পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/১৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
১১৩

পার্শ্ববর্তী মাগুর, মনোহরপুর ইত্যাদি গ্রাম জ্বালিয়ে দেয় সাথে সাথে কামানোর সাহায্যে গোলা ছুঁড়তে থাকে।

 শালদানদীর শত্রু অবস্থানটির উপর আমাদের চাপ আরো বাড়াতে থাকি। ২৫ শে মে আমাদের আর একটি ছোট দল অতর্কিত হামলা করে পাকসেনাদের ১ জন জেসিও এবং ৫ জন সৈন্যকে নিহত করে। তাদের ২টি মর্টারও ধ্বংস করে দেয়া হয়। ২৭ শে মে শত্রুসেনাদের কুটি থেকে সিএণ্ডবি রাস্তায় শালদা নদীতে আরো সৈন্য আনার চেষ্টা করে। সকাল ৭টায় মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের এ দলটিকে এ্যামবুশ করে। এ্যামবুশ-এর ফলে ১টা জীপ, ১টা ডজ ধ্বংস ও শত্রুদের ৯ জন লোক নিহত হয়। শত্রুরা সামনে অগ্রসর হতে না পেরে পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য হয়।

 ২৮ শে মে সকাল ৬টায় কুমিল্লার দক্ষিণে রাজারমার দীঘির শত্রুদের ১টা বাংকার আমাদের ২জন সৈনিক গোপনে গিয়ে গ্রেনেড ছুঁড়ে ৪ জন লোককে নিহত করে এবং তাদের রাইফেলগুলি দখল করে নিয়ে আসে। ঐ দিন সকাল ৯টায় লাকসাম-কুমিল্লা রেল লাইনের উপর আলীশ্বরের নিকট মাইন পুঁতে ১টা রেলওয়ে ইঞ্জিণ ও ২টি বগি লাইনচ্যুত করে। ২৬শে মে জগন্নাথদিঘী শত্রু অবস্থানের উপর লে. ইমামুজ্জামানের প্লাটুন রাত ১১টার সময় অকস্মাৎ আক্রমণ চালায়। এ আক্রমণে ১টি প্লাটুন ২টি তিন ইঞ্চি মর্টার ২টি মিডিয়াম মেশিনগান ব্যবহার করে। আক্রমণের ফলে শত্রুদের ১৯ জন লোক হতাহত হয়। আমাদের ১টি পেট্রোল পার্টি ২৬শে মে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-কুমিল্লা রোডের উপর উজানিরশা সেতুর নিকট পাকবাহিনীর পাহারারত সৈনিকদের ক্যাম্প আক্রমণের জন্য পাঠান হয়। আমাদের দলটির সঙ্গে কমাণ্ডো শিক্ষাপ্রাপ্ত কিছু লোকও ছিল। কুমিল্লা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া এ দুই জায়গাতেই পাকবাহিনীর শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়া রাস্তা তাদের গতিবিধির জন্য বিশেষ জরুরী ছিল। উজানিরশা ব্রিজকে ধ্বংস করে পাকসেনাদের গতিবিধিকে ব্যহত করা ছিল আমাদের লক্ষ্য। আমার দলটি রাত ১১টায় উজানিরশা ব্রিজটি অকস্মাৎ হামলা করে এবং সফলতার সাথে বিস্ফোরক লাগিয়ে ১টা স্প্যান ধ্বংস করে দেয়। এ অকস্মাৎ হামলায় শত্রুদের ১৩ জন নিহত এবং ৬ জন আহত হয়।

 ক্যাপ্টেন গাফফারের নেতৃত্বে ৪র্থ বেঙ্গলের সি কোম্পানী ২৯ শে মে শালদানদীর পিছনে পশ্চিম শিবপুর, বাজার ও সাগরতলাতে শত্রুদের অবস্থানের পিছনে সকাল ৪টায় মেশিনগান এবং ৭৫ এম এমআর আরসহ ঢুকে পড়ে। শত্রুরা তাদের পিছনে হঠাৎ মুক্তিবাহীর অনুপ্রবেশে বেশ হকচকিয়ে যায়। সকাল ৫টা পর্যন্ত আমাদের দলটি শত্রুঅবস্থানের উপর তীব্র আক্রমণ চালায়। এ আক্রমণে শত্রুদের বেশ কয়েকটা বাঙ্কার ধ্বংস হয়ে যায় বেলুচের মেজর দুররানিও নিহত হয়।

 ৩১ শে মে আমাদের ১টা পেট্রোল পার্টি কুটির নিকট শত্রুসেনাদের অবস্থান সম্বন্ধে তথ্যানুসন্ধানে যায়। কুটির নিকটে তারা দেখতে পায় যে পাকসেনাদের ১টি জীপ ৬জন সৈনিকসহ কুটি গ্রামে প্রবেশ করছে। জীপটি গ্রামের পাশে এসে দাঁড়ায়। তাদের মধ্যে থেকে ৬ জন পাকসেনা জীপ থেকে বের হয়ে গ্রামের ভিতরে যায়। আমাদের ছোট দলটি বোমা ছুঁড়ে ড্রাইভারসহ জীপটি ধ্বংস করে।

 ৩১ শে মে-তেই আমাদের ৬ জন সৈন্যের একটি দল সুবেদার আবদুল হক ভূঁইয়ার নেতৃত্বে শালদানদী রেলওয়ে স্টেশনের নিকট অনুপ্রবেশ করে। তারা যখন তথ্যানুসন্ধান করছিল, সে সময় পাক সেনাদের দুইজন ও-পি যারা গাছের উপর বসে দূরবীণ লাগিয়ে আমাদের অবস্থান খুঁজছিল, তাদের দেখে ফেলে এবং গুলি করে মেরে ফেলে।

 ৪র্থ বেঙ্গল-এর আলফা কোম্পানী মেজর সালেকের নেতৃত্বে এবং চার্লি কোম্পানী ক্রাপ্টেন গাফফারের নেতৃত্বে শালাদানদী এবং মন্দভাগে পাকসেনাদের উপর বার বার আঘাত হেনে যাচ্ছিল। শত্রুরা প্রতিদিন কিছু না কিছু হতাহত হচ্ছিল। আমাদের এই দুই কোম্পানীর সেনা দল ৩ইঞ্চি মর্টারের সহায়তায় শিবপুর, বাগরা,