বাহিনী এ আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে তাদের সমস্ত সরঞ্জাম ফেলে সেখান থেকে পলায়ন করে এবং সে সঙ্গে সিলেট-চট্টগ্রাম রেলওয়ে লাইন তাদের জন্য চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। এ সংঘর্ষে পাকবাহিনীর দশজন লোক নিহত হয়।
কিছুদিন পর পাকবাহিনী আমাদের আজমপুর পজিশনের উপর কামান দিয়ে গোলাবর্ষণ করতে থাকে। তারা বুঝতে পেরেছিল যে আজমপুর থেকে আমাদের অবস্থানটিকে দখল করতে না পারলে সিলেট ঢাকা রেলওয়ে লাইন তারা কখনো খুলতে পারবে না।
২৯ শে মে কিছু কিছু ফাইটিং পেট্রোল তারা আজমপুর পজিশনের পশ্চিম তিতাস নদী বরাবর পাঠায় আমাদের পজিশন বিস্তারিত জানবার জন্য। কিন্তু সর্বক্ষেত্রেই এসব পাক দল আমাদের হাতে পর্যুদস্ত হয়ে